|
কুচেং হলো প্রাচ্য বাদ্যযন্ত্রের প্রতীক। বাইরে থেকে তার অবয়ব রুচিশীল, রং জমকালো এবং ধ্বনিমুদ্রা নমনীয় ও শান্ত। তার ধ্বনিমুদ্রা আর হুর মতো বেদনাময় এবং বাঁশির মতো উচ্চ ও চড়া নয়। কুচেং'র ধ্বনিমুদ্রা শান্ত কিংবা একঘেঁয়ে নয়। তাঁর ধ্বনিমুদ্রায় এক ধরনের সম্প্রীতিমূলক সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত কুচেংয়ের ধ্বনিমুদ্রা অসংখ্য দেশি-বিদেশী শ্রোতাদের মন জয় করেছে। আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনুষ্ঠানে আমি চীনের আধুনিক বিখ্যাত কুচেং বাদক ওয়াং চোং শানের সঙ্গে প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হলো 'ই জাতির নৃত্য সঙ্গীত' নামে ওয়াং চোং শানের বাজানো একটি সঙ্গীত।
ওয়াং চোং শানের জন্মস্থান হলো হো নান প্রদেশের নান ইয়াং। ছোটবেলা থেকে তিনি কুচেং শিখতে শুরু করেন। যথাক্রমে তিনি দশ বারো জন লোক শিল্পীর কাছে জ্ঞান লাভ করেন। তাই তিনি কুচেং বাজানোতে দক্ষতা অর্জন করেছেন। অল্প বয়সেই সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার পরিচয় মেলে । তারপর তিনি নানইয়াং শিল্প স্কুলে ভর্তি হন এবং বিখ্যাত কুচেং শিল্পী চাও মানছিনের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৯৮৬ সালে ওয়াং চোং শান নতুন নৈপুণ্য দিয়ে 'পাহাড়ে বাঘ হত্যা করা' শিরোনামে একটি সঙ্গীত বাজিয়ে চীনের প্রথম কুচেং বিদ্যাগত বিনিময় সমিতির মধ্যে আলোড়ন তোলেন। ১৯৮৮ সালে ওয়াং চোং শান চীনের সঙ্গীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন এবং বিখ্যাত কুচেং শিল্পী উপ-অধ্যাপক লি ওয়ান ফেনের কাছে শিখেন। আমাদের বেতারের সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ওয়াং চোং শান তাঁর চোখে কুচেংকে ব্যাখ্যা করে, বলেন,
'আমি মনে করি, কুচেং খুব আকর্ষণীয়। কুচেং নিয়ে আমি সংক্ষিপ্ত সারসংকলন করেছি যে, তিনটি ক্ষেত্রে এটি ভালো। দেখতে সুন্দর, শুনতে শ্রুতিমধুর এবং শিখতে সহজ।'
সুপ্রাচীনকালের একটি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে কুচেংয়ের আকার আধুনিক জনগণের সৌন্দর্য রুচির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
কুচেংয়ের ধ্বনিমুদ্রা শান্ত ও সম্প্রীতিমূলক। ওয়াং চোং শান কুচেংয়ের মধুর ধ্বনিমুদ্রাতে আকৃষ্ট হয়ে কুচেং বাজানো শিখতে শুরু করেন। তিনি বলেন,
'আমি ১৯৭৪ সালে কুচেং বাজাতে শুরু করি। তখন চীনের সংস্কৃতি বিপ্লবের শেষ সময়। আমার বাবা বাইরে অন্যান্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য আমাকে এবং আমার দু'জন বড় ভাইকে বাদ্যযন্ত্র শিখতে ভর্তি করিয়ে দিলেন। প্রথমে আমি শিখতে চাইলাম না। কিন্তু আমার শিক্ষক কুচেং নিয়ে আমার পরিবারে একটুকু সঙ্গীত বাজানোর পর আমি অবিলম্বে কুচেং বাজাতে আগ্রহী হয়ে উঠলাম।'
আর হু ও ফিপাসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রের তুলনায় কুচেং বাজানোর আগে সুর বাঁধতে হবে। বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার সুর বাঁধার দরকার নেই। তাই সহজে শেখা যায়। কিন্তু ভালোভাবে কুচেং বাজানো সহজ নয়। ঐতিহ্যবাহী কুচেং সঙ্গীত বা জটিল নৈপুণ্যসম্পন্ন আধুনিক কুচেং সঙ্গীত ওয়াং চোং শান ভালোভাবে বাজাতে পারেন। মঞ্চের পিছনে তিনি অনেক পরিশ্রম করেছেন।
১৭ বছর বয়সে ওয়াং চোং শান 'ই জাতির নৃত্য সঙ্গীত' রিমেক করেছেন। হাতের অঙ্গুলি দিয়ে বাজানোর নৈপুণ্যে তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন।
তাঁর নতুন নৈপুণ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
'এই সঙ্গীতের নাম হলো ই জাতির নৃত্য সঙ্গীত। আসলে এটি ফিপার একক বাদ্যযন্ত্র পরিবেশিত সঙ্গীত। ওয়াং হুই রান এই সঙ্গীত সৃষ্টি করেন। আমার ১৭ বছর বয়সে কাকতালীয়ভাবে আমি এই সঙ্গীত কর্ম রিমেক করেছি। বিশেষ করে কুচেংয়ের বাজানোর নৈপুণ্য ক্ষেত্রে আমি গিটারের প্রযুক্তি গ্রহণ করেছি। আমার আগে কোন মানুষ এই প্রযুক্তি দিয়ে বাজান নি।'
ওয়াং চোং শানের এই ছোট উদ্ভাবন কুচেংয়ের অভিব্যক্তি বৈচিত্রময় করে তুলেছেন।
ওয়াং চোং শান জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সংগীত পরিবেশন করেছেন এবং হংকংয়ে কুচেংয়ের একক কন্সার্টের আয়োজন করেছেন। এসব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি স্পষ্টভাবেই অনুধাবন করেছেন যে, সঙ্গীতের কোনো রাষ্ট্রীয় সীমারেখা নেই। বিভিন্ন দেশের সঙ্গীতজ্ঞদের মিল রয়েছে। তাঁদের সৃষ্ট শিল্পকর্ম যার যার মনের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। সর্বশেষে ওয়াং চোং শান তাঁর প্রতিনিধিত্বকারী একটি সঙ্গীত নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।
'এই সঙ্গীতে বর্ণনা করা বিষয় হলো আমার কল্পনায় ইউন লিং অঞ্চলের দৃশ্য। আসলে আমি এই সঙ্গীত সৃষ্টি করার সময় ইউ লিং যাই নি। আমি সেই জায়গায় যেতে আগ্রহী বলে এই সঙ্গীত সৃষ্টি করেছি। সঙ্গীতে ইউ লিংয়ের সুন্দর দৃশ্য এবং স্থানীয় তরুণ-তরুনীদের গান গাওয়ার দৃশ্য ফুটিয়ে তলো হয়েছে'
লিলি/শান্তা
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |