|
পু আর চা হলো কালো চা'র মধ্যে অন্যতম একটি। তার উত্পাদনকারী স্থানের নাম হলো পু আর শহর বলে পু আর চা এই নাম দেয়া হয়েছে।
যুদ্ধ ও রোগসহ বিভিন্ন কারণে পু আর চা ছিং রাজবংশের শেষ দিকে কমে যায়। ১৯৯৩ সালে প্রথম পু আর চা দিবস অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পু আর চা আবার লোকের চোখের সামনে ফিরে এসেছে। ইউন নান প্রদেশের পু আর শহরের চা সমিতির মহাপরিচালক চু চি আন বলেন,
'নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছরের মধ্যে আমাদের দেশের খাওয়া পড়ার সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে নিরসন হতো না। তাই জনগণের চা খাওয়া অসম্ভব ছিল। ১৯৯৩ সালে আমরা প্রথম পু আর চা দিবস আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলাম। এর লক্ষ্য হলো পু আর চা'র সংস্কৃতিকে আবার সম্প্রসারণ করা। ২০০৫ সালে আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তত্পরতার আয়োজন করলাম। আমাদের পাঠানো ঘোড়ার বহর ৭টি প্রদেশ বা মহাসগরের ভেতর দিয়ে পাঁচ ও আধা মাস সময়ে পেইচিংয়ে পৌঁছায়। এবারের তত্পরতার মাধ্যমে সারা দেশের জনগণ পু আর চা'র কথা জেনেছেন। পু আর চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।'
পু আর চা'র ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। থাং রাজবংশে পু আর চা'র চাষ ব্যাপকভাবে শুরু হয় এবং পু আর চা এই নাম ডাকা হয়। ছিং রাজবংশে পু আর চা'র উন্নয়ন শীর্ষ সময়পর্বে প্রবেশ করে।
পু আর চা'র ব্যাপক পরিবহনের ফলে 'ছা মা কু তাও' নামে একটি সুবিখ্যাত পথ সৃষ্টি হয়। এ পথের মাধ্যমে পু আর চা দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে বিক্রী করা হয় এবং দূরদূরান্তের ভূটান, নেপাল, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া, জাপান, ফ্রান্স ও বৃটেনসহ বিদেশে বিক্রি করা হয়। ফলে পু আর চা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু আধুনিক যুগে চীনের চা উত্পাদন বন্ধ হওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে পু আর চা'র আন্তর্জাতিক প্রভাবও ধাপে ধাপে কমে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে পু আর চা আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পু আর চা'র আন্তর্জাতিক প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে মহাসচিব চু চি আন বলেন,
'পু আর চার আন্তর্জাতিক প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ আমরা প্রধানতঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পু আর চা রপ্তানি করি। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পু আর চা বিক্রি খুব কম।'
চু চি আন আরো বলেন, বর্তমানে পু আর চা রপ্তানির পরিমাণ বছরের বছর স্থিতিশীলভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার বেশি নয়। আগে পু আর চা হজমের জন্য সহায়ক হওয়া এক ধরনের ঔষুধ হিসেবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতো। বর্তমানে লোকেরা পু আর চা এক ধরনের পানীয় হিসেবে মনে করেন। আসলে চা বিশেষ করে পু আর চা ২১ শতাব্দীতে মানবজাতির একটি স্বাস্থ্যবান পানীয় হিসেবে নির্ধারণ করা উচিত্। কারণ পু আর চা'র বড় হওয়ার সবুজ ও দূষণহীন পরিবেশ এবং এর কয়েক হাজারের সুপ্রাচীন চা গাছের সম্পদ অন্যান্য চা'র চেয়ে অতুলনীয়।
পু আর চা নামে এক পত্রিকার উপ পরিচালক হুয়াং ইয়ান বলেন, পু আর চা'র স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষমতা হলো তার বিশ্বে জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ। তিনি বলেন,
'আমি মনে করি, পু আর চা বিদেশের বাজারে উন্নয়নের সুপ্ত শক্তি হলো তার স্বাস্থ্যরক্ষার ভূমিকা। এই ভূমিকা অবশ্যই জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।'
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউন নান প্রদেশ বিশেষ করে পু আর শহর পু আর চা'কে বিদেশে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চু চি আন বলেন,
'বলা যায়, এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ১৯৯৩ সালে প্রথম পু আর চা দিবস থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ১১বারের মতো এ দিবসের আয়োজন করেছি। প্রথম পু আর চা দিবস চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার চা বিশেষজ্ঞ পু আর চা সংক্রান্ত এই আন্তর্জাতিক বিদ্যাগত সেমিনারে অংশ নেন। আমরা ভারত, শ্রীলংকা ও কেনিয়াসহ চা উত্পাদনকারী দেশে গিয়ে তাদের উন্নত অভিজ্ঞতা গ্রহণও করি।'
২০১১ সালের ২২ এপ্রিল চীনের ইউন নান প্রদেশ পু আর চা সংক্রান্ত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক বিনিময় মেলা খুন মিং শহরে শুরু হয়। চীন ও বিদেশের দু'শটিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার প্রতিনিধি মেলায় অংশ নেন। ক্যানাডার চা সমিতির চেয়ারম্যান বলেন, ক্যানাডায় অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চা বাজার ধাপে ধাপে বৈচিত্র্যময় হয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে পু আর চা'র ক্যানাডায় বিশাল সুপ্ত শক্তি রয়েছে।
কিন্তু মহাসচিব চু চি আন আমাদের বলেন, পু আর চা'কে বিদেশে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে তারপরও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদের মধ্যে চা রপ্তানির বাণিজ্যিক বিধি-নিষেধ। তিনি বলেন,
'আমাদের চা রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রধানত বাণিজ্যিক বিধি-নিষেধ থাকে। যেমন, ইউরোপ ও জাপানের বাজার, তারা রপ্তানিকৃত খাদ্যের প্রতি পরীক্ষার মানদন্ড আমাদের চীনের চেয়ে উচ্চ মানের। ইউরোপের বাজারে আমাদের চা যেতে চাইলে তিন'শটিরও বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। কোন একটি পরীক্ষা পাস না হলে ইউরোপের বাজরে যেতে পারে না।'
এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে মহাসচিব চু চি আন রপ্তানিকৃত পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বাসী। তিনি বলেন,
'আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণের স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আমাদের পু আর চা'র গুণগত মান নিশ্চিত করা। মানসম্মতহীন পণ্যদ্রব্য নিয়ে বাজারে প্রবেশ করা যায় না।'
কোকো, কফি ও চা বর্তমানে বিশ্বের তিনটি পানীয় বলে মনে করা হয়। পানীয় বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষের যার যার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাছাই আছে। এ তিন ধরনের পানীয় চায়ের প্রথম হিসেবে স্বাদগ্রহণকারীদের জন্য সুগভীর সুগন্ধ বয়ে আনা ছাড়াও, প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের দৃষ্টিভঙ্গী বয়ে এনেছে। পু আর চা নামে পত্রিকার উপ-মহাপরিচালক হুয়াং ইয়ান বলেন,
'পু আর চা খাওয়ার প্রক্রিয়া হলো আধুনিক ও দ্রুত ছন্দময় সমাজে ধীর জীবন ও স্বাস্থ্যবান জীবনের জন্য বর্তমানকালের লোকজনের অন্বেষণ করা উচিত।'
লিলি/আবাম
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |