|
১১তম এশীয় সাংস্কৃতিক উত্সবে বাংলাদেশের শিল্পীদের দলীয় নৃত্য
এ ক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয় যে, চীন এবার নিয়ে ১১বার এশিয় সাংস্কৃতিক উত্সবের আয়োজন করেছে । লক্ষণীয় যে, চীন সরকার তার জনগণের কল্যাণের প্রতি এতটাই নিবেদিত যে এ ধরনের আয়োজন প্রতিবারই বড় বড় শহরে বা জৌলুসপূর্ণ নগরে না করে বেছে নিয়েছে অগ্রগতির দিকে ধাবিত শহরকেই । এ উত্সব একবার দেশটির দক্ষিণে তো আরেকবার উত্তরাংশে । এটাও কিন্তু একটি লক্ষণীয় বিষয় । এর মধ্য দিয়ে চীন শুধুবিদেশ নয়, নিজের দেশের দরিদ্র ও আপামর সাধারণ মানুষের স্বার্থের দিকটিকেই মনে হয়েছে সর্বাগ্রে বিচার করে থাকে । এ অনুস্ঠানটি হয়তো অন্তর্মঙ্গোলিয়ার রাজধানী হোহহটে হতে পারতো । তবে কেন এ শহরে হলো ? এ প্রশ্নটি আমার মনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে । এশিয়ার অন্য কোন দেশে হলে এটা হয়তো খুবই কষ্টসাধ্য হতো । কারন মাত্র ৪/৫ বছর হলো এ শহরটি নতুনভাবে গড়ে উঠতে শুরু করেছে ।
অন্তঃমঙ্গোলিয়ার ওর্ডোসে গড়ে ওঠা শহরের একাংশ
বিস্তীর্ণ তৃণভূমির মাঝে এ ধরনের গড়ে ওঠা নতুন শহরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি বড় ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন সত্যিকার অর্থেই বলতে গেলে একটি সাহসী পদক্ষেপ । এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে যে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা একটি শহরের থাকা দরকার তার সব কিছুই নতুনভাবে গড়ে তুলতে হয়েছে । এ কাজটি খুবই কঠিন এবং বিশাল ব্যয় বহুল ব্যাপারও বটে । তার চেয়েও বড় কথা হলো নিখুঁত পরিকল্পনা ও তার সুষ্ঠু
বাস্তবায়ন । একই সংগে মেধা ও শ্রম শক্তির কঠিন ব্যবহার । চীনকে যে ভাবে দেখেছি তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে অফুরন্ত মেধা শক্তি আর কর্মময় সবল পেশির একটি জাতি হচ্ছে এই চীন । এরা ক্লান্তিহীন রোবটের মত একটানা কাজ করতে পারে । খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণের পর আমার কাছে মনে হয়েছে তাদের কাছে দু:সাধ্য বলে যেন কিছু নেই । আরো মনে হয়েছে, অন্তর্মঙ্গোলিয়ার একটি ছোট্ট শহর ওর্দোসে এবারের
উত্সবের মধ্য দিয়ে চীন সরকার তার গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপই হিসেব নিকেশ করে নিয়ে যেন সারা চীনকে সুশৃঙ্খল পরিকল্পিত নগরীতে পরিনত করে তোলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । একটি শহর বা নগর নতুন করে সব ধরনের উপকরণ নিয়ে গড়ে ওঠা মানেই সে সব শহরের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মানের অগ্রগতি হওয়া । এ যেন সকল দিক থেকে একালের আধুনিকতার সংষ্পর্ষে এসে নিজেদের আরো বেশি সভ্য ও শালীন করে তোলা ।
ওর্ডোসের জাতীয় পাঠাগার
ওর্দোসের প্রতিটি আলোকজ্জ্বল সড়ক, বিশেষ করে শহর ছাড়িয়ে একটু দূরের এলাকার চৌরাস্তার মাঝখানে সোলার সিষ্টেম চালিত ট্রাফিক বাতির লাল, নীল আর হলুদ আলো আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে । এ ট্রাফিক বাতিটি মাত্র ৪ ফুটের মত উঁচু এবং এর মধ্যেই রয়েছে সোলার সিষ্টেমের সব যন্ত্রপাতি । প্রয়োজনে বিদ্যুতকে কী ভাবে কাজে লাগাতে হয় এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ । এ ছাড়া কারুকার্যময় স্হাপত্যের
নিদর্শন যাদুঘর, বিভিন্ন বিশাল আকৃতির গ্যালারী ভবন যেখানে বিভান্ন ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, অনুষ্ঠান পরিবেশনার উন্মুক্ত মঞ্চ যেখানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি দর্শক একসাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে । মঞ্চের পেছনের পরিবর্তন যোগ্য চলমান কার্টেন, এর উপরে কয়েকজন শিল্পী বসে বা দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে পারে, পেছনের চলমান দীর্ঘ স্ক্রিন যার উপর বিভিন্ন দৃশ্য
নাদাম উত্সবের একটি দৃশ্য
প্রজেকশন করা যায়, মঞ্চের মাঝখানে রয়েছে গোলাকৃতির একটি মঞ্চ । এ মঞ্চটি শিল্পীদের নিয়ে ধীরে ধীরে পদ্ম ফুলের মত শুন্যে ভেসে উঠতে পারে। কত দ্রুত সেট্ পরিবর্তন করা যায় তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । এ শহরের আবাসিক গৃহগুলো দেখে ইউরোপের অনেক শহরের চেয়ে আধূনিক এবং দৃষ্টি নন্দন মনে হয়েছে । তৃণভূমির খোলা আকাশের নিচে শহরটিকে যেন একটি রঙিন প্রজাপতির ভেসে বেড়ানোর মত মনে হয় ।
এ ধরনের একটি শহর ও তার মানুষের কথা দু চার কথায় শেষ আরা যায় না । বিশাল পরিসর প্রয়োজন । এখানকার আদিবাসী ও হানদের সম্প্রীতি ও সব মানুষের প্রতি যে আন্তরিকতা তার একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে এ লেখার সমাপ্তি টানবো । দেখতে দেখতে কেমন করে যে চারটি দিন পার হয়ে গেছে টের ই পাই নি । আমরা শেষ দিন রাতের খাবার খাবো না বলে বিকেলেই বেড়িয়ে পড়লাম ক্যামেরা কাধে নিয়ে । উদ্দেশ্য হেঁটে হেঁটে একটু
ঘুড়ে দেখা । সি আর আইর মিস লি শিয়াও পিং, মিস চাং ইয়া পিং ও আমার সহকর্মী ওয়াং তান হোং রুবি একসাথে । হাটতে হাটতে আমরা চলে যাই মঙ্গোলিয়ার ভেড়ার লোম দিয়ে তৈরী গরম কাপড়ের বহু দোকান রয়েছে এমন একটি এলাকায় । সেখানে দেখতে পাই আধূনিক সব দোকানে বিক্রির পাশাপাশি উন্মুক্ত ফুটপাতে অনেক শিশু খেলছে । কয়েকটি শিশু তিন চারটি চেয়ার নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলছে । কেউবা ছোঁয়া ছুঁয়ি খেলছে ।
সেখানে যেতেই সব শিশুরা আমাকে ঘীরে ধরে শুশু বলে খেলতে ডাকে । আমি একজন বিদেশী তারপরও তাদের এ আন্তরিক আহ্বান আমাকে বিমোহিত করে তোলে । তাদের সঙ্গে প্রায় ঘন্টা দেড়েক খেলেছি , হৈ চৈ করেছি । কারো ভাষা কেউ বুঝি না তারপরও যে কত আপন ? ছবি তুলেছি, ছুটো ছুটি খেলেছি । কখোনো তাদের মা বাবাও খেলায় যোগ দিয়েছে । যা সত্যিই ধর্ম বর্ণ নির্বশেষে মানুষের প্রতি চীনা মানুষেদের আদি অকৃত্তিম
১১তম এশীয় সাংস্কৃতিক উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আকাশ উজ্জ্বল করে তোলা পটকাবাজির দৃশ্য
ভালোবাসার প্রকাশ । একদিন এ নব শিশুরা বড় হবে আর সারা বিশ্বের মানুষ ও মানবতার প্রতি তাদের শুভেচ্ছার সোনালী দৃষ্টি ভঙ্গীর প্রকাশ ঘটবে । অহিংসা নয়, শান্তি, সাম্য, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর সম্প্রীতির বন্ধনকে সঙ্গী করে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে চীন । (শেষ)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |