|
'অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করার পর আমি উপন্যাস লেখার জন্য বাইরে বেড়াতে শুরু করি। মাঝেমাঝে পাহাড়ে আবার মাঝেমাঝে বনে যেতাম। এভাবে আমি ২২ বছর সময় পার করি।'
এই উপন্যাসের বিক্রির পরিমাণ চাং ওয়েইয়ের কল্পনাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং পাঠকদের আগ্রহ লেখককে বিপুল উত্সাহ দিয়েছে। চাং ওয়েই বলেন,
'পাঠকদের প্রশংসা আমার জন্য সর্বোত্তম মানসিক সমর্থন। আমি মনে করি, তাঁদের সমর্থনে আমার উপন্যাস লেখা তাত্পর্যসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। একটি উপন্যাস যত ভালো হোক না কেন, পাঠকরা সেটিকে পছন্দ না করলে আমার মনে হয় তা স্বাভাবিক। আবার একটি উপন্যাস যদি খুব খারাপ হয় এবং পাঠকরা সেটিকে পছন্দ না করে, তখনো আমার মনে হয় তা স্বাভাবিক। একটি বই যেমন তার পাঠক খুঁজে বের করে, তেমনি পাঠকরাও তাদের উপযুক্ত বইও খুঁজে বের করেন।'
চাং ওয়েই যখন 'আপনি আছেন পার্বত্য এলাকায়' উপন্যাস শেষ করেন তখন তাঁর বয়স ৫৪ বছর। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে জানান, কেবল মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেননি। উনিশ শ' আশি সালের পর দীর্ঘ সময় ধরে চাং ওয়েই ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য সমৃদ্ধকরণ গবেষণায় নিযুক্ত থাকেন। অন্যদের সহযোগিতায় চার বছরের মধ্যে প্রকাশিত 'শান তোং ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য সমৃদ্ধকরণ' তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান সাহিত্যকর্ম। এ গবেষণা 'শান তোং ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য সমৃদ্ধকরণ' গ্রন্থ রচনা ছাড়া ভবিষ্যতে তাঁর আরো ভালো লেখার জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে। শৈশবকালের প্রায় পুরোটা সময় চাং ওয়েই বনে কাটান। তাই তিনি প্রকৃতিকে চেনেন খুব ভালোভাবে। তিনি বলেন,
'মা-বাবার চাকরির কারণে ছোটবেলায় আমরা সমুদ্রের পাশে এক বনে বাস করতাম। তখন মানুষের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ খুব কম ছিলো। প্রতিদিন আমি প্রাণীর সঙ্গে থাকতাম। শৈশবকাল কাটানোর পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা আমার মূল্যবান সম্পদ। নিঃসঙ্গতা ও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবনের কারণে আমার সাহিত্যকর্ম একটু ভিন্নতর।'
কোনো জাঁকজমকপূর্ণ জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন না চাং ওয়েই। তিনি একজন শান্ত এবং নিজের প্রতি কঠোর লেখক। অধিকাংশ সময় তিনি বই পড়েন এবং উপন্যাস লেখেন। প্রকৃতি ও জীবনের প্রতি ভালোবাসায় চাং ওয়েইয়ের হৃদয় ভরপুর। তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির সরাসরি প্রশংসা করা হয়েছে। বিখ্যাত লেখক ছিউ সুন চাং ওয়েইয়ের মূল্যায়ন করেন এভাবে - 'চাং ওয়েই প্রকৃতির ছেলে। প্রকৃতি তাঁকে সবকিছু শিখিয়েছে'।
সতের বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস লেখার পর থেকে চাং ওয়েইয়ের সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি ঝরনার মতো বয়ে চলেছে। তাঁর সাহিত্যকর্ম দেশে-বিদেশে ৩০টিরও বেশি পুরস্কার অর্জন করেছে এবং ইংরেজি, ফরাসি, জাপানি ও কোরীয়সহ অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
চাং ওয়েই সাহিত্যকে তাঁর জীবন হিসেবে মনে করেন। তিনি প্রত্যেকটি ব্যাপার ও প্রত্যেকটি পণ্যের মধ্য থেকে শিল্প ও দর্শনের সুগভীর অনুভব অর্জন করতে পারেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতি, সমাজ এবং ভাব-মানস ও বস্তুর প্রতি তাঁর অনুসন্ধিত্সা দেখা যায়। চাং ওয়েই বই পড়তে পছন্দ করেন। দশ বছরে তিনি দেশি-বিদেশি অনেক বই পড়েছেন। একজন বিখ্যাত লেখক হিসেবে তিনি সময়কে মূল্য দেন। বই পড়া ও প্রবন্ধ লেখা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাপারে তিনি কোনো সময় দেন না। নিজের জীবন ও সৃষ্টির ধারণা প্রসঙ্গে চাং ওয়েই বলেন,
'আমি জীবনকে ভালোবাসি। পেশাগতভাবে একজন লেখক - এই পরিচয় আসলে আমি পছন্দ করি না। আমি মনে করি, সত্যিকার সাহিত্য সৃষ্টি করা অপেশাদার ব্যাপার। একজন লেখকের উচিত্ সক্রিয়ভাবে ও সাহিত্যের প্রতি মনোযোগ দিয়ে জীবন কাটানো এবং সমাজের ওপর দৃষ্টি রাখা। রচনা লেখার অনুপ্রেরণা অর্জন করলে যে কেউ প্রবন্ধ লিখতে পারেন।'
চাং ওয়েই বলেন, বর্তমানে তাঁর মন দ্বন্দ্বে ভরপুর। একদিকে তিনি আশা করেন, সক্রিয় ও আশাবাদী সঙ্গে জীবন কাটাবেন এবং রচনা লিখবেন। আবার অন্যদিকে বাস্তব জীবনে মনঃকষ্ট ও কঠিন্য থাকার কারণে তিনি যথেষ্ট আশা বোধ করতে পারেন না। তিনি মনে করেন, একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। তা হলো সাহিত্যকর্ম সমাজের স্থিতিশীলতা ও মানুষের মানসিক শান্তির সহায়ক হতে হবে। তাঁর সাতিহ্যকর্ম মানুষের মনে উষ্ণতা এনে দিতে পারবে এবং মানুষ হিসেবে মানুষের বড় হওয়ার পক্ষে সহায়ক হবে, এটিই চাং ওয়েইয়ের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা।
লিলি/ এসআর
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |