ছিংছেং পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পর আরেকটি বিখ্যাত্ পর্যটন স্থান তুচিয়াং বাঁধ। তুচিয়াং বাঁধ আর ছিংছেং পাহাড়ের মধ্যে দূরত্ব সামান্য
2011-07-20 17:33:16 cri
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার লিটন রহমান তাঁর রচনায় লিখেছেন, "সিছুয়ান শব্দটি আমাদের অনেকের কাছে অপরিচিত মনে হলেও দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের এই প্রদেশ হচ্ছে চমত্কার, ফুটফুটে আর বিরল প্রাণী পান্ডার জন্মস্থান। ২০ বছর অতিক্রান্ত হলো উওলং প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলের। এখানকার বাঁশ এখন অত্যন্ত বর্ধনশীল। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন, মূল্যবান ও বিরল প্রাণী পান্ডা এই প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলে অতি আরাম-আয়াশে বসবাস করছে। সিছুয়ান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত উওলং পান্ডা প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল পান্ডার বাসস্থানগুলোর অন্যতম। গোলাকার গঠন, চমত্কার ভঙ্গিমা, প্রীতিকর আচরণ এবং কালো ও সাদার বাহারী রঙের কারণে পান্ডা মানুষের সমাদর পেয়েছে। পান্ডা দেখতে ভল্লুকের মত। বাচ্চা পান্ডার মৃত্যুর হার খুব বেশি। কোন কোন বাচ্চা সহজাত বা জন্মের পরবর্তী রোগের কারণে মারা যায়। মাঝে মাঝে পান্ডার মা অযত্নে বাচ্চাকে চাপা দিয়েও মেরে ফেলে। কৃত্রিমভাবে বড় হওয়া পান্ডা ছাড়াও এখন উওলুং প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলের ঘন বনে ১শ'রও বেশি বন্য পান্ডা আছে, যা সারা বিশ্বের বন্য পান্ডার প্রায় ১০ শতাংশ। ইবিং সিছুয়ান প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এখানে সিনজিয়াং নদী ও জিনসা নদীর সাথে চীনের দীর্ঘতম নদী ইয়ংসি মিলিত হয়েছে। এ কারণে ইবিং হলো ইয়াংসির তীরবর্তী প্রথম শহর। চীনের বিখ্যত ছায়াছবি 'ক্রাউচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগনের' বাঁশ বনের দৃশ্যটা ছিল ইবিংয়ের। ইবিং জাতীয় বাঁশ বন পার্ক চীনের শীর্ষস্থানীয় ৪০টি আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম। ৩ হাজার বছর আগে ইবিং বাঁশ উত্পন্ন হতে শুরু করে। সিছুয়ানের রাজধানী ছেংতু থেকে উত্তর পশ্চিমে গাড়িতে ১ ঘন্টার পথ ছিংছেং পাহাড়। এ পাহাড় হচ্ছে চীনের দেশীয় তাও ধর্মের উত্সভূমি। ছিংছেং পাহাড়ে এখনও ১০০ জনের বেশি তাও ধর্মাবলম্বী আছেন। এখনও এ পাহাড়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত আছে কয়েকটি তাও মন্দির ও বহু পুরকীর্তি। ছিংছেং পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পর আরেকটি বিখ্যাত্ পর্যটন স্থান তুচিয়াং বাঁধ। তুচিয়াং বাঁধ আর ছিংছেং পাহাড়ের মধ্যে দূরত্ব সামান্য। এ বাঁধ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো জলসেচ প্রকল্প। এখানে রয়েছে চীনের প্রথম পাহাড় এ্যমেই পাহাড়। এ পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটারেরও বেশি। এই পাহাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে যা গোটা ইউরোপের উদ্ভিদের মোট সংখ্যার প্রায় সমান। এ পাহাড়ের একটি বৈশিষ্ট্যময় দিক হচ্ছে এর গভীর বৌদ্ধধর্মীয় সংস্কৃতি। এখানে প্রায় ৩শ জন সন্ন্যাসী আছেন; আছে ৩০টি মন্দির। আর আছে চিউচাইকৌ উপত্যকা, যার দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। এটি হচ্ছে চীনের সুন্দরতম জায়গা। এখানে আছে অনিন্দসুন্দর পাহাড়, নদী ও প্রাকৃতিক দৃশ্য। এখনকার সবকিছুই যেন অদ্বিতীয়। যেখানেই যাওয়া যাক না কেন, ভালো ভ্রমনের জন্য খাবার হলো একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। আর খাদ্য রসিক হলে সিছুয়ান হবে সে ক্ষেত্রে যথাযথ জায়গা। চীন হলো খাবারের জায়গা, কিন্তু সিছুয়ান হলো রসনার জায়গা। চীনে আছে ৩শটি স্থানীয় অপেরা। এর মধ্যে সিছুয়ান অপেরা সবচেয়ে পুরাতন ও জনপ্রিয়। এ অপেরার ইতিহাস ৩শ বছরের পুরনো। রচনার শেষভাগে একটা কথা বলতে চাই। কথাটি হলো আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান ৫ বছর ধরে শুনছি এবং ওয়েবসাইট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। আসুন না বন্ধুরা, মনের আজান্তে আমরা সবাই সমম্বরে গেয়ে উঠি - সিছুয়ান। মোর সিছুয়ান। ওহে সিছুয়ান।"
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা