|
উল্লেখিত ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অনেকে ইসলামিক সংস্কৃতির বিখ্যাত পন্ডিত হন। তাঁরা পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও পেইচিং ফরেন স্টাডিস ইউনিভার্সিটিতে আরবী ভাষা, সাহিত্য ও ইতিহাস সম্পর্কিত বিষয়ের পাঠদান শুরু করেন এবং চীনের আরবী ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা, মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের গবেষণাসহ বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়নের ভিত্তি স্থাপন করেন।
না চোং সাহেব হচ্ছেন চীনের আরবী শিক্ষাদান এবং আরব ও ইসলামিক সংস্কৃতির গবেষণার বিষেশজ্ঞ মহলে গ্রহণযোগ্য পথিকৃত্। না চোং ১৯০৯ সালে ইউন নান প্রদেশের থোং হাই জেলার হুই জাতির একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩১ সালের অক্টোবর মাসে ইউন নান প্রদেশের খুন মিং মিং তে মাধ্যমিক স্কুলের পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে তিনি মিশরে প্রথম দলের অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন হন। অধ্যায়নকালে তিনি শ্রেষ্ঠ ফলাফল পেয়ে স্নাতক ডিগ্রি পান। ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জন্মস্থানে ফিরে গিয়ে শিক্ষাদানের কাজ শুরু করেন।
দেশে ফিরে আসার পর তিনি যথাক্রমে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমানের নান চিং বিশ্ববিদ্যালয়, ইউন নান বিশ্ববিদ্যালয়, পেইচিং কূটনীতি ইন্সটিটিউট, পেইচিং ফরেন স্টাডিস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করেন। 'আরবী'সহ ধারাবাহিক শিক্ষা-উপকরণ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তিনি এ ধারাবাহিক শিক্ষা উপকরণের প্রধান সম্পাদক। তিনি আমন্ত্রিত হয়ে চীনের বিদগ্ধ সমাজ ও ইসলামিক মহলের প্রতিনিধিত্ব করে আলজেরিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও সৌদী আরব সফর করেন। অনেক দেশের নেতৃবৃন্দ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। তিনি চীন ও আরব দেশগুলোর বিনিময়ের দূত বলে পরিচিত।
পেইচিং ফরেন স্টাডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের উপ পরিচালক সুয়ে ছিং কুও না চোং সাহেবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেন। তিনি না চোং সাহেবের বিদ্যাগত মতাদর্শ ও সাফল্যের মূল্যায়নের সময় বলেন,
'তিনি একজন অকৃত্রিম মুসলমান, কিন্তু তাঁর সেই ধরনের রক্ষণশীল ও গোঁড়া ধর্মীয় ধারনা নেই। আরবের ইসলামিক বিশ্ব ও চীনের মুসলমানের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি খুব স্পষ্ট জানেন। তা ছাড়া, আরবীর ইতিহাস ও ইসলামিক সংস্কৃতি গবেষণার ক্ষেত্রে না চোং চীনে একজন প্রথম শ্রেণীর পন্ডিত।'
দেশে ফিরে আসার পর না চোং শিক্ষাদান করার সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার কাজে লিপ্ত থাকেন। তিনি দশ বারোটি বই, অনুবাদ ও শিক্ষা-উপকরণ প্রকাশ করেন। এর মধ্যে 'আরবের ইতিহাস' নামে বইয়ের মোট ৮ লাখেরও বেশি অক্ষর আছে। এ বইকে চীনা পন্ডিতদের আরব ইতিহাস নিয়ে গবেষণার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম বলে মনে করা হয়। তিনি ইসলামিক সংস্কৃতি প্রসঙ্গে চীনা মুসলমানসহ চীনাদের জানাশোনা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছেন।
লিউ হুই নামে চীনের বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়ের আরবী ভাষার উপ-সম্পাদক। তিনি তখনকার মিশরে অধ্যয়নরত একজন ছাত্রের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে তিনি না চোং সাহেবের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। না চোং সাহবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন,
'কয়েক বছরের মধ্যে ইসলামিক সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অন্বেষণ আমাদের জন্য খুব ভালো আদর্শ সৃষ্টি করে। না চোংসহ তাঁদের প্রজন্মের প্রচেষ্টা না থাকলে চীনের আরবী শিক্ষার কাজ আজ এ পর্যায়ে আসত না এবং আরব দেশের সঙ্গে চীনের ব্যাপক যোগাযোগ ও আদান-প্রদান থাকতো না।'
না চোংয়ের ছেলে না চিয়া রুইয়ের চোখে বাবা একজন বেশ ঘরোয়া লোক। না চিয়া রুই বলেন,
রেকর্ড ৫—
'বাড়িতে বাবা একজন ঘরোয়া লোক। ছোটবেলায় বাবা আমার প্রতি চীনা ভাষার ক্লাসে শিক্ষাদান করা প্রত্যেক পুরানো কবি মুখস্থ করার অনুরোধ করতেন। তিনি বললেন, কয়েক'শ কবিতা মুখস্থ করতে পারলে সারা জীবনে উপকৃত হবে।'
না চোং সাহেব তাঁরা সারা জীবনে গবেষণা, অনুবাদ ও লেখার কাজ করেছেন। 'আরব ইতিহাস' বই তাঁর ৮০ বছরেরও বেশি বয়সে প্রকাশিত হয়। তাঁর জীবনের শেষ কয়েক বছরে না চোং সাহেব দুর্ভাগ্যজনকভাবে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মাঝে মাঝে তাঁর ছেলেকে চিনতে পারতেন না তা সত্ত্বেও, সবসময় কুরআন মুখস্থ বলতে পারতেন। ২০০১ সালের ২৫ অক্টোবর মাসে ৯৩ বছর বয়সী না চোং সাহেব ইউনেস্কোর সারজাহ আরবী সাংস্কৃতিক পুরস্কার পান। যারা আরব দেশের লোক নয় তাদের মধ্যে না চোং হচ্ছেন এই আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক পুরস্কার পাওয়া প্রথম ব্যক্তি।
না চোং এবং তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের এক একজন পন্ডিতের প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রাচ্য সংস্কৃতি ও ইসলামিক সংস্কৃতির মধ্যে বিনিময় ও সংমিশ্রণের একটি সেতু স্থাপন করা হয়। সেতুর এক দিক চীনের ইউন নান ও কুই চৌ পার্বত্য এলাকায় এবং অন্য দিক আফ্রিকায় বিশ্বের দীর্ঘতম নদী, অথাত্ নীল নদে।
লিলি
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |