Web bengali.cri.cn   
চীনে বসবাসকারী ভারতীয় পরিবার
  2012-07-04 15:29:32  cri
প্রিয় শ্রোতা, আপনারা এখন থাং রাজবংশের সময়কার একটি কবিতা আবৃত্তি শুনছেন। এটি যার কণ্ঠ সে চীনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, সে ভারতের ড্যানিয়েল। ২০১০ সালে তার বাবা জাস্টিন একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে শাংহাইয়ের আসেন। ড্যানিয়েল তার মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে চীনে এসেছে। আন্তর্জাতিক স্কুলে ড্যানিয়েল বিভিন্ন দেশের ছোট বন্ধুদের সঙ্গে চীনা ভাষা শেখে। ড্যানিয়েল চীনা ভাষা শিখতে খুবই পছন্দ করে। বিশেষ করে থাং রাজবংশের সময়কার কবিতা। শিক্ষকরা বলেন, কবিতা হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীনকালের সাহিত্য। এখন আমরা যে কবিতাটি শুনছি সেটি ড্যানিয়েলের সবচেয়ে প্রিয় 'সমাধি পরিষ্করণ'।

অ্যাবাকাস কোর্স স্কুলের আবশ্যিক কোর্সগুলোর অন্যতম। যদিও এটি ড্যানিয়েলের প্রথম বছর, তবুও তাকে চীনা ভাষা, গণিত, ক্রীড়া ও অ্যাবাকাসসহ অনেক কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। আগে সে কখনো অ্যাবাকাস শেখেনি। আগে ড্যানিয়েলের গণিতের ফলও ভাল ছিল না। কিন্তু ড্যানিয়েলের মা আবিষ্কার করেছেন যে, অ্যাবাকাস শেখার পর তার মনোযোগ দেওয়ার মাত্রা এবং জবাব দেওয়ার সামর্থ্য অনেক উন্নত হয়েছে। এখন তার পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার মাত্রা আরো বেশি হয়েছে।

চীনে থাকার সময় দু'টি বাচ্চার লেখাপড়া ছাড়াও ড্যানিয়েলের মা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের ওপর বেশি মনোযোগ দেন। চীনে আসার প্রথম দিকে এক বাচ্চার জ্বর হয়। কিন্তু পাশ্চাত্য ওষুধ খাওয়ার পর কোনো ফল হয় না। এক চীনা বন্ধু তাঁকে একজন প্রবীণ চীনা চিকিত্সকের কাছে যেতে বলেন। দু'বার চীনা ওষুধ খাওয়ার পর বাচ্চা সুস্থ হয়ে ওঠে। সে কারণে তিনি চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধের ওপর খুব আস্থা রাখেন। যখন তাঁর কোনো ছেলের অসুখ হয়, তখনই তিনি তাকে প্রবীণ চীনা চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যান। তিনি বলেন,

"ভারতে আমি দেখি নি যে কখনো এতো বেশি বৃক্ষ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানকার চীনা চিকিত্সকরা পশ্চিমা দেশগুলোর ফার্মাসিস্টদের মতো মানুষের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ দেন। মনে হয় তা খুব নিরাপদ।"

ভারতে চীনা কুংফু চীনের পণ্যের মতো জনপ্রিয়। ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল প্রায় প্রতি সপ্তাহে চীনের কুংফু চলচ্চিত্র দেখায়। চ্যাকি ছান ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের প্রিয় কুংফু তারকায় পরিণত হয়েছেন। জাস্টিনের বড় ছেলে ডোমিনিকও কুংফু অনুরাগী। সে চলচ্চিত্রে চীনের কুংফু দেখে সেগুলো অনুকরণ করতে ভালবাসে।

সন্তানেরা চীনা সংস্কৃতিকে এতো ভালবাসে দেখে বাবা জাস্টিনের খুব ভাল লাগে। তিনি বলেন, এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সিঙ্গাপুরে কাজ করেছেন। সে সময় তিনি একা বিদেশে ছিলেন। কিন্তু এক বছর আগে চীনে আসার সময় তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে আসেন। কারণ এখানে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আছে। সন্তানদের আরো ভালভাবে চীনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য তিনি তাদের চীনা ভাষা শেখার বিষয়টিকে সমর্থন দেন। তিনি বলেন,

"আমি চীনা সংস্কৃতিকে খুবই পছন্দ করি। চীনাদের পারিবারিক ধারণা এবং মা-বাবাকে সম্মান করাসহ অনেক মূল্যবোধের বিষয় ভারতের মতো। গভীর সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত সন্তানদের জন্য আজীবন কল্যাণকর হয়। আমি চীনে আরো কিছু সময় কাজ করবো। সুতরাং আমি আশা করি, বাচ্চারা ভালভাবে চীনা ভাষা শিখবে।"

ড্যানিয়েল সাংবাদদাতাকে জানায়, সে চীন এবং এখানকার বন্ধুদেরকে খুব পছন্দ করে। সে বলে,

"আমি আগে ভারতে ছিলাম। ভারতের পরিবেশ এখানকার মতো ভাল না। চীনে আসার পর আমার মনে হয়েছে, এ জায়গাটা খুব ভাল। জীবনযাপন আরো আরামদায়ক। আমি নতুন জীবনযাপন শুরু করেছি। যদিও ভারতের আগের বন্ধুদেরকে ছেড়ে আসতে হয়েছে, তবুও এখানে আমি নতুন চীনা বন্ধু পেয়েছি। চীনা ভাষা শেখা এবং এখানকার জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।"

পরিবারের সবাই সুন্দরভাবে চীনের সমাজের সঙ্গে মিশে গেছে দেখে জাস্টিন বলেন, তাঁর নিজের পরিবার দু'দেশের যোগাযোগের সেতুতে পরিণত হয়েছে, যা তাঁর কল্পনার বাইরে।

জাস্টিনের পরিবারের মতো চীনা সংস্কৃতিকে ভালবাসে এমন ভারতীয় মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ভারতের অনেক পরিবার এখন চীনে বসবাস করে। তাঁরা চীনের গণশৃঙ্খলা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পছন্দ করে।

সাকথিভার হচ্ছেন ভারতের যৌথ ব্যাংকের শাংহাই প্রতিনিধি কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তি। এক বছর আগে তাঁর পরিবার পেইচিং থেকে শাংহাইয়ে আসে। তাঁর দু'টি সন্তান চীনকে খুব পছন্দ করে। তাঁর স্ত্রীও চীনের জীবনযাপনকে খুবই পছন্দ করেন।

চলতি বছর তাঁর মেয়ে তানিশার বয়স হচ্ছে ১১ বছর। লাজুক ভঙ্গিতে সে জানায়, পেইচিংয়ে লেখাপড়ার সময় সে শুনেছে, লামা মন্দিরে প্রার্থনা করলে তা বাস্তবায়িত হয়। তাই সে সেখানে প্রার্থনা করেছে। সে সারাজীবন চীনে থাকতে চায়। এখন সে পরিবারের সঙ্গে পেইচিং থেকে শাংহাইয়ে এসেছে। তাকে চীন ত্যাগ করতে হয়নি - এজন্য সে কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে। তানিশা চীনা শিশুদের বন্ধু হিসেবে পেতে পছন্দ করে। তাঁদের কাছ থেকে চীনা গান শিখেছে সে।

ছোট ভাই কিরণের বয়স ৮ বছর। যদিও তার চীনা ভাষা খুব ভাল না, তবুও জিহ্বার বিভিন্ন ধরনের কসরতে বিভিন্ন শব্দ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পছন্দ করে সে।

বড় বোন নিজ উদ্যোগে ছোট ভাইকে চীনা ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পালন করে। দু'জনই সারাক্ষণ এক সাথে চীনা শেখার বইয়ের সংলাপ আওড়ায়।

মা-বাবার প্রজন্মের তুলনায় চীনে বেড়ে ওঠা ভারতীয় শিশুদের চীনের প্রতি আরো বেশি আবেগ আছে। চীন ও ভারত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী। চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও ভারত সফরের সময় বলেছিলেন, 'চীন-ভারত বন্ধুত্ব একটি বৃক্ষের মতো। এর মূল যত গভীরে যাবে, পাতাও তত ঘন হবে।' চীন-ভারত মৈত্রীর বীজ দু'দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছটি আরো বড় হবে।

খোং চিয়া চিয়া/এসআর

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040