Web bengali.cri.cn   
হাইনান প্রদেশের বো আও
  2009-10-20 16:24:47  cri
    চীনের হাইনান প্রদেশের ছিয়োংহাই শহরের বো আও নগর 'এশীয় ফোরাম'-এর স্থায়ী কার্যালয় স্থান হিসেবে সারা বিশ্বে নামকরা হয়েছে। বো আও হাইনান ওয়ানছুয়ান নদী এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মোহনায় অবস্থিত এবং বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত সমুদ্রে নদনদীর প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। এখানে পাহাড়, নদী, হ্রদ, সমুদ্র, দ্বীপ এবং বন, বালুকা বেলা, উষ্ণ-প্রস্রবণ, আশ্চর্য পাথর ও বাগানের সুন্দর দৃশ্য ছাড়াও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুন্দর সমুদ্রসৈকত রয়েছে। মাত্র ১০ হাজার লোকসংখ্যার বসবাসকারী এ উপকূলীয় শহরে আর কি কি ধরনের অদ্ভূত আকর্ষণশক্তি আছে? আজ আমি তা আপনাদেরকে নিয়ে দেখতে যাবো।

    বো আও-এ আসলে সবার দৃষ্টি অবশ্যই প্রথমে এশীয় ফোরামের সম্মেলন কেন্দ্রের ওপর পড়বে। দূর থেকে সম্মেলন কেন্দ্রটি একটি বিরাট ও সাদা খোলা ঝিনুকের মত। এর আধুনিক উপকূলীয় শহরের আমেজ খুব বেশি। প্রথম শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ছাড়াও বো আও এশীয় ফোরামের প্রতিপাদ্য হিসেবে বেশ কিছু নিরিবিলি পরিবেশ এবং ভিন্ন স্টাইলের হোটেল, ভিলা ছুটি কাটানো গ্রাম এবং বিনোদন সাজ-সরঞ্জামসহ সংশ্লিষ্ট আনুসাংগিক ব্যবস্থাও উন্নত করা হয়েছে। যা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অতিথিদের জন্য সার্বিক অবকাশ ও ছুটি কাটানোর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

    সম্মেলনের রাজধানী ছাড়া 'স্বর্গ নগর' বলে পরিচিত বো আওয়ের আরো সুন্দর দৃশ্য, বৈশিষ্ট্যময় লোক রীতিনীতি, শান্তিপূর্ণ ও অনাড়ম্বর প্রাচীন শৈলী জীবনযাপনের আমেজ বিশ্ববিখ্যাত হয়ে উঠেছে। বো আও'র দক্ষিণ দিক হচ্ছে হাইনানের বিখ্যাত সমুদ্রে ওয়ান ছুয়ান নদীর প্রবেশদ্বার। এখানকার ৮.৫ কিলোমিটারের ইয়ু তাই বালুকাবেলা হচ্ছে পর্যটকদের নিশ্চিত আগমনের স্থান। ইয়ু তাই বালুকাবেলা নদীর পানি এবং সামুদ্রিক পানি দুটো অংশে বিভক্ত করেছে। এখানে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালে দেখা যায়, সমুদ্রের ফেনা পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে উল্লম্ফন করে। তবে পেছন দিকে রয়েছে স্থির নদীর পানি। স্থানীয় পথপ্রদর্শক চাং বলেছেন, ইয়ু তাই বালুকা বেলার একটি গিনিস বুক রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন,

    তা হলো জোয়ারের সময় সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গা মাত্র ১০ মিটার। সুতরাং তা গিনিস বুকের রেকর্ড হিসেবে নির্বাচিত হয়। বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এই জায়গাটিকে সমুদ্রে নদনদীর প্রবেশদ্বারের প্রাকৃতিক পরিবেশ সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত ও সুন্দর জায়গা বলে গণ্য করেন।

    সামনে সমুদ্র এবং পিছনে নদী। বিশ্বাস না হলে আপনি এসে নিজ চোখে তা দেখে যেতে পারেন। সামনের ফেনার নোনতা স্বাদ আছে। তবে পেছনের ফেনা মিঠা। এখানকার বালুকা বেলায় খুবই ঘন নারিকেল বন রয়েছে। এটা হচ্ছে একটি বিরল প্রাকৃতিক নদী।

    স্থানীয় পথপ্রদর্শক বলেছেন, আপনি বো আও-এ আসলে উষ্ণ-প্রস্রবণে গোসল করতে ভুলবেন না। এখানকার অনেক হোটেলে পর্যটকদের উষ্ণ-প্রস্রবণের আরামদায়ক গোসলের সুযোগ দেয়া হয়। তাহলে বো আও'র উষ্ণ-প্রস্রবণের বৈশিষ্ট্য কি? পথপ্রদর্শক চাং বলেন,

    এখানকার উষ্ণ-প্রস্রবণের চিকিত্সার ভূমিকা খুব বিস্ময়কর। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তা বিশ্বে বিরল এবং হাইনানে অদ্বিতীয়। পানির তাপমাত্রা ৭০ থেকে ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। যদিও কোনো কোনো বন্ধু এতে গোসল করার সময় গন্ধকের ঘ্রাণ পছন্দ করেন না। তবে ঠিক এ ঘ্রাণে প্রতিফলিত হয়েছে যে, এখানকার উষ্ণ-প্রস্রবণে গন্ধকসহ বিভিন্ন ধরনের শুক্ষকণার উপাদান আছে। এতে গোসল করার পর চামড়া খুবই মসৃণ ও নরম হয়।

    পথপ্রদর্শক চাং ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বো আও-এ আসলে ইয়ু তাই বালুকাবেলা উপভোগ এবং উষ্ণ-প্রস্রবণে গোসল করা ছাড়াও বো আও'র স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় বসতবাড়ী ও লোক রীতিনীতিও অনুভব করা উচিত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জায়গা হচ্ছে বো আওয়ের নিকটবর্তী নান ছিয়াং গ্রাম। এখানে হাইনানের প্রথম বাড়ি গণ্য করা ছাই পরিবারের প্রাচীনকালের বাড়ি রয়েছে। প্রাচীনকালের এই বসতবাড়ীটি দেখতে নীল ইট, নীল টালি, খুব অনাড়ম্বর প্রাচীন শৈলী, তবে প্রবেশদ্বারে খুব উজ্জ্বল লাল বড় বড় অক্ষরে কবিতার ছত্র লাগানো রয়েছে। খুবই প্রাণবন্ত। পথপ্রদর্শক চাং ব্যাখ্যা করে বলেন,

    ছাই পরিবারের প্রাচীনকালের বাড়ি প্রায় ০.২ হেকটর ভূমি দখল করে। এর নির্মাণের আয়তন ১ হাজার ২শ' বর্গমিটার। ইন্দোনেশিয়ার ধনী লোক ছাই চিয়া সেন বাড়িটি নির্মাণ করেন। এটা দেখতে দুর্গের মতো। বাড়িতে ৮০টিরও বেশি দরজা, শতাধিক জানালা এবং ৫০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে।

    ছাই পরিবারের প্রাচীনকালের বাড়ির খুব সুন্দর গ্রাউণ্ড টালি দেখা যায়। বহু বছর পরও এর রঙ এখনও উজ্জ্বল। এছাড়া সারা বাড়ীর আকার ও চেহারা সবই আগের মতো। দেখলে মনে হবে বো আও ও হাইনানের বসতবাড়ী এমন কি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় স্টাইল সংযুক্ত করেছে। আরামের সঙ্গে সঙ্গে স্থাপত্যটির সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

    বো আও নগরে বছরের সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ সময় অবশ্যই এশীয় ফোরাম চলাকালে। সে সময় সাধারণ পর্যটক ছাড়া বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দও এখানে আসেন। যদিও এখনো বো আও'র নিজস্ব বিমানবন্দর নেই, তবুও একজন সাধারণ পর্যটক হিসেবে যদি আপনি স্বর্গের মত এ নগরে আসতে চান, তা খুবই সুবিধাজনক। পথপ্রদর্শক চাং বলেন,

    বিমানে করে হাইখৌ-এ আসার পর সেখান থেকে সরাসরি পাবলিক-বাসে করে বো আও-এ পৌঁছা যায়। অথবা অন্যান্য বিভিন্ন জেলা বা শহর থেকে বিলাসবহুল বাস বা সাধারণ বাসে করে ছিয়োংহাই শহরে যাওয়া যায়। তারপর পাবলিক-বাসে করে বো আও-এ যাওয়া যায়। 

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040