|
১৮৮৯ সালে এসেনস্চিজ একটি ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন উকিল। ১৯১১ সালে তিনি ভিয়েনা চিত্রকলা কলেজে লেখাপড়া করেন। ফ্রান্সের ইম্প্রেশনিস্টসহ তখনকার প্রধান প্রধান শিল্পধারার প্রভাবে ২৩ বছর বয়সী এসেনস্চিজ প্যারিসে যান। তারপর তিনি বরাবর প্যারিসেই ছবি আঁকার কাজে ব্যপৃত থাকেন। ১৯৩৫ সালে এসেনস্চিজ ফ্রান্সের নাগরিক হন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দু'টি বিশ্বযুদ্ধকালে চিত্রকলা মহলের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্বকারী একজন। ল্যান্ডস্কেপ ও বিশেষ রং হচ্ছে তাঁর চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য।
চীনা দর্শকদের কাছে অস্ট্রিয়ার চিত্রকলা তেমন বিখ্যাত নয়। এসেনস্চিজ নামে এই শিল্পীর নামের সঙ্গে চীনা দর্শকরাও সুপরিচিত নয়। কিন্তু অস্ট্রিয়ার সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার গুদ্রুন হারদিমান পোলরোসের চোখে, এবারের চিত্রকলা প্রদর্শনী চীনকে একটি অন্যরকম অস্ট্রিয়ার পরিচয় পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। হারদিমান বলেন,
'এবারে চীনের কাছে আগের চেয়ে একটু ভিন্নতর বিষয় তুলে ধরতে চাই। আধুনিক শিল্প ছাড়াও আমরা নতুন নতুন বিষয় প্রদর্শন করতে চাই। আমি দেখি, এখন চীনের লোকেরা ঐতিহ্যের কাছে ফিরে আসছেন। আগের কালের বিষয় আবার এখনকার ফ্যাশনে পরিণত হচ্ছে।'
এবারে প্রদর্শিত ৭০টি চিত্রকলার মধ্যে অধিকাংশ হলো তৈলচিত্র। এসেনস্চিজের ভারী রংসম্পন্ন চিত্রকলার মধ্য দিয়ে দর্শকরা দক্ষিণ প্যারিসের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হন ।
এসেনস্চিজের চিত্রকলার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শান্ত ও সরল দৃষ্টভঙ্গী নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধি করা। তিনি তখনকার প্যারিসের ইম্প্রেশনিস্টসহ নতুন সম্প্রদায়ের ধারায় প্রভাবিত হয়ে নিজের ছবি আঁকার রীতি অন্বেষণ ও উদ্ভাবন করার প্রচেষ্টা চালান। চীনের আর্ট গ্যালারীর মহাপরিচালক ফাং তি আন সাহেব এসেনস্চিজের চিত্রকলার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন,
'এসেনস্চিজের চিত্রকলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো আধুনিক। তিনি তখনকার অনেক নতুন শৈল্পিক ধারনা সম্পর্কে জ্ঞানলাভের পর নিজের বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলেন। এবারের প্রদর্শনীতে তাঁর খুব গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকলা প্রদর্শিত হয়েছে। এসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে আমরা অস্ট্রিয়ার এই শিল্পীর শিল্পকর্ম সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারি। ফলে চীন ও অস্ট্রিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দিকটিও বেগবান করা যাবে।'
উল্লেখ্য, এবারের প্রদর্শনীর অধিকাংশ চিত্রকলা এসেনস্চিজের চিত্রকলা সংক্রান্ত বিশ্বের বৃহত্তম যাদুঘর থেকে এসেছে। এ যাদুঘরের মালিক জোসেফ স্চুজ সাহেব শিল্পকর্মের বাণিজ্যে ব্যপৃত থাকা একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমবারের মতো প্যারিসে গিয়ে একটি প্রদর্শনীতে এসেনস্চিজের ছবির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এবারে এসেনস্চিজের চিত্রকলা প্রথমবারের মতো চীনে প্রদর্শিত হয়। পেইচিংয়ে প্রদর্শন করতে পেরে স্চুজ সাহেব আনন্দ বোধ করেন। তিনি বলেন, পেইচিং তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি বলেন,
'বেঁচে থাকার সময় এসেনস্চিজ সাহেব ৭০'র দশকে এশিয়ার জাপানে দু'বারের মতো চিত্রকলার প্রদর্শনী করেন। প্রদর্শনী অনেক সফল হয়। তাঁর সব চিত্রকলা জাপানে বিক্রি করা হয়। আমি মনে করি, এসেনস্চিজের চিত্রকলা এশিয়ার সংস্কৃতির মর্মের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এবারে পেইচিংয়ের প্রদর্শনী হলো আমাদের প্রথমবারের মতো বিদেশে আয়োজিত খুব বিরাটাকারের প্রদর্শনী। স্বীকার করতেই হবে যে, পেইচিং বিশ্বের অন্যতম মহা নগরে পরিণত হয়েছে। পেইচিংয়ের রাস্তায় হাঁটলে এবং স্বচোখে এই শহর দেখলে বিশ্বের মহানগরের তত্পর্য অনুধাবন করা যায় ।'
শিল্পের কোন রাষ্ট্রীয় সীমান্তরেখা নেই। এসেনস্চিজের চিত্রকলা অনেক চীনা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাইওয়ানের হো শুন শুন তাঁর পছন্দের শিল্পকর্ম সম্পর্কে আমাদের ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন,
'আমি প্রথমে এসেনস্চিজের চিত্রকলার রংয়ে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। এসব চিত্রকলার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবিটি হলো একটি পাহাড়ের দৃশ্যের। ছবিতে আপনারা প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়ার শক্তি অনুধাবন করতে পারেন।'
এবারে এসেনস্চিজের চিত্রকলার প্রদর্শনীর মাধ্যমে চীনা দর্শকরা একজন অস্ট্রিয়ান শিল্পীর সারা জীবনের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও অস্ট্রিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু'দেশের শিল্পীরা পৃথকভাবে নানা ধরনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি করেন। চীনের আর্ট গ্যালারীর মহাপরিচালক ফাং তি আন বলেন, এমন ধরনের বিনিময় খুব তাত্পর্যপূর্ণ। তিনি বলেন,
'সাংস্কৃতিক বিনিময় হলো মনের বিনিময়ের প্রতিফলন। তাই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা পারস্পরিক সমঝোতা জোরদার করতে পারি। ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাবানুভূতি ও মনের বিনিময়ও বাড়ানো যাবে।'
লিলি/শান্তা
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |