ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার মিতালী লিসনার্স ক্লাবের সৌমিতা পাল 'সিচুয়ান, প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ' নামের একটি রচনা লিখেছেন। আমি এখন আপনাদেরকে তাঁর এ রচনা বলবো। তিনি এমন লিখেছেন, সিচুয়ান প্রদেশ হচ্ছে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন ভৌগলিক দৃষ্টিকোন থেকে সবচেয়ে অন্যতম একটি আকর্ষনীয় স্থান। পূর্ব সিচুয়ানের অববাহিকা অঞ্চল ছোট ছোট পাহাড় ঘেরা গ্রীষ্মপ্রধান আদ্র আবহাওয়ার শস্য উত্পাদনের জন্য উপযোগি। তিব্বতীয় মালভূমির পশ্চিমাংশের সীমান্ত হচ্ছে চীনের সবচেয়ে অন্যতম দুর্গম এলাকা, সমতল ভূমি থেকে যার গড় উচ্চতা ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মিটার। তাই এ প্রদেশে মালভূমিসহ সুন্দর প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য, পর্বতমালা, গভীর সংকীর্ণ উপত্যকা, অববাহিকা, পাহাড়, সমতল ভূমি, নদী, হ্রদ, গরম ঝর্ণা, জলপ্রপাত, চুনাপাথরের গুহা ইত্যাদি পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যাপক ভিন্ন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। এছাড়াও পর্যটকরা সিচুয়ানে দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, সাধুপুরুষদের দেহের অংশ ও পবিত্র স্মৃতিচিণ্হ এবং উপভোগ করতে পারবেন চীনের প্রধান ৮ ধরনের রন্ধনপদ্ধতির একটি সিচুয়ানের মশলাসমৃদ্ধ নিজস্ব সুস্বাদু খাবার। সিচুয়ানের রাজধানী চেংতু হচ্ছে কৃষিপ্রধান সমতল ভূমির সাংস্কৃতিক ও শিল্প অঞ্চল। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে চেংতু ছিল চীনের অতীতের অন্যতম প্রথম ছাপাখানার কেন্দ্র এবং সৌখিন চকচকে রেশমি কাপড়, সোনা বা রূপার কারুকার্যখচিত রেশমী পোশাক ও মদের আরতের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। সিচুয়াং হচ্ছে চেংতুর বিশালকায় পান্ডার জন্মভূমি এবং বিশ্বের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশালকায় পান্ডার গবেষণা ও সংরক্ষণ কেন্দ্র। সিচুয়ান প্রদেশে রয়েছে ৩১টি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক জেলা শহর, ৫৩টি পর্যটন কেন্দ্র এবং সরকারের সংরক্ষিত ৩০৭টি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থান। চিইউঝাইকৌ-হুয়াংলং দর্শনীয় স্থান ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় এবং এমটি ইমেই-লেশান উভয়ই বিশাল বুদ্ধা প্রস্তর মিত্রায়া পর্যটন অঞ্চলে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও মানবিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
একই ক্লাবের শ্রোতা লক্ষ্মিকান্ত পাল ছেংতু বালিকারা নামের একটি রচনা লিখেছেন। তিনি এমন লিখেছেন, ছেংতুর ভাবনাহীন জীবন সেখানকার মিষ্টি ও মোহনীয় নারীদেরকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করেছে। ছেংতু-ভিত্তিক একজন নারী লেখক সেখানকার নারীদেরকে চিত্রিত করেছেন এভাবে, "ছেংতু নারীদের কন্ঠস্বর অত্যন্ত কোমল ও মধুর; এমনকি তারা যখন কলহ করেন তখনও। আমার বন্ধুদের অনেকে প্রকৃত ছেংতু নারী। ভিন্ন স্বভাব ও পছন্দ থাকা সত্ত্বেও, তারা প্রত্যেকেই যেন নারী সৌন্দর্যই ছড়িয়ে যাচ্ছে।" একই লেখক ছেংতু সুন্দরীদের সম্পর্কে লিখেছেন, "ছেংতু বিখ্যাত সেখানকার সুন্দর নারীদের জন্য। কিন্তু তারা সুন্দরী গতানুগতিক ধারণায় নয়। যদিও তাদের বেশিরভাগেরই দৈহিক আকৃতি অপেক্ষাকৃত খর্ব, মুখমন্ডল গোল এবং বৈশিষ্ট প্রায় অভিন্ন, কিন্তু তাদেরকে অত্যন্ত কমনীয় মনে হয় তাদের বৈশিষ্টপূর্ণ আবেদনের জন্য। সে কমনীয়তা সৌন্দর্য ও নম্রতা থেকে আসেনি, এসেছে এমন এক শক্তি থেকে যার মধ্যে একদিকে রয়েছে নিজেকে জাহির করার আবার অন্যদিকে আপোস করার ক্ষমতা।"এ বক্তব্য প্রমাণে তিনি একটি উদাহরণ দিয়েছেন। তার বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন খুবই ঠোঁটকাটা স্বভাবের, যিনি প্রায়ই অন্যদের সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হতেন। একদিন মামুলি একটা ব্যাপার নিয়ে তিনি তার এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বিতর্কে অবতীর্ণ হন এবং তার বাকপটুতা দিয়ে তাকে তুলোধুনা করেন। কিন্তু আধ ঘন্টা যেতে না যেতেই তিনি এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হন এবং তার সঙ্গে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করেন, যদিও তখনও পর্যন্ত ওই সহকর্মী রাগে জ্বলছিলেন। তিনি কাপে সামান্য ঈষতোষ্ণ পানি নিয়ে সে সহকর্মীর পাশ দিয়ে যাওয়ার ভান করেন এবং কিছুটা পানি তার হাতের উপর ফেলে দিয়ে সাথে সাথে টিস্যু পেপার এনে তা মুছে দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই পানি ঢেলে দেয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যদিয়ে তাদের বৈরিতার তাত্ক্ষণিক অবসান হয়। এই হলো ছেংতু নারী – মোহনীয়, চটপটে ও কমনীয়। প্রথম ছেংতু সফরকালে ভ্রমনকারীরা সেখানকার নারীদের কমনীয়তা এবং পুরুষদের আলস্য দেখে অবাক হতে পারেন। কিন্তু অচিরেই তারা এর কারণ আবিস্কার করতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার, ভাল ঘুম, উষ্ণ আবহাওয়া, সমৃদ্ধ সম্পদ, উর্বর ভূমি এবং পণ্যদ্রব্যের কম দামই হলো এর মূল কারণ। ছেংতুতে যারা ক্ষুদ্রতম ব্যবসা করেন তারাও একটা মোটামুটি ভাল জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এ শহরের আয়েশি জীবনের এটাই মূল কারণ।