|
আপনার এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হলো চাও হান ইয়াংয়ের পরিবেশিত আ হু সঙ্গীত 'দক্ষিণ চীনের বসন্তকালের দৃশ্য'। সঙ্গীত শুনে মনে হয় লোকেরা যেন সুন্দর এবং বৈচিত্রপূর্ণ দক্ষিণ চীনে এসেছেন।
চাও হান ইয়াং ১৯৫৪ সালে চিয়াং সু প্রদেশের একটি শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চিয়াং সু হলো চীনের বিখ্যাত আ হু'র জন্মস্থান। বিখ্যাত আ হু বাদক লিউ থিয়ান হুয়া এবং বিখ্যাত আ হু সঙ্গীত 'আর ছুয়ান ইং ইউয়ে'র রচয়িতা আ বিং এখানে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থানের সুগভীর লোকসঙ্গীতের পরিবেশ চাও হান ইয়াংয়ের বড় হওয়ার পথে ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তিনি সেই কথা মনে করে বলেন,
'আমার জন্মস্থানে আ হু শেখা লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। ছোটবেলা থেকে আমরা সি অপেরা ও হু অপেরাসহ আঞ্চলিক অপেরা শুনতাম। এসব অপেরা আ হু'র সঙ্গে পরিবেশিত হয়।'
সঙ্গীত অনুরাগী বাবার কাছ থেকে শিখে চাও হান ইয়াং মাউথঅর্গান বাজাতে পারেন। তিনি যথাক্রমে ফি পা, সান সিয়ান ও বেহালা বাজাতে শিখেছেন। কিন্তু অবশেষে কোন শিক্ষককে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন। তখন চাও হান ইয়াংয়ের একজন প্রতিবেশী আ হু বাজাতে পারেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, সঙ্গীত ক্ষেত্রে চাও হান ইয়াংয়ের প্রতিভা রয়েছে। তাই নিজ উদ্যোগে তাঁকে আ হু শিক্ষাদানের প্রস্তাব দেন। তারপর আ হুর সঙ্গে চাও হান ইয়াংয়ের গভীর সম্পর্ক স্থাপন শুরু হয়।
আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হলো চাও হান ইয়াংয়ের সৃষ্ট আ হু সঙ্গীত 'জন্মস্থানের কন্ঠস্বর'। এই শ্রুতিমধুর সঙ্গীতে জন্মস্থানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও অসীম অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে।
চাও হান ইয়াং বলেন, তাঁর আ হু শেখার প্রক্রিয়ায় অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে । আ হু বাজানোর পদ্ধতি পরিবর্তন করা হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তা তখনকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাদানের সঙ্গে সম্পর্কিত। চাও হান ইয়াং বলেন
'তখন আমার শিক্ষক একবার বাজাতেন, তারপর আমি একবার বাজাতাম। তখনকার শিক্ষাদান ছিল একটু আদিকালের। শিক্ষক সম্ভবতঃ বেশি তত্ত্ব বলতে পারতেন না। আমরা শিক্ষকের মতো বাজাতে পারতাম। কিন্তু কেন এভাবে বাজানো যায় আমরা স্পষ্টভাবে জানতাম না।'
আ হু'র প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কারণে চাও হান ইয়াং অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আ হু শেখার পথে অব্যাহতভাবে এগিয়ে যান। ১৯৭৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ ফলাফল দিয়ে চীনের কেন্দ্রীয় সঙ্গীত ইন্সটিটিউটের লোকসঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি স্কুলে একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি অনেক ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
ক্যাপিটাল নর্মাল ইউনির্ভাসিটির বাদ্যযন্ত্র বিভাগের আ হু শিক্ষক ইউ ছুয়ান ছোটবেলা থেকে চাও হান ইয়াংয়ের কাছে আ হু শিখতে শুরু করেন। এখন তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় শ্রেষ্ঠ তরুণ আ হু বাদক।
চাও হান ইয়াং বিশ্বের অনেক দেশ বা অঞ্চল সফর করে পরিবেশনা করেছেন বা বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি আ হু সম্পর্কিত মোট ৪৭টি শিক্ষা-উপকরণ এবং ৮০টিরও বেশি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং অনেক সি ডি বা ডি ভি ডি রেকর্ড করেছেন। আ হু'র শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিনি অনেক অবদান রেখেছেন।
আ হু বাদক এই খেতাবের চেয়ে তিনি আ হু শিক্ষাবিদ এই খেতাব আরো পছন্দ করেন। ছোটবেলায় তাঁর আ হু শেখার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি গভীরভাবে তত্ত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি বলেন,
'তখন আমি প্রতিদিন ৬ বা ৮ ঘন্টা ধরে আ হু বাজাতাম। তারপর আ হু সম্পর্কিত কাজ করার পর থেকে আমি আবিষ্কার করেছি যে, অনেক বাধা আসলে এড়ানো যায়। তাই ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা এড়ানোর জন্য আমি সবসময় আ হু শিক্ষাদানের গবেষণা করে আসছি।'
চাও হান ইয়াংয়ের সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় শিক্ষাদানের ফলাফল হলো গত শতাব্দীর নব্বই দশকে তাঁর নিজ উদ্যোগে রেকর্ড করা টিভি শিক্ষাদান ফিল্ম 'শিশুদের আ হু শেখা'। এটি হলো চীনের প্রথম আ হু শিক্ষাদান অনুষ্ঠান। তা আ হু'কে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,
'টিভি শিক্ষাদান ফিল্ম টিভি বেতারে প্রচারের পর আ হু শেখা লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখন পর্যন্ত আমার অনেক ছাত্রছাত্রী আমাকে বলেন, তারা তখন এই টিভি শিক্ষাদান ফিল্ম দেখার পর আ হু শিখতে শুরু করেন।'
চাও হান ইয়াংয়ের ছাত্র ইউন ছুয়ান এই শিক্ষাদান ফিল্মের রেকর্ডের কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন,
'এই ফিল্মে তখনকার শিশুদের সুপরিচিত গান নিয়ে শিক্ষা-উপকরণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। তাই আমি মনে করি, এটি হলো প্রণালীবদ্ধ, বিজ্ঞানসম্মত, পেশাগত ও সহজ শিক্ষা-উপকরণ।'
শিক্ষাদান ও বিজ্ঞানসম্মত কার্যক্রম চালানোর সঙ্গে সঙ্গে আ হু জনপ্রিয় করে তোলার জন্য চাও হান ইয়াং অনেক শিক্ষা-উপকরণ সৃষ্টি করেছেন, যেমন 'আ হু দিয়ে বাজানো ২০০টি চীনের লোকসঙ্গীত' এবং 'আ হু দিয়ে বাজানো বিশ্বের একশটি বিখ্যাত সঙ্গীত' প্রভৃতি। এই শিক্ষা-উপকরণ আ হু অনুরাগীদের জন্য শিল্প পথে যাওয়ার সেতু স্থাপন করেছে।
লিলি/শান্তা
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |