|
চিয়াং সিন চীনের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় শহর ছিং তাও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৬ বছর বয়সে তিনি বাবা মা'র সঙ্গে পেইচিংয়ে আসেন। ১৯৮৮ সালে তিনি পেইচিং ইকনোমিক ইন্সটিটিউটে হিসাব বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু হিসাবের প্রতি তাঁর কোন আগ্রহই ছিলনা। তাই তিনি সবসময় অবসর সময়ে গিটার বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে গান গাইতেন। এক আকস্মিক সুযোগে চিয়াং সিন অন্য কয়েকজন নৃত্যচঞ্চল শিল্পীর সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁদের প্রভাবে চিয়াং সিন নিয়মিতভাবে বিদেশী বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীও দিন দিন প্রশস্ত হয়ে উঠতে থাকে। ঠিক তখনই চিয়াং সিনের মনে স্কুল ত্যাগ করার বাসনা জেগে উঠে। তিনি তাঁর পছন্দের সঙ্গীত সৃষ্টি করতে চান। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের দ্বিতীয় বছরে চিয়াং সিন স্কুল পরিত্যাগ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি 'থিয়ান সিয়ে ওয়েন হুয়া' নামে একটি রেকর্ড প্লেয়ার কোম্পানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে একটি সত্যিকারের গায়িকা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে চিয়াং সিন তাঁর প্রথম ব্যক্তিগত এ্যালবাম প্রকাশ করেন। এটি হচ্ছে নৃত্যচঞ্চল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি এ্যালবাম। চিয়াং সিনের একটু নিম্ন ও ভারী কন্ঠস্বরে গাওয়া লোকসঙ্গীত ও নৃত্যচঞ্চল সঙ্গীত শুনতে একটু ভিন্ন রকম। তিনি এ রেকর্ডের তিনটি গানের কথা লিখেছেন। অনেক সঙ্গীত পর্যালোচক তাঁর এই অ্যালবাম নিয়ে এভাবে মূল্যায়ন করেন যে, তা হলো ৯০'র দশকে চীনের শ্রেষ্ঠ নৃত্যচঞ্চল অ্যালবামের মধ্যে অন্যতম একটি।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনার এখন যে গানটি শুনছেন তার নাম হলো 'ফুল ফুটে এবং তা কোনদিন মরে যাবে না'। গানের সুর ধীরলয়ের ও আবেগপূর্ণ। গানের কথা মর্মান্তিক কিন্তু সুন্দর প্রেমের দিকটি এতে বর্ণনা করা হয়েছে।
চিয়াং সিনের প্রথম অ্যালবামটিকেই তাঁর সঙ্গীতানুরাগীরা তাঁর নৃত্যচঞ্চল সঙ্গীত হিসেবে মনে করে। আসলে চিয়াং সিন মনে করেন, তাঁর সঙ্গীত ঐতিহ্যবাহী নৃত্যচঞ্চল সঙ্গীত নয়। অনেকে মনে করেন, নৃত্যচঞ্চল সঙ্গীত গাইতে চাইলে গাওয়ার সাথে সাথে হঠাত উচ্চস্বরে গাইতে হয় এবং মাঝে মাঝে মনে হবে যেন গিটারের তার ছিড়ে যাচ্ছে। কিন্তু চিয়াং সিনের মনে নৃত্যচঞ্চল সঙ্গীত এক ধরনের অনুভূতি, ঐতিহ্য ভেঙ্গে দেয়ার এক ধরনের সত্ সাহস।
২০০০ সালে চিয়াং সিনের ভালো বন্ধু ও সঙ্গীতজ্ঞ চু সিও মিন নিজের সঙ্গীত স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এ সঙ্গীত স্টুডিওতেই তিনি চিয়াং সিনের জন্য দ্বিতীয় অ্যালবাম 'মে মাস' তৈরী করেন। এ অ্যালবামের বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যময়। চিয়াং সিন অ্যালবামের সকল গানের কথা লিখেছেন। এ অ্যালবাসে চিয়াং সিনের গাওয়ার নৈপুণ্য আরো পরিপক্ক ও আত্মবিশ্বাসী সম্পন্ন।
আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হচ্ছে এই অ্যালবামের প্রধান গান 'মে মাস'। এতে তরুণ সময়ের সুন্দর প্রেমের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। গানের কথা হলো: মে মাসের একদিন সূর্যাস্তের সময় একটি ছেলে অবশেষে তার পছন্দের মেয়েকে তার মনের লুকানো কথা বলেছেন। সে সময় নিরবে ফুল ফুটছে। মেয়েটি মাথা নিচু করেছিল, একটি কথাও বলে নি। তারপর অনেক দিন চলে গেছে, তারপরও তাদের মনে সবচেয়ে স্মরণীয় ব্যক্তিটি হচ্ছে তরুণ সময়কালের তারা দু'জনই। সময়ের কারণে আমরা পরস্পর থেকে দূরদূরান্তে চলে এসেছি এবং হালকা হাসি দিয়ে সেদিনের সেই ছেলেটি বা মেয়েটিকেই যেন ডাকছি। আচ্ছা, এখন পুরো গানটি শোনা যাক।
২০০২ সালে চিয়াং সিন 'মো তেং থিয়ান খোং' নামে রেকর্ড কোম্পানিতে যোগ দেন। দু'বছরের পর তিনি নিজের তৃতীয় অ্যালবাম প্রকাশ করেন। আপনারা এখন যে গানটি শুনছেন তা হলো এ অ্যালবামের প্রধান গান 'নির্মল'। গানে চিয়াং সিন নিজেকে সূর্যমুখী ফুল হিসেবে বর্ণনা করেন। গানে স্বপ্নভরা অন্বেষণের জন্য নিজের প্রত্যয় দৃঢ় করে তোলার বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। এখন পুরো গানটি শোনা যাক।
২০০৭ সালে চিয়াং সিন 'আমি লৌকিকতাহীন ফুল নয়' নামে চতুর্থ অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এ অ্যালবামে চিয়াং সিন তার নৃত্যচঞ্চল সঙ্গীতে উত্তর ইউরোপের প্রচলিত সঙ্গীত ও ইলেক্ট্রোনিক সঙ্গীতসহ বহুমাত্রিক সঙ্গীত উপাদানের মিশ্রণ ঘটান। এ অ্যালবামে চিয়াং সিন তাঁর সবচেয়ে বাস্তব দৃষ্টভঙ্গী ও কন্ঠের সুন্দর ভাবানুভূতি ও নৃত্যচঞ্চলতার প্রতি নিজের দৃঢ় নিষ্ঠার দিকটি প্রকাশ করেন। আচ্ছা, এখন আমার সঙ্গে 'আমি লৌকিকতাহীন ফুল নই' এই গানটি শুনুন। চিয়াং সিন বলেন, এটি নিজের জন্য লেখা একটি গান।
চিয়াং সিন একজন শ্রেষ্ঠ গায়িকা হলেও সাহিত্য কর্মের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভা আছে। তিনি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ প্রকাশ করা ছাড়াও উপন্যাসও লিখেন। ২০১১ সালে তিনি 'লম্বা চুল উড়ে যাওয়ার দিন' নামে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। এটি আত্মজীবনী সংক্রান্ত একটি উপন্যাস। চিয়াং সিন বলেন, গান গাওয়া বা প্রবন্ধ লেখা তাঁর নিজেকে প্রকাশের একটি পদ্ধতি।
চিয়াং সিন সহজ গানের কথা ও সুরে প্রেম ও স্বপ্নকে রেকর্ড করেন এবং সঙ্গীতের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় তাঁর অনুরাগীরাও সুগভীরভাবে অভিভূত হয়ে পড়েন।
আজকের অনুষ্ঠানের শেষে আমরা একসঙ্গে চিয়াং সিনের গাওয়া আরেকটি গান শুনবো। গানে নাম হলো 'বসন্তকাল'। এ গানের সুর আনন্দদায়ক কিন্তু গানের কথা একটু বিষণ্ণ। গানে বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় মানুষের বেদনা ও আনন্দকে বর্ণনা করা হয়েছে। আচ্ছা, এখন গানটি শোনা যাক।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সুন্দর গান শোনার মধ্য দিয়ে আমাদের আজকের সাস্কৃতিক সম্ভার অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত থাকলে আমাদের অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের সবচেয়ে মূল্যবান মতামত আমাদের আগামী দিনের অনুষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধ ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলবে। আপনাদের সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।
আজকের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আমি আপনাদের বন্ধু লিলি। আবার ফিরে আসব আপনাদের কাছে আগামী সপ্তাহের একই সময়। যাই চিয়ান।
লিলি/আবাম
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |