|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে শ্রুতিমধুর ও ধীরলয়ের সঙ্গীত শুনছেন তা ইউন নান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের অন্যতম হু লু সি দিয়ে বাজানো হয়। হু লু সি কী রকমের একটি বাদ্যযন্ত্র এবং কীভাবে এত সুন্দর সঙ্গীত বাজানো যায়? তাহলে উল্লেখিত দুটি প্রশ্ন নিয়ে আমাদের আজকের সাংস্কৃতিক বিনিময় শুনবো।
হু লু সির ইতিহাস সুদীর্ঘকালের এবং প্রধানত তাই জাতিসহ ইউন নান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত তে হোং ও ছাং চৌ অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। হু লু সি একটি লাউ এবং তিনটি বাঁশের নল দিয়ে নির্মিত। লাউয়ের সামনে হচ্ছে হু লু সির মুখ এবং এর নীচের তিনটি অংশ নলের সঙ্গে সংযুক্ত ।
সাধারণত বলা যায়, হু লু সি দিয়ে পাহাড়ী গানসহ সাবলীল সুরসম্পন্ন লোক সঙ্গীত বাজানো হয়। সুরের মধ্যে লম্বা সুর বেশি এবং সুরও নমনীয় ও আবেগপূর্ণ। তাই হু লু সি সমসময় সুন্দর প্রেমের গল্পের সঙ্গে জড়িত। হু লু সির উত্পত্তির পিছনে একটি বেদনাদায়ক প্রেমের কাহিনী রয়েছে। ইউন নান প্রদেশের সুর রচয়িতা ছাও পোং চুই আমাদের সংবাদদাতাকে বংশপরম্পরায় প্রচলিত এই সুন্দর লোক কাহিনী ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন,
'অনেক আগে নদীর তীরে একজন তরুণ ও একজন তরুণী পরষ্পরকে ভালোবাসতেন। হঠাত্ বন্যা আসায় তাঁরা দু'জন আটকে পড়ে ছিলেন। তাঁদের কাছে মাত্র একটি ভেলা ছিলো এবং ভেলা মাত্র একজনের ওজন ধরতে সক্ষম ছিলো। তরুণকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়ার জন্য তরুণী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।তরুণ উদ্ধার পাওয়ার পর তরুণীকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একটি হু লু সি তৈরি করেন এবং প্রতিদিন তরুণীর কথা মনে করে একটি গান বাজান। তারপর এই সঙ্গীত গোটা তাই জাতিতে প্রচলিত হয়। বছরের পর বছর হু লু সি তাই জাতির জনগণের মনে ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পবিত্র এক ধরনের বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হয়।'
হু লু সির স্বর খুব মধুর এবং সহজেই শেখা যায় ও বহন করা যায়। এ সব কারণে স্থানীয় জনগণের কাছে এটি খুব সমাদৃত হয়।
গত শতাব্দীর ৭০এর দশকে জনগণ খাবারের শেষে বা জমিতে কৃষি কাজ করার সময় হু লু সি দিয়ে একটি সুর বাজাতেন। তারপর হু লু সি তৈরি ও বাজানোর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ লোক শিল্পীরা বেশ কিছু মূল্যবান অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে হু লু সি সংস্কার করে আসছেন, ফলে হু লু সির অভিব্যক্তি ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে।
আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তার নাম হলো 'বাঁশ বনের সুদূর জায়গা'। সঙ্গীতে তাই উপজাতির জীবনযাপনের শান্ত ও সম্প্রীতিমূলক দৃশ্য প্রাণবন্তভাবে বর্ণনা করা হয়। এ সঙ্গীতের মাধ্যমে অধিকাংশ চীনা শ্রোতা হু লু সির সঙ্গে পরিচিত হন। ইউন নান প্রদেশের সুর রচয়িতা ছাও পোং চুই বলেন,
'১৯৮০ সালে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত সারা দেশের উপজাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সময় আমিসহ মোট চার জন প্রথমবারের মতো পুর্ণাঙ্গ ও সংস্কার করা বাঁশ বনের সুদূর জায়গা নামে হু লু সি দিয়ে বাজানো এই সঙ্গীত পেইচিংয়ে নিয়ে আসি এবং সঙ্গীতটি দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও চলচ্চিত্র ইন্সস্টিটিউটও এর ওপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। তারপর থেকে সারা চীনের সঙ্গীত অনুরাগীদের হু লু সির প্রতি গভীর আগ্রহ গড়ে উঠেছে।'
১৯৮৯ সালে হু লু সি দিয়ে প্রথম সঙ্গীত অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এর বাদক হচ্ছেন কেন তে ছুয়ান। ছাও পোং চুই তাঁকে এভাবে মূল্যায়ন করেন, কেন তে ছুয়ান হু লু সির সাংস্কৃতিক বিষয় ব্যাখ্যা করেন।
হু লু সির উন্নয়নের গতি খুব লক্ষ্যণীয়। মাত্র ২০ বা ৩০ বছরের মধ্যে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন পেশাদার সম্প্রদায়ের সঙ্গীত অনুরাগীরা হু লু সি শিখছেন। ইউন নান প্রদেশের হু লু সি সমিতির মহাপরিচালক লি কুই চোং সংবাদদাতাকে জানান, বর্তমানে হু লু সি ধাপে ধাপে বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং আরো বেশি বিদেশীর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি বলেন,
'বিদেশীদের চোখে হু লু সি বাদ্যযন্ত্র খুব অদ্ভুত।'
রচয়িতা ছাও পোং চুই বলেন, চীনের উপজাতির একটি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে হু লু সির ভবিষ্যত খুব সম্ভাবনাময়। তিনি বলেন,
'আমার মনে হয়, হু লু সির ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল। এর সুরেলা আওয়াজ অতুলনীয়। আরো বেশি শিল্পী হু লু সির ওপর গুরুত্ব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হু লু সি একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়।'
লিলি/শান্তা
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |