Web bengali.cri.cn   
আবার চীনে মার্কো পোলোর আগমন
  2012-03-14 12:32:56  cri

সাত শ' বছরেরও বেশি সময় আগে মার্কো পোলো চীনে এসে সেই সময় যা দেখেন এবং শোনেন সেগুলোর প্রথমবারের মতো ইউরোপে বয়ে নিয়ে যান। এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলো সেই প্রথমবারের মতো প্রাচ্যের এই অদ্ভূত ভূমিকে চেনেন। তখন থেকে সাত শ' বছরেরও বেশি সময় পর আন্তর্জাতিক মার্কো পোলো সড়ক সমিতি ওই বণিক পরিব্রাজক-ব্যবহৃত রুট ধরে আবার চীনে এসে দেশটির সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার উন্নয়নের এক নতুন সেতুবন্ধ তৈরি করেছে।

মার্কো পোলো নামটির সঙ্গে নিশ্চয়ই আপনারা পরিচিত। কিন্তু একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, খুব কম মানুষ জানেন তাঁর মাতৃভূমি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া। মার্কো পোলো ১২৫৪ সালে ক্রোয়েশিয়ার কোরকুলা দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। চার বছরের যাত্রায় ১২৭৫ সালে তিনি চীনে আসেন। ইউরোপে ফিরে যাওয়ার পর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার ওপর 'মার্কো পোলোর ভ্রমণ' শীর্ষক বই লেখেন। বইয়ের শতাধিক অধ্যায়ে চীনের ৪০টিরও বেশি শহর বা স্থানের বর্ণনা করা হয় এবং তখনকার চীনের প্রাকৃতিক ও সামাজিক অবস্থা সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। পরবর্তীকালে তাঁর এই বই বিভিন্ন দেশের গবেষকদের চীনের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ রচনায় পরিণত হয়। বলা যায়, মার্কো পোলো সবার আগে চীনের সামাজিক অবস্থা প্রণালীবদ্ধভাবে পশ্চিমা মানুষের কাছে বিবৃত করেন। তিনি চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যকার বিনিময় ইতিহাসে বন্ধুপ্রতিম দূত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক মার্কো পোলো সড়ক সমিতি ক্রোয়েশিয়ার বেসরকারি মৈত্রী সংস্থা হিসেবে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সঙ্গে এ সমিতির প্রতিষ্ঠার কিছু সম্পর্ক রয়েছে। ক্রোয়েশিয়া 'মার্কো পোলোর মাতৃভূমির' – এ মর্যাদা দিয়ে পেইচিং অলিম্পিকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় দেশটি। এ উদ্যোগ তখন ব্যাপক সাড়া ফেলে। মার্কো পোলো এবং তাঁর রেখে যাওয়া মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদের ওপর আবার নতুন করে দৃষ্টি রাখতে শুরু করে সারা বিশ্ব।

আন্তর্জাতিক মার্কো পোলো সড়ক সমিতি প্রতিষ্ঠার চিন্তা প্রথমে আসে জাসনা উকাসের মনে। তিনি বলেন,

'মার্কো পোলো সম্পর্কিত একটি ব্র্যান্ড সৃষ্টি করতে চাই আমি। তাঁর মর্যাদার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে ক্রোয়েশিয়ার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে চাই।'

প্রতিষ্ঠার শুরুতেই এ সমিতি চীনের অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটি ও ক্রোয়েশিয়ায় নিযুক্ত চীনের দূতাবাসের ব্যাপক সমর্থন পায়। তারপর এর উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সমিতিটি বরাবরই ক্রোয়েশিয়ায় চীনের দূতাবাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছর এ সমিতি দূতাবাসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চীনের সাংস্কৃতিক দিন সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ক্রোয়েশিয়ায় প্রবাসী চীনা, চীনা বংশোদ্ভূত ক্রোয়েশীয় এবং ওই দেশটিতে চীনা সংস্কৃতির অনুরাগীরা এ অনুষ্ঠানে সমবেত হয়ে দু'দেশের সংস্কৃতি বিনিময় করেন। এ অনুষ্ঠান দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক জানাচেনা ও মৈত্রী গভীর করার ক্ষেত্রে বেশ অবদান রাখে। এ প্রসঙ্গে উকাস বলেন,

'আমরা ক্রোয়েশিয়ায় চীনের দূতাবাসের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে আসছি। রাষ্ট্রদূত মি. শেন চি ফেই আমাদেরকে অনেক সাহায্য ও সমর্থন দেন। আমাদের মধ্যে খুব ভালো সহযোগিতা রয়েছে।'

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সমিতি সব সময় চীন ও ক্রোয়েশিয়ার অর্থ-বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা বেগবান করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ সমিতির উদ্যোগে প্রথম 'ক্রোয়েশিয়ার সুস্বাদু খাবার দিবস' চীনের হাং চৌ শহরের মার্কো পোলো হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এ দিবসে পর্যটকরা ক্রোয়েশিয়ার সুস্বাদু খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা ছাড়াও, ওই দেশের শিল্পীদের বয়ে আনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাচগান ও বসনের পরিবেশনা উপভোগ করেন। এ প্রসঙ্গে উকাস বলেন,

'ক্রোয়েশিয়ার মতো এত ছোট একটি দেশ হিসেবে চীনে নিজেদের সংস্কৃতি ও অর্থনীতি প্রচার করতে চাইলে প্রথমেই সংস্কৃতি ও পণ্য জনগণের নজরে আনতে হবে। মানুষ স্বাদগ্রহণের পর হয়তো বলতে পারেন, ওহ্ এমন ধরনের আঙ্গুর-মদ খুব ভালো। তারপর ক্রোয়েশিয়া কেমন দেশ – সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।'

আন্তর্জাতিক মার্কো পোলো সড়ক সমিতি প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত নিজেদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে চীন ও ক্রোয়েশিয়ার বেসরকারি বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনগণের মৈত্রীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উকাস বলেন, ভবিষ্যত উন্নয়নে এ সমিতি তার কাজ চালিয়ে যাবে। ফলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সভ্যতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ সমিতি আরো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

লিলি/এসআর

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040