|
রেন ছিয়াং বাস করেন পেইচিংয়ের একটি পুরানো ভবনে। তার বাড়ির বৈঠকখানার দিকে তাকালে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে দৃশ্য ধরা পড়ে তা হলো দেয়ালের পাশে রাখা আটটি গিটার। সেগুলোর প্রতিটিই রেন ছিয়াংয়ের মূল্যবান সম্পদ। রেন ছিয়াং বলেন,
'আপনি যদি গিটার পছন্দ করেন তাহলে তাকে মূল্যবান সম্পদ মনে করুন। তা না হলে অন্যদের চোখে তার কোনো মূল্য নেই।'
শ্যান পেইতে জন্ম নেওয়া রেন ছিয়াং গিটারের জন্য পেইচিংয়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। প্রতি মাসে মাত্র তিন হাজার ইউয়ানের বেতনের ওপর নির্ভর করে এসব গিটার কেনা অবশ্যই কোনো সহজ ব্যাপার নয়।
বিদ্যালয় জীবন থেকে রেন ছিয়াং গিটারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে শুরু করেন। তখন কেবল বাবা ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁকে সমর্থন করতেন না। দু হাজার পাঁচ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর জন্মস্থানে তিনি একটি চাকরি খুঁজে বের করেন; বেতন মাসে পাঁচ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। ওই বছরই এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি চীনের বিখ্যাত গিটার বাদক কাও চুনের সঙ্গে পরিচিত হন। তাই তিনি পরিবারের সদস্যদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে জন্মস্থানের চাকরি ছেড়ে পেইচিংয়ে এসে কাও চুনের কাছ থেকে গিটার বাজানো শিখতে শুরু করেন। তিনি বলেন,
'তখন আমি আমার শিক্ষক কাও চুনের কাছাকাছি একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষে বাস করতাম। তারপর একজন বন্ধুর বাড়ি ভাড়া করি। তখনকার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি কখনো অনুতাপ করি না।'
তখন শিক্ষক কাও চুনের কাছ থেকে রেন ছিয়াংয়ের শেখার বিষয় ছিল হাতের আঙ্গুল দিয়ে গিটার বাজানো। ওই সময় চীনে এমন ধরনের বাজানো পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্যাডেল দিয়ে বাজানো পদ্ধতির তুলনায় হাতের আঙ্গুল দিয়ে বাজানো সঙ্গীত শুনতে আরো শান্ত, ধীরলয়ের ও শ্রুতিমধুর লাগে। সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি রেন ছিয়াং মাঝেমাঝে নিজের জন্মস্থানের কথা স্মরণ করেন। সেখানকার পার্বত্য এলাকা, মাটি, নির্মল আকাশ ও আঁকাপাকা পথ সবকিছু তার মনে ভেসে ওঠে। তিনি বলেন,
'চর্চার জন্য তখন আমি একটি সঙ্গীত কয়েক শ' বার করে বাজাতাম। সঙ্গীত বাজনোর সাথে সাথে আমি যেন জন্মস্থানের পাহাড় দেখতে পেতাম।'
যদিও জন্মস্থান ও নিজ ঘরের কথা খুব মনে পড়ে, তবুও রেন ছিয়াং বাড়িতে ফিরে যাননি। কারণ পেইচিংই ছিল তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত স্থান। পেইচিংয়ে গিটার শেখার তিন বছরে রেন ছিয়াং জীবনযাপনের খরচ হিসেবে মাসে মাত্র তিন শ' ইউয়ান ব্যয় করতেন। কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার হলো, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ তিনি খুব দ্রুতই পেয়ে যান। দু হাজার সাত সালের শেষ দিকে রেন ছিয়াং দেশব্যাপী গিটার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় তিনি আঙ্গুল দিয়ে বাজানো গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তারপর গিটার অঙ্গনে তিনি দিন দিন খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। তবে কেবল তিনিই জানেন, গিটারের জন্য তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কত কিছু বিসর্জন দিয়েছেন। এবারের প্রতিযোগিতার আগে তার বাবা গাড়ি বিক্রি করে দিয়ে রেন ছিয়াংয়ের জন্য এক লাখ ইউয়ানের একটি গিটার কেনেন। এই গিটার দেখে রেন ছিয়াং খুব খুশি হন। কিন্তু সাথে সাথে তার মনকষ্টও হয়। কারণ তার পরিবার খুব ধনী নয়। প্রতিযোগিতার পর তিনি সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ পরিবেশনের সুযোগ পান। তিনি বলেন, তিনি কখনও টাকা আপচয় করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে রেন ছিয়াং একজন সহজ ও সরল মানুষ।
তিন বছর আগে একটি গিটার কনসার্ট শেষে এক যুবতী রেন ছিয়াংকে ভালোবাসা নিবেদন করেন। ওই যুবতী একজন গিটার অনুরাগী। তিনিও গিটার বাজাতে পছন্দ করেন। বন্ধুরা রেন ছিয়াংয়ের সঙ্গে মজা করে বলেন, তুমি সব গিটার বিক্রি করে একটি বাড়ি কিনতে পারবে। কিন্তু এমন ধরনের প্রস্তাব রেন ছিয়াং কখনও গ্রহণ করবেন না। গিটার তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি রেন ছিয়াং খুব কঠোরভাবে অন্যদের কাছে ব্যাখ্যা করলেও তিনি জানেন, গিটার কোলে জড়িয়ে ধরলে তিনি এ জগতের সঙ্গে বিনিময় করতে পারেন। রেন ছিয়াং বলেন, যে বিষয় তিনি অন্বেষণ করেন গিটারের মধ্য থেকে তিনি তা পান।
বলা যায়, রেন ছিয়াং একজন সুখী ও ভাগ্যবান তরুণ। তিনি দৃঢ়ভাবে তার স্বপ্ন অন্বেষণ করছেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় সাফল্য, বন্ধুত্ব ও প্রেম অর্জন করেছেন। বর্তমানে চীনে ও পেইচিংয়ে স্বপ্ন অন্বেষণকারী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাঁরা নিজেদের জন্য একটি সঠিক পথ খুঁজে বের করছেন।
লিলি/এসআর
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |