সম্প্প্রতি চান কুর শিল্পকর্মের এক প্রদর্শনী চীনের তা লিয়ানে আয়োজিত হয়েছে। চান কু সাহেব হচ্ছেন জাপানী বংশোদ্ভূত চীনা। প্রদর্শনীতে প্রায় এক'শরও বেশি শিল্পকর্মে পাশ্চাত্যের সঙ্গে চীনের বৈশিষ্ট মিশ্রিত স্টাইল এবং চমত্কার নৈপুণ্য দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা লাভ করেছে।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চান কু সাহেব নিজের একটি শিল্পকর্ম তা লিয়ান শহরের দাতব্য সমিতিকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। কয়েক লাখ ইউয়ান মূল্যের এই শিল্পকর্ম নিলামে বিক্রি করার পর সমস্ত টাকা দিয়ে তালিয়ানের দরিদ্র্য অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের জন্য একটি শিল্পকলা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এবারের তত্পরতার জন্য চান কু অনেক সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁর জন্য এটি কোন দান নয়, শুধুমাত্র এক দীর্ঘকালীন ইচ্ছার বাস্তবায়ন। তিনি বলেন,

'এটি আমার মনের একটি ইচ্ছা। আমি মনে করি, প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র্য ছেলেমেয়েদেরকে বেশি যত্ন ও সাহায্য করতে হবে। শিল্প সমাজ ও জনগণ থেকে এসেছে বলে সমাজ ও জনগণের কল্যাণ করতে হবে।'

১৯৬৩ সালে চান কু হারবিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা মারা যাওয়ার পর বাবা জাপানে ফিরে যাওয়ার আগে এক মাসেরও কম বয়সী চান কুকে চীনে রেখে যান। চীনা পালক পিতামাতার যত্নে চান কু দিনে দিনে বড় হন। চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রভাবে তিনি কলম ধরেন । ছবি আকাঁর অভিজ্ঞতা স্মৃতিচারণ করে চান কু বলেন,

'চার বছর বয়স থেকে আমি ছবি আঁকা শিখতে শুরু করি। তখন কৌতুকের বই দেখে ছবি আঁকতাম।'

ছবি আঁকার ক্ষেত্রে চান কু'র প্রতিভা ও আগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি শিল্পের এ পথ বেছে নিয়েছেন। ১৪ বছর বয়সে তিনি কেন্দ্রীয় চিত্রকলা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে চীনা চিত্রকলা বিভাগের মাস্টার্স ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি বৃটেনের ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে শুরু করেন । ১৯৯৭ সালে তালিয়ান শহরের সরকারের আমন্ত্রণে চান কু তালিয়ানে আসেন। তিনি এই সুন্দর ও আধুনিক শহরকে পছন্দ করে ফেলেন।

তিনি তালিয়ানে স্থায়ীভাবে দিন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আরো বেশি প্রেরণা লাভ করার জন্য চান কু অনেক পোষা প্রাণী পালন করেন। তিনি এসব পশুদের পছন্দ করেন। চান কু'র শিল্পকর্মে মাঝেমাঝে প্রাণী দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন,

'আমি পশুপালন করতে পছন্দ করি। আমি তাদেরকে বন্ধু বলে মনে করি।'

তালিয়ানে বাস করার ১০ বছর ধরে চান কু বরাবরই চীনা চিত্রকলার ঐতিহ্যবাহী নৈপুণ্য এবং পশ্চিমা ছবি আঁকার নৈপুণ্য নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সৃজনশীল শিল্পকলাকে নৈপুণ্যের সাথে একীভূত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। আসলে তিনি মনে করেন, তিনি নিজেই চীন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি শিল্পকর্ম। তিনি এমন ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্পকর্ম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। তাই চান কু'র শিল্পকর্মে বৈচিত্র্যময় স্টাইল দেখা যায়। তিনি বলেন,

'এখন আমার ছবি আঁকার স্টাইল বহু উপাদানসম্পন্ন। অনুরাগীরা আমার শিল্পকর্মগুলো উপভোগ করেন, হয়তো মনে করেন, এসব শিল্পকর্ম একজন ব্যক্তি আঁকেন নি। আসলে আমি মনে করি, একজন ভালো শিল্পী হিসেবে সময়ের আগে নিজের শৈলী গড়ে তোলা একটি ভালো ব্যাপার নয়। শিল্পীর শিল্পকর্ম বিশেষ একটি যুগের প্রকাশ। বিভিন্ন সময়ের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে সততা, দয়া ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়।'

চান কু'র শিল্পকর্মের প্রদর্শনী চীন ও জাপানের অনেক বিখ্যাত শিল্পীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে বহু দূর থেকে এসে তাঁর প্রদর্শনী উপভোগ করেছেন। চীনের বিখ্যাত হস্তলিপিকার ও শিল্পী হোং ছাও এভাবে তাঁর কর্মের মূল্যায়ন করেন যে,

'তাঁর শিল্পকর্ম অনেক ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি চীনা চিত্রকলার ধারা তাঁর তেলচিত্রে প্রকাশ করতে সক্ষম। এটি উল্লেখযোগ্য।'

চান কু'র শিল্পকর্ম অনেক আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের কাওয়াসাকি শহরের মেয়র তাঁর শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেছেন। অনেক লোক চান কু'র প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশ্র স্টাইলে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু চান কু'র জন্য চীনা চিত্রকলায় পশ্চিমা ছবির উপাদান রাখা বা তেলচিত্রে চীনা চিত্রকলার স্টাইল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি আশা করেন, নিজের তুলির মাধ্যমে পশু পাখি, তালিয়ান শহর, সংস্কৃতি, জন্মভূমি ও চীনের প্রতি তাঁর মনের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারবেন। তিনি বলেন,

'যদিও আমি জাপানী বংশোদ্ভূত একজন চীনা। কিন্তু আমি চীনে বড় হয়েছি। তাই আমি বরাবরই চীনকে আমার জন্মভূমি হিসেবে মনে করি। আমি চীনকে ভালোবাসি।'

হৃদয়ে ভালোবাসা আছে বলেই তিনি ছবি আঁকতে পারেন। চান কু'র প্রত্যেকটি শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে তাঁর অনুরাগীরা তাঁর মনের তীব্র ভালোবাসার কথা অনুধাবন করতে পারেন। তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে আরো বেশি যত্নের মধ্য দিয়ে জনগণ ও মাটির প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।

লিলি/শান্তা