|
'যখন ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্প ঘটে, তখন আমি জানতাম না একজন শিল্পী হিসেবে কীভাবে এসব দুর্গতদেরকে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু আমি মনে করতাম, আমাদের অবশ্যই কিছু প্রচেষ্টা চালানো উচিত্। তাই তখন আমি কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে সঙ্গীত ও শিল্পকর্ম নিয়ে তাদের কাছে যেতাম। আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আমরা পয়লা জুন শিশুদের জন্য উত্সবের আয়োজন করতাম। আমি মনে করি, একটি সমাজ ও একজন মানুষের জন্য শিল্পের বিশেষ শক্তি আছে।'
তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের কিশোর-কিশোরীদের চিত্রকলা প্রদর্শনী তিন বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রদর্শনীতে দু'পারের কিশোর-কিশোরীদের কয়েক শ' শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। পেশাদারিত্বের দিক থেকে পর্যালোচনা করলে বলা যায়, তাদের মধ্যে অনেকগুলো খুব ভাল মানের। প্রদর্শনী বুথগুলোকে বসন্তকাল, গ্রীষ্মকাল, শরত্কাল ও শীতকাল এবং পেইচিং, হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান – এভাবে বিভক্ত করা হয়। চৌ ইং বলেন,
'আমরা চিত্রকলা প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিশুদেরকে এ কাজে যুক্ত করতে চাই। আমরা আশা করি, চিত্রকলার মাধ্যমে বিনিময় জোরদার করা এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। অনেকে বলেন, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত। কিন্তু আমি মনে করি, শিশুরা বর্তমানের। আমাদের সঙ্গে জীবন কাটায় এবং দিন দিন বড় হয়। জীবনে ঘটা প্রত্যেকটি ঘটনা তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।'
চৌ ইং কেবল একজন শিল্পী নন, তিনি একজন ভালো মা-ও। তাই তিনি শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং জীবনযাপনের পরিবেশের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন। তিনি মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে সমাজের উচিত্ যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে শিশুদের বেড়ে ওঠার একটি ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন,
'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশু সম্পর্কিত বেশ কিছু সামাজিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে আমরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদেরকে আত্মসমালোচনা করতে হবে।'
চিত্রকলা প্রদর্শনীতে যোগদানকারী কোনও কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। তারা আশা করেন, আরও বেশি শিশু এমন ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেবে। অনেক বাবা-মা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে চিত্রকলা প্রদর্শনী উপভোগ করেন। শিশুরা অন্য শিশুদের শিল্পকর্ম দেখে উদ্দীপ্ত হন। প্রদর্শনীতে একজন বাবা সংবাদদাতাকে বলেন,
'আমার সন্তান ছবি আঁকতে পছন্দ করে। কিন্তু আমি মনে করি, ছবি আঁকা শেখানো উচিত্ নয়। কারণ শেখালে শিশুদের কল্পনাশক্তি চলে যাবে। একজন শিশু নিজেকে প্রকাশ করতে চাইলে ছবি আঁকতে পারে। শিশুদের আঁকা জগত্ আর আমাদের চোখের জগত্ একেবারে ভিন্ন। শিশুরা জন্ম থেকে শিল্পী।'
চৌ ইং বলেন, তাঁর এবারের চিত্রকলা প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে দুর্গত অঞ্চলের ওপর মানুষের দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া, তিনি আশা করেন, মা-বাবা শিশুদের শিল্পকর্মের ভেতর দিয়ে তাদের মনের অবস্থা জানতে পারেন। এখন অনেক শিশুর স্কুল বন্ধ থাকার সময় শিল্পে হাতেখড়ি দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে চৌ ইং বলেন, শিশুদেরকে শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় মা-বাবাদের কিছু ভুল থাকে। আমাদের শিশুদের আগ্রহ ও শখের দিক বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত্। তিনি বলেন,
'একটি শখের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেন একটি ছোট গাছের বড় হওয়ার মতো। এটা স্বাধীন ও সাবলীল হওয়া উচিত্।'
জানা গেছে, চৌ ইং তাঁর চিত্রকলা প্রদর্শনী নিয়ে আবার ওয়েন ছুয়ানে ফিরে যাবেন এবং সেখানকার শিশুদের জীবনে উষ্ণতা এনে দেবেন। তিনি বলেন,
'জুন মাসে আমরা প্রদর্শনীর এসব শিল্পকর্ম নিয়ে ওয়েন ছুয়ানে যাবো। আমি শৈল্পিক পদ্ধতিতে এক ধরনের দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক। বয়সের দিক থেকে দেখা যায়, আমার ও শিশুদের অবস্থান সময়ের দু'পারে। কিন্তু আমি মনে করি, মানব সৃষ্টির পর অনেক কাল পার হলো। আমাদের উচিত্ ঔদ্ধত্য ও পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করে অন্যপারের পক্ষকে অনুধাবন করার চেষ্টা চালানো।'
লিলি/এসআর
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |