|
'সি শুয়াং বান না' একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও অদ্ভুত জায়গা। কর্কটক্রান্তির মরুভূমি অঞ্চলের একমাত্র সবুজ মরুদ্যান হিসেবে এই জায়গাটি তার অদ্ভূত গ্রীষ্মণ্ডলীয় বৃষ্টিবিধৌত জঙ্গলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে। এখানে 'তাই' উপজাতির তিন লাখেরও বেশি মানুষ বাস করে। হু লু সি এখানকার প্রভাবশালী এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
শে ইয়ং শেং তাই উপজাতির একটি গ্রামে বড় হয়েছেন। জন্ম থেকেই হু লু সির জন্য তাঁর সুগভীর ভালোবাসা রয়েছে। তিনি বলেন,
'ছোটবেলায় আমি হু লু সি বাজাতে পছন্দ করতাম। প্রতিদিন আমি এ বাদ্যযন্ত্র দিয়ে চর্চা করতাম এবং দিনে অন্তত চার-পাঁচ ঘন্টা চর্চা করতাম।'
শে ইয়ং শেংয়ের যখন শৈশব তখন গোটা চীনে হু লু সি বুঝতেন বা আনুষ্ঠানিকভাবে শিখতেন এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম ছিল। হু লু সি'র উত্পত্তিস্থান, অর্থাত্ তাই উপজাতি অধ্যূষিত অঞ্চলেও খুব কম লোক হু লু সি চর্চা বজায় রাখেন। তা সত্ত্বেও, শে ইয়ং শেং হু লু সির অনুরাগী হয়ে পড়েন।
বড় হওয়ার পর শে ইয়ং শেং একজন পথনির্দেশক হন। সি শুয়াং বান নানের উপজাতীয় সংস্কৃতি ও অদ্ভূত গ্রীষ্মণ্ডলীয় দৃশ্যের কারণে এখানে বহু পর্যটক জড়ো হন। কাজের অবসরে শে ইয়ং শেং পর্যটকদের জন্য বেশ কয়েকটি সঙ্গীত বাজান। অনেকে তাঁর বাজানো সঙ্গীতের মাধ্যমে এ বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হন এবং সি শুয়াং বান না সম্পর্কিত তাঁদের উপলব্ধিও গভীর হয়। তিনি বলেন,
'আমি বাসে ও দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের জন্য দুয়েকটি সঙ্গীত বাজাই। অনেক পর্যটক আগে এ বাদ্যযন্ত্রের সংগীত শুনেন নি। হু লু সি'র আকার খুব সুন্দর এবং একটি হাতে তৈরি করা হয়। খুব সুন্দর দৃশ্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে হু লু সি দিয়ে বাজানো সঙ্গীতগুলো শুনলে রূপকথার দেশে প্রবেশের মতো অনুভূতি হয়।'
শে ইয়ং শেং এরপর 'হু লু সির জনক' বলে অভিহিত 'কেন তে ছুয়ান'-এর' সঙ্গে পরিচিত হন। হু লু সি'র জন্য শে ইয়ং শেংয়ের সুগভীর ভালোবাসা দেখে কেন তে ছুয়া মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি শে ইয়ং শেংকে পেশাগত কৌশল শেখানো ছাড়াও, হু লু সি নিয়ে নতুন সেবা সৃষ্টির জন্য তাঁকে অনুপ্রেরণা দেন। এ প্রসঙ্গে শে ইয়ং শেং বলেন,
'আগে হু লু সির দোকান খোলার ব্যাপারটি আমি কখনও চিন্তা করিনি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কেন তে ছুয়ান আমার মধ্যে অনেক আস্থা সৃষ্টি করেছেন। উনিশ শ' নিরানব্বই সালে আমি একটি হু লু সি দোকান খুলি। আমার দোকানে এসে হু লু সি শিখতে চান – এমন লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি দোকানে হু লু সি বাজানো শিখাই।'
হু লু সির উন্নয়নে গত নব্বইয়ের দশকে যেন বসন্তের বাতাস বইতে শুরু করে। আরো বেশি দেশি-বিদেশি সঙ্গীত অনুরাগী হু লু সি'র ওপর গুরুত্ব দিতে শুরু করেন।
শে ইয়ং শেংয়ের জন্য তিনি কত মানুষকে হু লু সি বাজানো শিখিয়েছেন সেই সংখ্যা তাঁর মনে নেই। কিন্তু অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মানুষ যে হু লু সি পছন্দ করতে শুরু করেছেন, তা দেখে শে ইয়ং শেং খুব আনন্দ বোধ করেন।
এখন শিক্ষাদান কাজ ছাড়া শে ইয়ং শেংয়ের আরেকটি কর্তব্য আছে। প্রতিদিন রাত সাড়ে সাতটায় সি শুয়াং বান না স্বায়ত্তশাসিত জেলার রাজধানী চিং হোং শহরে একটি নাচগানের আসর হয়। সি শুয়াং বান নানে আসা প্রত্যেক পর্যটক অবশ্যই এই পরিবেশনা উপভোগ করেন। শে ইয়ং শেং হচ্ছেন এই পরিবেশনার একমাত্র একক হু লু সি বাদক। তিনি বলেন, তিনি তাঁর সবচেয়ে চমত্কার পরিবেশনার মাধ্যমে হু লু সির নমনীয় ও মধুর সুর প্রত্যেক পর্যটকের মনে বাঁচিয়ে রাখতে চান।
লিলি/এসআর
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |