|
চীন ও বাংলাদেশের শান্তি, সম্প্রীতি ও মৈত্রীর সেতু বন্ধন আগামী প্রজন্মের এ ছোট্ট চীনা শিশুটি
সেই ১৯৮৬ সালের কথা । সে বছর মঙ্গোলিয়ার একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে । আমার দায়িত্ব পরে তাদের দেখাশুনা ও অনুষ্ঠানের কর্মসূচীর সার্বিক প্রচারের । নৃত্য সংগীত ও যাদুর সমন্বয়ে শিল্পীদলটি দারুণ এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছিল। যা আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছিল । তাদের দেয়া কিছু ভিউ কার্ড আমাকে আকৃষ্ট করে তৃণভূমি, ভেড়া আর ঘোড়ার পালের বিচরণের দৃশ্য । সেই সংগে তৃণভূমির মন্দিরের মত গোলাকার বাড়িগুলো । বিশেষ করে মঙ্গোলিয় শিল্পীদের আন্তরিক ব্যবহারসহ সব কিছু মিলিয়ে আমার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে । তখন থেকেই ভাবছিলাম একবার হলেও সেখানে যাবো । বাংলাদেশ সাংষ্কৃতিক দলের ম্যানেজার হিসেবে অনেক দেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি । সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম কবে মঙ্গোলিয় যেতে পারবো তার জন্যে । চীনে আসার পর এ স্বপ্নটি আরো যেন চেপে বসে ।
সম্মেলন কক্ষে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রী ছাই উ, বাংলাদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, পিছনে বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমি ও আর্কাইভসের মহাপরিচালক
হঠাত্ করে একদিন আমার মূল কর্মস্হল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক আমাকে ফোন করে জানালেন আগামী মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল অন্তর্মঙ্গোলিয়ার ওর্দোস শহরে আসন্ন ১১তম এশিয় সাংস্কৃতিক উত্সবে যোগ দিতে যাচ্ছে । সে সময় সেখানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের একটি গোল টেবিল সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে । সেখানে আমাদের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আবুল কালাম আজাদ, যার সংগে আমার সম্পর্ক বেশ ভাল, তিনি এবং শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক খ্যতিমান প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানীসহ আরো দু'জন মহাপরিচালকও আসছেন । আমার মনে হলো আমার স্বপ্নের শহর অন্তমর্ঙ্গোলিয়া দেখার এটাই সুবর্ণ সুযোগ । সংগে সংগে আমি আমার বিভাগের পরিচালককে বিষয়টি জানাই এবং সেখানে ঐকান্তিক আগ্রহের কথা প্রকাশ করি । সৌভাগ্যই বলতে হবে যে, শেষ পর্যন্ত আমি কাঙ্খিত সুযোগটি পেয়ে গেলাম ।
সম্মেলন কক্ষের সামনে লেখক আ বা ম ছালাউদ্দিন, সিআরআই বার্তা বিভাগের লি সিয়াও পিং এবং বাংলা বিভাগের ওয়াং তান হোং
বিস্তির্ণ তৃণভূমির দেশ অন্তর্মঙ্গোলিয়া আকাশ আর মাটিতে যেখানে কানা কানি করে । যেখানে বাতাসেরা খেলা করে উন্মুক্ত প্রান্তরের ঘাসের ডগায় আলতো দোল দিয়ে । প্রকৃতির শান্ত ও সৌম পরিবেশে রাতের আঁধারে জোনাকীর পাশা পাশি অগুনতি তারার মিটি মিটি জ্বলা নরম নরম মিষ্টি আলো চোখ আর মনকে যেন পরিমল শান্তিতে ভরে দেয় । মঙ্গোলিয়দের আধ্যাত্মিক মহান নেতা ও শাসক চেঙ্গিস খানের এই অঞ্চলে প্রতিটি মানুষের হৃদয় জুড়ে রয়েছে যেন কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি মমতা, আন্তরিকতা আর ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ পরষ্পরের প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা ও অকৃত্তিম ব্ন্ধুত্বের মহিমা ।
অন্তর্মঙ্গোলীয় শিল্পীদের উদ্বোধনী নৃত্য
এমন একটি শহরে আয়োজিত এবারের ১১তম এশিয় সাংস্কৃতিক উত্সবে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান কাভার করার জন্য আমার দলের প্রধান লি শিয়াও পিং ও আমার বিভাগের সহকর্মী ওয়াং তান হোং, মঙ্গোলিয় বিভাগের ওর্ত নাসান এবং ভিয়েতনাম বিভাগের চাং ইয়া পিং ১৭ আগষ্ট বিকেলে চায়না এয়ার লাইন্সের বিমানে রওয়ানা দিয়ে সব মিলিয়ে প্রায় দু'ঘন্টার বিমান যাত্রা শেষে রাতে ওর্দোস বিমান বন্দরে পৌঁছুই । ছিম ছাম নিরেট পরিচ্ছন্ন বিমান বন্দরে নেমেই মনে হয়েছে যেন আধুনিকতার ছোঁয়া এখানে একে সুন্দর করে তুলতে শুরু করেছে । বিমান বন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত যেতে মহাসড়কের দু'পাশে অন্ধকারের চাদরে ছেঁয়ে থাকা মালভূমির দিকে তাকিয়ে আমি আনন্দে উত্ফুল্ল হয়ে উঠেছিলাম । প্রকৃতি যে কত সুন্দর তা এই অবারিত প্রান্তর জুড়ে থাকা অন্ধকারের সংগী না হলে অনুভব করা যাবে না । মালভূমির প্রায় এক ঘন্টার পথ পারি দিয়ে ওর্দোসে আগত সকল দেশি বিদেশী সংবাদ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত শিন নিউ হোটেলে পৌঁছুলে স্হানীয় কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সংগে আমাদের অভ্যর্থনা জানায় । তাদের সহযোগিতার কথা সত্যিই মনে রাখার মত । ( চলবে )
-আ বা ম ছালাউদ্দিন
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |