|
আসলে প্রত্যেক শহর এমন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যত ও ইতিহাসের ভারসাম্য গড়ে তুলতে হবে। পেইচিং একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
বর্তমানে 'স্বর্ণ ক্রোসিং' বলে পরিচিত পেইচিং বাণিজ্যিক এলাকার কেন্দ্রে এক একটি আধুনিক স্থাপত্য দাঁড়িয়ে আছে । হয়তো বর্তমানের তরুণ-তরুণীরা জানেন না, আগে এখানে পেইচিং সুইচ কারখানা ও পেইচিং প্রথম মেশিন টুল কারখানাসহ অনেক কারখানা ছিলো।
১৯৮১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পেইচিং প্রায় এক হাজারটি কারখানা ও কর্মশালা নির্মূল ও সংস্কার করে আসছে। এক একটি পেইচিং পৌর শিল্পের উন্নয়ন ও শহরায়নের প্রক্রিয়ায় রেকর্ড করা বিরাটাকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠান লুপ্ত যায় এবং বাণিজ্যিক বসতির বাড়িঘর দেখা দেয়। খুব কম শিল্প কারখানার ধ্বংসাবশেষ রিয়াল এস্টেটের উন্নয়নের হাত থেকে মুক্তি পায়। পেইচিং দ্বিতীয় তুলা বস্ত্র কারখানা হচ্ছে তাদের মধ্যে একটি। এ কারখানাটি নির্মূল করা হয়নি এবং নতুন করে সাজানো হয়েছে।
গত শতাব্দীর ৫০'দশকে প্রতিষ্ঠিত পেইচিং দ্বিতীয় তুলা বস্ত্র কারখানা হচ্ছে চীনে প্রথম স্বদেশের সাজ-সরঞ্জাম ব্যবহার করা বৃহত্তম তুলা বস্ত্র কারখানা।এটি হলো নয়া চীনে শিল্প নির্মাণের সূচনা। গত শতাব্দীর ৯০'দশকের পর রাজধানীর শিল্প কাঠামো সুবিন্যস্ত করার সাথে সাথে তুলা বস্ত্র কারখানার উত্পাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়ে ছিলো। কিন্তু পুরানো কর্মশালা কোথায় যাবে? এটা একটি সমস্যা। অনেক চিন্তার পর দ্বিতীয় তুলা বস্ত্র কোম্পানি এখানে ঐতিহাসিক স্মৃতি বজায় রাখার জন্য সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্প উদ্যান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যান হলো এই পুরানো কর্মশালায় জন্ম নেয়া নতুন জীবন, অর্থাত্ লাই চিন সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্প উদ্যান। এ উদ্যানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা লিউ চিয়ান বলেন,
'আমাদের পেইচিং শহরের স্মৃতি এবং দ্বিতীয় তুলা বস্ত্র কারখানার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থাপত্যের কাঠামো বজায় রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ মাত্রায় কারখানার আগেকার কাঠামো বজায় রেখে পুরানো কর্মশালায় সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্পের পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাই।'
জানা গেছে, লাই চিন সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্প উদ্যান প্রতিষ্ঠার শুরুতেই সম্পূর্ণটি ভাড়া করা হয়। এখানে ভাড়া করা অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই হলো সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্পের। কি কি এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে? ওয়াং খাই ফাং কর্ম স্টিউটিও'র প্রধান ডিজাইনার ওয়াং খাই ফাং বলেন,
'প্রথমে এখানে অনেক বিশালাকারে নতুন এবং পুরানো শিল্পের খুব ভালোভাবে সংমিশ্রণ ঘটানো হয়।'
শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে রাখা অধিকাংশ পুরানো কারখানার ভৌগলিক অবস্থা খুব ভালো এবং তাদের সুবিধাজনক পরিবহনও রয়েছে। তা ছাড়া, লোকেরা পুরানো কারখানায় অনেক বিশাল জায়গা ব্যবহার করে সার্বিকভাবে সংস্কার করতে পারেন। এটাই সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্প সংক্রান্ত পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় শক্তি।
পুরানো কারখানা ও স্থাপনা পুনঃব্যবহার করলে অপ্রয়োজনীয় অপচয় কমানো যাবে। তা জ্বালানী-সাশ্রয়ী শহর নির্মাণের দাবির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
শহরের স্মৃতি বজায় রাখা এবং জ্বালানী-সাশ্রয়ী শহর নির্মাণ করা শিল্প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপাদান নয়। সঠিকভাবে শিল্পের জ্বালানী ব্যবহার করা বিশাল অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতা বয়ে আনতে সক্ষম।
জানা গেছে, ২০১১ সালে লাই চিন সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্প উদ্যানে মোট ৬ কোটি ২০ লাখ ইউয়ান রেনমিনপি অর্জিত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঝে মাঝে এমন ধরনের কথা শোনা যায় যে, কয়েক বছর পেইচিং না আসলে তাকে চেনা যায় না। এই মূল্যায়ন এক দিকে পেইচিংয়ের দ্রুত উন্নয়নের স্বীকৃতি দেয়া, অন্য দিকে আমরা কল্পনা করতে পারি যে, পেইচিংয়ের উচ্চ স্থাপন্ থেকে নিচে দেখলে আমরা কী ভারী সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে বা এক একটি আধুনিক স্থাপত্যের বয়ে আনা ব্যবধান ও অচেনার সঙ্গে আলিঙ্গন করতে চাই?
পেইচিংয়ের মাটির মূল্য দিন দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর কারখানা পেইচিং থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব শিল্পের ধ্বংসাবশেষ ও ধ্বংসাবশেষের রেখে যাওয়া ইতিহাস ও স্মৃতি কিভাবে সংরক্ষণ করা যাবে এবং কিভাবে ব্যবহার করা যাবে, এটাই একটি বড় সমস্যা।
লিলি/শান্তা
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |