|
এ বছর হচ্ছে তিব্বতের শান্তি মুক্ত হওয়ার ৬০তম বার্ষিকী। ৬০ বছর ধরে তিব্বতের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে চীন সরকার ব্যাপক ভৌত,অর্থ ও মানব সম্পদ প্রদান করেছে। এর মধ্যে তিব্বতী ভাষার উত্তরাধিকার বহণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাফল্য লক্ষণীয়। তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বতী ভাষা সাহিত্য ও তিব্বতী ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয় ইতোমধ্যেই চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রথম দফা স্নাতক পাঠ্যক্রমের প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তিব্বতী ভাষা সাহিত্য ও অন্যান্য প্রধান বিষয় সংক্রান্ত শিক্ষাদান দল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রথম দফা শিক্ষাদান দলের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছে । তিব্বতী ভাষা সাহিত্য ইতোমধ্যেই তিব্বতের প্রথম দফা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে' পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের বেতারের একজন সংবাদদাতা তিব্বতী ভাষার উত্তরাধিকার বহণ ও রক্ষা সম্পর্কে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফেং সিং ছিংএর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। বন্ধুরা, আজকের সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।
তিব্বতী ভাষা হচ্ছে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রচলিত ভাষা। তিব্বতী জাতির জনগণের যোগাযোগের উপায় ও তথ্য বাহক হিসেবে তিব্বতী ভাষা তিব্বতী জাতির ইতিহাস ও সভ্যতা বহণ করেছে। যাকে চীনা জাতির বহুমুখী সাংস্কৃতিক ভান্ডারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হয়। আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ায় চীন সরকার তিব্বতী ভাষা রক্ষার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষা সাহিত্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা ফেং সিং ছি তিব্বতের গঠনমূলককাজে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনিও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তিব্বতী ভাষা কমিটির কার্যালয় ও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অনুবাদ ব্যুরোতে কাজ করেছেন। তিনি বলেন:
"তিব্বতী ভাষার ইতিহাস এক হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন । সংস্কৃতি ও সভ্যতাও প্রাচীন। এর ভেতরেও অনেক মূল্যবান উপাদান রয়েছে। তিব্বতী ভাষা আমাদের সমগ্র চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি আমরা এই উত্তরাধিকার বহণ ও রক্ষণ না করি , তাহলে ভবিষ্যতে নিশ্চয় বিশাল ক্ষতি হবে"।
ফেং সিন ছি আরো বলেন, পঞ্চম আদমশুমারি থেকে জানা গেছে, তিব্বতের মোট লোকসংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। এর মধ্যে ৯২ শতাংশেরও বেশি হচ্ছেন তিব্বতী জনগণ , অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতি ও হান জাতির লোকসংখ্যা শুধু ৭ ও ৮ শতাংশ। সুতরাং, তিব্বতী ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্র বেশ বড় ।
তিব্বতী ভাষা রক্ষা করতে হলে প্রথমে তিব্বতী ভাষায় শিক্ষা গ্রহণকে জনপ্রিয় করে তোলা উচিত। ১৯৫৯ সালের আগে তিব্বতে শুধু ধনী মানুষরাই তিব্বতী ভাষা শিখতে পারতেন। ব্যাপক জন সাধারণের তিব্বতী ভাষা শেখার অধিকার এখনকার মতো ছিল না। তখন তিব্বতে নিরক্ষরতার হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি ছিল। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর জনসাধারণ তিব্বতী ভাষা শেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিব্বতীদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রও অব্যাহতভাবে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ৬বছরব্যাপী বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৩টি জেলায় সর্বপ্রথম ৯বছরব্যাপী বাধ্যতামূলক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হয়। এখন স্কুলগামী ছেলেমেয়ের ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়ের ভর্তির হার ৯০ শতাংশের বেশি। তিব্বতের শিক্ষাদানের অবস্থা সম্পর্কিত আলোচনায় ফেং সিং ছি বলেন:
" বর্তমান তিব্বতে ৬টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে তিব্বতী ভাষা এক আবশ্যকীয় পাঠ্য বিষয় । সুতরাং, আমি মনে করি, শিক্ষা ক্ষেত্রে তিব্বতী ভাষা শেখা বিশেষ করে তার উত্তরাধিকার বহণ ও সংরক্ষণ তিব্বতী জনসাধারণের চাহিদা পূরণ করতে পারছে"।
বাধ্যতামূলক শিক্ষা তিব্বতে জনপ্রিয় করে তোলার ফলে কেবল যে নিরক্ষরতার হার স্পষ্টভাবে কমেছে তা নয়, তা তিব্বতী ভাষায় প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও ফলপ্রসূ হয়েছে। বর্তমানে তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় জাতি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয় এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অনুবাদ ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিট সব তিব্বতী ভাষা অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের কাজ করছে। তিব্বতী ভাষাভাষী মহলেও বাস্তব অভিজ্ঞতা বেশি আছে এমন বিশেষ প্রযুক্তিবিদ রয়েছেন। এ সম্পর্কে ফেং সিং ছি বলেন:
"আমাদের অনেক জাতিগত বিদ্যালয় বিশেষ করে কেন্দ্রীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিব্বতী ভাষা প্রধান বিষয় হিসাবে রয়েছে। এর মধ্যে অনুবাদ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক প্রযুক্তিবিদকে লালন-পালন করেছে"।
তিব্বতী ভাষা আধুনিকীকরণের চাহিদা পূরণের জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্ব ও ব্যাপক সহায়তা দেয়ায় তিব্বতী ভাষার নীতিমালা প্রণয়নের কাজ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এটি তিব্বতী ভাষার কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির মানদন্ড বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের যৌথ প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্পর্কে ফেং সিং ছি বলেন:
" তথ্যায়ন ক্ষেত্রে তিব্বতী ভাষা কেন্দ্রীয় সরকারের যত্ন ও সহায়তার ফসল। অবশ্যয় এটিও সংশ্লিষ্ট প্রদেশ ও শহরের যৌথ সহায়তা পেয়েছে। ২০০০ সালে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিশেষ করে তথ্য শিল্প মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা দিয়েছে"।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহায়তায় তিব্বতে তিব্বতী ভাষার কিছু সোফটওয়্যার উন্নয়ন করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ সব সোফটওয়্যার আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে। বর্তমান তা ব্যবহৃত হচ্ছে। --ওয়াং হাইমান/শান্তা
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |