|
লেসলি হাওয়ার্ড ১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্ডারগার্টেন সঙ্গীত ক্ষেত্রেই তার অতিরিক্ত প্রতিভা দেখা দিয়েছিলো। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক পিয়ানো বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদেরকে গান গাওয়া শিক্ষাদানের সময় লেসলি হাওয়ার্ড মনে করলেন, শিক্ষকের বাম হাত দিয়ে বাজানো প্রসঙ্গ এবং ডান হাত দিয়ে বাজানোর প্রধান সুর একেবারে সম্প্রীতিমূলক ছিলো না। তাই তখন মাত্র দু'বছর বয়সী লেসলি হাওয়ার্ড নিজেই শিক্ষকের বদলে পিয়ানো বাজালেন।
'আমি মনে করছিলাম যে, তিনি পিয়ানো বাজাতে পারতেন না। তাই আমি কানের মাধ্যমে সঠিক সুর বাজিয়েছিলাম। তখন থেকে শিক্ষক সবসময় আমাকে পিয়ানো বাজানোর জন্য ডাকতেন। আমি মনে করি, আপনি মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলে অধিকাংশ লোকজন কানের মাধ্যমে যে সঙ্গীত শুনছেন তা পিয়ানোতে বাজাতে পারেন।'
লেসলি হাওয়ার্ড ১৯৭২ সালে লন্ডনে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুদীর্ঘ ইতিহাস সম্পন্ন লিত্জার সমিতি, অর্থাত্ বৃটেন লিত্জা সমিতির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত ২৩ বছর পার হয়ে গেছে। তাই লিত্জার সঙ্গীত পরিবেশানা ও গবেষণার ক্ষেত্রে লেসলি হাওয়ার্ডের নিরুংকুশ প্রভাব রয়েছে। এবারের একক কন্সার্টের সঙ্গীতগুলো লেসলি হাওয়ার্ড বিশেষভাবে বেছে নিয়েছেন। তার মধ্যে রোমান্সেরো এসপাগনোল' নামের একটি সঙ্গীত প্রসঙ্গে লেসলি হাওয়ার্ড বলেন,
'এ সঙ্গীত আগে কখনও প্রকাশ করা হয়নি। লিত্জার রোমান্সেরো এসপাগনোল নামে সঙ্গীতের অংশসমূহসহ অন্যান্য সঙ্গীতের পান্ডুলিপি নিয়ে জার্মানীর একটি ছোট শহর উয়েইমারে প্রকাশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপরও তিনি এসব সঙ্গীতকর্ম প্রকাশ করেন নি। তাই এই সঙ্গীত ২০০৯ সালে লন্ডন লিত্জা সমিতির উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়।'
লেসলি হাওয়ার্ড তাঁর সমৃদ্ধ উদ্দীপনা ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে লিত্জা সঙ্গীতকর্ম প্রচার করে আসছেন। এবারে তিনি তাঁর বিশেষভাবে বেছে নেয়া লিত্জার সঙ্গীতকর্ম নিয়ে চীনে এসে চীনা দর্শকদেরকে নতুন অনুভূতি এনে দিতে ইচ্ছুক। লেসলি হাওয়ার্ড বলেন,
'আমি মনে করি, ফ্যান্টাসি অন থিমস ফ্রম মোজার্ট নামে সঙ্গীত চীনে কখনও পরিবেশিত হয়নি। আমি খুব নিশ্চিত যে, রোমান্সেরো এসপাগনোল' নামে সঙ্গীতও চীনে কখনও পরিবেশিত হয়নি। আমি বরাবরই দর্শকশ্রোতাদেরকে নতুন সঙ্গীত বাজাতে চাই। লিত্জা সারা জীবনে তিনি মোট ১৪০০টিরও বেশি পিয়ানো কর্ম করেছেন। ছাত্রছাত্রীরা যারা পিয়ানো বাজাতে শিখেন তারা সবচেয়ে বেশি ২০টি সঙ্গীত কর্ম বাজাতে পারেন। আমি আশা করি, শ্রোতারা আরো বেশি ভালো সঙ্গীত শুনতে পারবেন।'
লেসলি হাওয়ার্ড রেকর্ডের ইতিহাসে একটি অমর সাফল্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ৯৯টি সিডিতে ৭২২৫ মিনিটের লিত্জার সকল পিয়ানো কর্ম রেকর্ড করেছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই লেসলি হাওয়ার্ড লিত্জার পান্ডলিপি অনুযায়ী পরিবেশিত হয়। লেসলি হাওয়ার্ড এই বিশাল প্রকল্পের মাধ্যমে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস সৃষ্টি করেন। হাংগেরির প্রেসিডেন্ট এ জন্য লেসলি হাওয়ার্ডকে পদক, অর্থাত্ হাংগেরির সংস্কৃতিকে সমর্থনের পুরস্কার প্রদান করেছেন। লিত্জার সঙ্গীত সংগ্রহ ও রেকর্ড করার কারণ প্রসঙ্গে লেসলি হাওয়ার্ড বলেন,
'প্রথমে আমি তাঁর সঙ্গীত পছন্দ করি। সুযোগ পেয়ে লিত্জার সঙ্গীত সংগ্রহ ও রেকর্ড করতে থাকি। আমি এই কাজ ভালোভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আগে তিন জিন সঙ্গীতজ্ঞ লিত্জার সঙ্গীত সংগ্রহ রেকর্ড করতে চেয়েছেন। কিন্তু রেকর্ডের প্রক্রিয়ায় সঙ্গীতজ্ঞ বা সিডি কোম্পানি অর্ধেক পথে এসে ছেড়ে দিয়েছে। কারণ গোটা রেকর্ড প্রক্রিয়া সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু আমি মনে করি, কোন একজন লিত্জার সকল সঙ্গীত কর্ম বিশ্বের লোকজনের কাছে পরিচিয় করিয়ে দেবেন। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।'
লেসলি হাওয়ার্ড মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বদেশের সঙ্গীতজ্ঞদের সঙ্গীত কর্ম সুরক্ষা ও তাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে হাংগেরি অনেক তাত্পর্যসম্পন্ন কাজ করে আসছে। যেমন, গত ৪০ বছরের মধ্যে হাংগেরি ধাপে ধাপে লিত্জার কর্ম সংগ্রহ করেছে। এটি একটি বিশাল প্রকল্প। এ প্রসঙ্গে লেসলি হাওয়ার্ড বলেন,
'ইতিহাসের যে কোন একটি সভ্যতার কথা স্মরণ করলে আমরা তখনকার জাতীয় অর্থনীত বা জনগণের জীবনযাপনের কথা মনে রাখবো না। সর্বপ্রথমে আমরা আর্ট ও সঙ্গীতসহ সেই সময়ের শিল্পের কথা মনে জেগে ওঠে।'
চীনের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের সংরক্ষণ প্রসঙ্গে হোয়ার্ল্ড বলেন,
'আমি মনে করি, চীনের নিজের সঙ্গীতের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত্। অন্ধভাবে পশ্চিম সঙ্গীত অনুসন্ধান করার জন্য নিজের সঙ্গীতকে উপেক্ষা করা উচিত্ নয়। চীনের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |