Web bengali.cri.cn   
চীনে ১১তম এশীয় সাংস্কৃতিক উত্সব : আমার দেখা অন্তর্মঙ্গোলীয়ার ওর্দোস(৩)
  2009-11-12 17:44:14  cri

ওর্দোসের আধুনিক থিয়েটার

এ শহরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চীনের এবারের ১১তম এশিয় সাংষ্কৃতিক উত্সব । উত্সব উপলক্ষে এখানে গড়ে উঠেছে উত্সব সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্হাপনা । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশাল এলাকা জুড়ে বিরাট আকৃতির 'কালচার এন্ড আর্টস সেন্টার' । আধুনিক মিলনায়তনসহ মূল ভবনের সংগে রয়েছে প্রদর্শনীর জন্য তিনটি ব্লক । সর্বাধুনিক উপকরণসহ প্রতিটি প্রদর্শনী কেন্দ্রেই ৩‌‌‌‌×৪ ফুট সাইজের পাঁচ/ছয় শরও বেশি পেইন্টিং প্রদর্শন করা যাবে । এবারের উত্সবে এ প্রদর্শনী কেন্দ্রের 'এ'ব্লকে প্রদর্শিত হয়েছে ৮টি দেশসহ চীনের চারুশিল্পীদের দু'শরও বেশি চিত্রকলার এক প্রদর্শনী । দ্বিতীয় ব্লকে ছিল বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের পাঁচ শরও বেশি আলোকচিত্রের প্রদর্শনী । এ ছাড়া তৃতীয় ব্লকে ছিল প্রযুক্তি শিল্পের প্রদর্শনী । এ ছাড়াও ওর্দোসে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন স্হাপত্যের অতি আধুনিক থিয়েটার হল ও জাদুঘর । যেটি দেখে আরো মুগ্ধ হয়েছি তা হলো চীনের ৫৬টি জাতির সংষ্কৃতি জাদুঘর । জাদুঘরের ডিজাইনে প্রযুক্তির সমন্বয়ও দেখার মত । এখানে রয়েছে প্রতিটি জাতির ঘরকণ্যা, কর্ম, বিয়েসহ জীবনাচার, রীতি নীতি ও নিজস্ব সংষ্কৃতির প্রদর্শনী । পাশা পাশি এখানে প্রতিটি জাতির সংগীত শিল্পীরা তাদের নিজস্ব সংগীত ও নৃত্যের বৈশিষ্টময় ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান পরিবেশন করছে । হস্তশিল্পীরা তাদের চোখ জুড়ানো সব পণ্য তৈরী করছে । অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুজ । কারো কারো বয়স আশি বা নব্বই বছরের কাছা কাছি হবে বলে মনে হয় । তারপরও প্রদর্শনী কেন্দ্রে তাদের শিল্প সৃষ্টির লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মুগ্ধতার পাশাপাশি নিপুণ শিল্পকর্ম সত্যিই আমাকে অবাক করেছে । ওর্দোসের খাংবাসানে রয়েছে চেঙ্গিস খান স্কোয়ার । এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ছুটন্ত ঘোড়ায় চেঙ্গিস খান ও তার পিতা মাতাসহ সুউচ্চ বেশ কিছু ভাষ্কর্য । এর মধ্যে চেঙ্গিস খানের শক্তির প্রতীক দুপায়ে দাঁড়ানো আকাশ ছোঁয়া মুখোমুখি দুটি ঘোড়ার ভাষ্কর্য । রয়েছে চেঙ্গিস খানের মন্ত্রীবর্গ ও তাঁর যোদ্ধাদের ভাষ্কর্য । প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা এখানে মানুষের ভীড় জমেই থাকে ।

রং বেরংয়ের ঐতিহ্যিক বাহারী পোশাকের মঙ্গোলীয় নারী

ওর্দোসের চেঙ্গিস খান পর্যটন জেলার তৃণভূমির মাঝে রয়েছে চেঙ্গিস খান মুসৌলিয়াম । মঙ্গোলিয়ান ভাষায় চেঙ্গিস খানের অর্থ হলো আধ্যাত্মিকতা সম্পন্ন শক্তিশালী রাজা । ১২৭১ থেকে ১৩৬৮ পর্যন্ত সময়কালে ইউয়ান ডাইনাষ্টিকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল অসামান্য । মঙ্গোলিয়ার এই বীর বৃক্ষহীন বিস্তির্ণ তৃণভূমির বিশৃঙ্খল লোকজনকে আলোকিত সভ্যতার পথে নিয়ে এসেছিলেন । এমনকি তিনি চীনের একীকরণ ও চীনের জনগণের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন তার তুলনাহীন কর্মের ভেতর দিয়ে ।

মহান বীর চেঙ্গিস খানের মূল মুসৌলিয়াম

চেঙ্গিস খানের মুসৌলিয়ামটি ১৯৫৪ সালে নির্মান করা হয় । যদিও কোথায় তার দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে । চেঙ্গিস খানের মুসৌলিয়ামের মূল ভবন তিন ভাগে বিভক্ত । যাযাবর মঙ্গোলীয়দের বাড়ির আকৃতিতে এটি তৈরী করা হয়েছে । মাঝখানে রয়েছে মূল ভবন । এখানে চেঙ্গিস খানের ৪ মিটার ( প্রায় ১৩ ফুট ) উঁচু স্বেত পাথরের ভাষ্কর্য রয়েছে । দেখলে মনে হয় যেন শস্রুমন্ডিত চেঙ্গিস খান ধ্যানে আত্মনিমগ্ন রয়েছেন । ভাষ্কর্যের পাশেই রয়েছে ইউয়ান ডাইন্যাষ্টির সময়কার বিশাল এলাকার একটি মানচিত্র । পাশি রয়েছে তার সাতটি গৃহ ।

যাযাবর মঙ্গোলীয়দের ভ্রামমান আবাসগৃহ

এ সব ঘরে তার ব্যবহৃত আসবাব পত্র নিখুঁত অবস্হায় রয়েছে । মূল হলের পূর্ব পাশের হলে রয়েছে চেঙ্গিস খানের স্ত্রীদের মধ্যে একজন এবং তার চতুর্থ ছেলের সমাহিত করার কফিন । পশ্চিম পাশের হলে রয়েছে চেঙ্গিস খানের ব্যবহৃত সমরাস্ত্র ও জিনিস পত্র । এ ছাড়াও এখানে রয়েছে তার কর্ম ও ব্যক্তি জীবনের ইতিহাস । তার মতই প্রচন্ড প্রতাপশালী, দাপুটে এবং জনহিতকারী শাসক নাতি কুবলাই খানের প্রতিকৃতি ও তার সম্পর্কিত তথ্যাবলি । মূল ভবনের পেছনেই রয়েছে মখমলের কাপড়ে আবৃত চেঙ্গিস খান ও তার তিনজন স্ত্রীর শবাধার বাহী যান । আরো রয়েছে দু ভাইয়ের কফিন বাক্স । মুসৌলিয়ামের প্রধানের কাছ থেকে জানা গেছে , চেঙ্গিস খানের মূল প্রতিকৃতির সামনে জ্বালানো বাতিটি একটানা অনির্বান জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে । বাতিটি ৭০০ বছর ধরে জ্বলেই চলেছে বলে জানালেন মুসৌলিয়ামের তত্বাবধায়ক ।ওর্দোসের প্রতিটি ঘরে ঘরে এবং প্রতিটি দোকান ও ব্যবসা কেন্দ্রে দেখেছি চেঙ্গিস খানের প্রতিকৃতির সামনে জ্বলছে উজ্জ্বল বাতি ও রয়েছে ফুল ও ফলের নির্ভেজাল শ্রদ্ধার্ঘ ।

বিজয় গৌরবের দীপ্ত চেঙ্গিস খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা

চেঙ্গিস খানের মুসৌলিয়ামের পাশেই রয়েছে মানব সৃষ্ট বিশাল একটি বন । এখানে চড়ে বেড়াচ্ছে অগুনতি মোটা তাজা আকারের ভেড়া ও শীত প্রধান দেশের লম্বা লোম ওয়ালা ছাগল । ছাগলগুলো আমাদের দেশের রাম ছাগলের চেয়েও বড় । শিংগুলো এতবড় যে, তা দেখার মতই । ঘুর ঘুর করে ঘুরে বেড়ানো ভেড়া ও ছাগলগুলো পর্যটকদের কাছ থেকে খাবার পাবার আশায় কাছাকাছি চলে আসে । অনেক পর্যটকই দেখলাম ওদের খাবার দিচ্ছে । আমার হাতে খাবার না থাকায় তাকে আদর করতে গেলে আঙ্গুলেই কামড় দিয়ে বসে । এ এক অদ্ভুত ভালোলাগা । ইতিহাসে পড়েছি চেঙ্গিস খানের কথা । আর আজ আমি তাঁর দেশের মাটিতে । তাঁর প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে । মনে হচ্ছে আমি চেঙ্গিস খানের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি । চলচ্চিত্রের ছবির মতই তাঁর রাজত্ব, তাঁর ঘোড়ার পিঠে চরে জনসেবা, অসংখ্য যোদ্ধার ঢাল তলোয়ারের ঝন ঝনানি, কামানের শব্দ, ঘোড়ার হ্রেষা ধ্বনি, মঙ্গোলিয় নারীর অলঙ্কারের রিনি ঝিনি ও চোখ ধাধানো রং বেরংয়ের বাহারী পোষাক, ঘাসের কার্পেটে ভেড়ার পালের পাশেই শিশুদের আনন্দময় কলধ্বনি, দূরের পথ পাড়ি দেয়া ধীর পায়ে চলা উটের পদধ্বনি সব কিছুই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠেছে । আমি যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম সময়ের জোন পার হয়ে সেকালের অতীতে । (চলবে)

---আ বা ম ছালাউদ্দিন

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040