|
সি পাই পোও স্মৃতি জাদুঘরের সামনে লেখক
স্বাধীনতা কে না চায় আর স্বাধীনতার জন্য কার মন না টানে ? ধনী হোক আর দরিদ্র হোক সবাই চায় নিজের মত করে থাকতে । পরাধীনতার অফুরন্ত সম্পদের নিবাসও কারো কাম্য নয় । এটাইতো পৃথিবীর শ্বাশ্বত নিয়ম । আর এ ভাবেই চলে আসছে অনন্তকালের এ জীবন ধারা । এরই রেশ ধরে মুক্তিকামী মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে আত্মত্যাগের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অন্ধকারের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছে দৃপ্ত করোজ্জ্বল দিনমনিকে । আমরা বাংলাদেশীরাও শ' শ' বছরের পরাধীনতার গ্লানির মূল উপরে ফেলে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়েছিলাম সেই ১৯৭১ সালে । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর কথা আজও বুকের ভেতর ঝড় তোলে । দৃপ্ত অংগীকারে গাড় করে তোলে সবল পায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আপোষহীন অদম্য ইচ্ছাকে প্রতিদিন প্রবাস জীবনে । এ কারনেই হয়তো ছুটে যেতে ইচ্ছে করে সেখানে, যেখানে জড়িয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস; সংগ্রামী মানুষের স্বাধীনতার ইতিহাস; ত্যাগ তিতিক্ষা আর আগামী প্রজন্মের জন্য জীবন উত্সর্গের মহিমান্বিত ইতিহাস ।সি পাই পোততে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিতির সদস্যবৃন্দ
সামনের সারিতে মাছখানে চেয়ারম্যান মাও চে তুং
পেইচিংয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করার সুবাদে কখনো সখনো কেউ পেইচিংয়ে চীনের আমন্ত্রণে আসলেও অতিরিক্ত দু'একটা দিন থেকে ঘুরে ফিরে ঐতিহাসিক স্হানসমূহ দেখে যাবার ইচ্ছায় অনেক সময় বন্ধু বা ঘনিষ্ঠজনেরা উঠে পড়েন আমার এখানেই। ভালোই লাগে । প্রবাসে একাকী জীবনে এমন সাহচার্য উপভোগ্যও বটে । চীনের কেন্দ্রীয় ফটোগ্রাফিক এসোসিয়েসনের আমন্ত্রণে 'চে জিয়াং প্রদেশের হাংচৌ-এর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের শহর লি সুই'তে আয়োজিত দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য এসেছিলেন বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ এবং চট্টগ্রামের বিখ্যাত আলোকচিত্র ও চারুশিল্পী মইনুল আলম । উল্লেখ্য যে, ২০০৪ সালে আমিও উক্ত প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত হয়ে চীনের অনেক দর্শনীয় স্হান ঘুরে দেখে গিয়েছিলাম । সেবারেরও প্রদর্শনীটি লি সুই'তেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল । সে সময় লি সুই থেকে প্রায় তিন শ' কিলোমিটার দূরের সুং ইয়াং নামের একটি পাহাড় ঘেরা গ্রাম, গ্রামের মানুষ ও তাদের জীবন যাত্রাও দেখেছিলাম খুব কাছে থেকে । দেখেছিলাম ছোট্ট পাহাড়ী ঝরণায় বয়ে চলা কাঁচের মত স্বচ্ছ পানির ধারা । গ্রামের কৃষক, সবুজে ছাওয়া ফসলের ক্ষেত, ঘরে ঘরে মাশরুম চাষ আর কী ভাবে চাষ করা হয় তার পদ্ধতি । খুবই মজার ছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের বাড়িতে চীনের গ্রামীন মানুষের রান্না করা গ্রামীণ বৈশিষ্টময় খাবার । আমরা সবাই তৃপ্তির সংগেই খেয়েছিলাম । বলতে গেলে সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা । এখনো সে কথা প্রায়শ:ই মনে পড়ে ।
কাজের অবসরে চেয়ারম্যান মাও চে তুং
সে কথা থাক; এবারে লি সুই থেকে এসে তারা কয়েক দিনের জন্য উঠেছিলেন আমার এখানেই । উদ্দেশ্য ঐতিহাসিক স্হানের আলোকচিত্র তোলা । ঠিক হলো পরবর্তি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাহলে যাওয়া যাবে চীনের প্রথম মুক্তাঞ্চল হেফেই প্রদেশের রাজধানী শিচিয়াচুয়াং–এ । শনিবার দুপুরে পেইচিং থেকে রওয়ানা দিয়ে শিচিয়াচুয়াংয়ে রাত্রি যাপন শেষে পরের দিন খুব ভোরে শি বাই পোও যাবো । শিচিয়াচুয়াং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক স্হান শি বাই পুও : যেখান থেকে মহান নেতা কমরেড মাও সে তুং চীনের স্বাধীনতার লাল পতাকা প্রথম উড়িয়ে ছিলেন । এখানেই ছিল সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির সর্বশেষ ঘাটি । এখানে এই দূর্গম সর্পিল পথের মত উঁচু নিচু অসংখ্য ঘন অরণ্যাবৃত লাল মাটি ও পাথুরে পাহাড় আর পাহাড়ের আঁকা বাঁকা নদী ঘেরা অঞ্চলে সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির পদস্হ কর্মকর্তারা ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত প্রস্তুতিকালিন সময় হিসেবে দশ মাস অবস্হান করেছিলেন । কুওমিংটাং ও জাপানী সেনারা এর ধারে কাছেও আসতে পারে নি কোন দিন ।
সি চিয়া চুয়াং-এর আধুনিক মিলনায়তন
১৯৪৮ সালের ২৬ মে কমরেড মাও এখানে এসেছিলেন উত্তরাঞ্চলীয় শাংশি প্রদেশ থেকে । এই শি বাই পুও'তেই ১৯৪৯ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সপ্তম সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন । এ অধিবেশনেই মাও সে তুং সবার জন্য প্রযোজ্য অবশ্য করণীয় দু'টি নীতি বাক্য বলেছিলেন । আর তা হলো কম্যুনিস্ট পার্টির ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পার্টির ঐতিহ্য অনুযায়ী সকল সদস্যকে তাদের কাজে ও কর্মে অবশ্যই বিনয়ী, বিচক্ষণ থাকতে হবে এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও হঠকারী আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে । তাদেরকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম ও সাধা সিধে জীবন যাপন করতে হবে । আর এ দু'টি নীতি বাক্যকেই শি বাই পুও'র শক্তি বলে মনে করা হয় । যুদ্ধে বিজয়ের পর শি বাই পুও থেকে পেইচিং যাবার সময় মাও সে তুং এও বলেছিলেন যে, আমরা রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করছি একটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে । পার্টি কখনোই কোন সদস্যের ঔদ্ধত্য, হঠকারী ও খামখেয়ালীপূর্ণ আচরণকে ক্ষমা করবে না । সবাইকে মনে রাখতে হবে , ১৬০৬ থেকে ১৬৪৫ সালের মধ্যে একবার বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর নেতা লি ঝিচাং (Li Zicheng) কৃষকদের নিয়ে মিং ডাইন্যাস্টির সম্রাটকে পরাভূত করার পর মাত্র ৪২ দিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন ।
সি পাই পোওতে সহীত সৈনিকদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ
( চলবে ) --আ বা ম ছালাউদ্দিন
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |