|
অপেরা হলো চীনের জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধ মাটিতে বদ্ধমূল করে তোলা সংস্কৃতি। এর বিশাল ও সুগভীর নৈপুণ্য ও অফুরাণ শৈল্পিক আকর্ষণীয় শক্তি জনগণের কাছে সমাদৃত। একজন শিল্পী হিসেবে লি বিংও একজন অপেরা অনুরাগী। ঐতিহ্যবাহী অপেরা শিল্প এবং ছবি আঁকার প্রতি লি বিংয়ের ভালোবাসা তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
লি বিং ১৯৬৪ সালে তা লিয়ান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৬ বছর বয়সে তিনি মা-বাবার সঙ্গে তা লিয়ানের চুয়াং হো গ্রামে যান। জীবনের পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে তিনি হঠাত্ নিঃসঙ্গতায় পড়েন। ছোট অংশীদার না থাকায় তিনি প্রতিদিন দেয়ালে লাগানো ছবি অনুযায়ী ছবি আঁকতে শুরু করেন। চুয়াং হো গ্রামে এক বছর থাকার পর লি বিং মা-বাবার সঙ্গে শান তোং প্রদেশে চলে আসেন। শান তোং আসার পর তিনি চীনের অপেরা প্রসঙ্গে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি বলেন,
'আমার বাড়ির পাশে শান তোংয়ের লুই অপেরা দল। তখন আমি ছোট অভিনেতা হিসেবে সেই অপেরা দলে যোগ দিলাম। আমি মনে করি, আমার এখনকার ছবি আঁকার অবস্থা তখন থেকেই শুরু হয়।'
শান তোং প্রদেশে ৬ বছর থাকার পর লি বিং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তা লিয়ানে ফিরে যান। তারপর বেশ কয়েক বছরের জন্য তিনি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে লিয়াও নিং শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা বিভাগে ভর্তি হয়ে তেলচিত্র আঁকা শিখেন। তারপর তিনি একটি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তারপর তিনি পদত্যাগ করে একটি ডিজাইন কোম্পানি স্থাপন করেন। এসব অভিজ্ঞতা সম্ভবত লি বিংয়ের চূড়ান্ত ইচ্ছা সম্পন্ন করার জন্য করা হয়। তাঁর ইচ্ছে হলো একজন চিত্রশিল্পী হওয়া। ১৯৯৯ সালে লি বিং আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পেশাগত চিত্রশিল্পীর জীবন শুরু করেন এবং অপেরার চরিত্রকে তাঁর রচনার উপজীব্য হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেন।
লি বিং তেলচিত্র শিখেন বলে প্রথমে তিনি তেলচিত্র আঁকার পদ্ধতিতে অপেরার চরিত্র আঁকতেন। তারপর তিনি আবিষ্কার করেন যে, চীনের অপেরায় সেই ধরনের সুগভীর দর্শনশাস্ত্র বিষয় তেলচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই তিনি চায়নীজ চিত্রকলার মাধ্যমে অপেরার চরিত্র প্রকাশের প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করেন। তিনি হঠাত্ মনে করেন, ঠিকই দিক খুঁজে পেয়েছেন।
অব্যাহতভাবে চিন্তা ও অন্বেষণের প্রক্রিয়ায় অপেরার চরিত্র আঁকার ক্ষেত্রে লি বিংয়ের ধারণা ও নৈপুণ্যের উন্নিত হয়েছে। তিনি মাত্র লাইন ও রঙের মাধ্যমে অপেরার চরিত্র বর্ণনা করায় আসক্ত হয়ে পড়েন না। একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য জেনেছেন। তিনি বলেন,
'একজন চীনা এবং একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমি মনে করি, এক ধরনের সাংস্কৃতিক অবস্থার মাধ্যমে সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করা উচিত্। আমি করে করি, আমাকে কিছু কাজ করতে হবে। আমার চিত্রকলার মাধ্যমে অপেরা বর্ণনা করা যায়। আস্তে আস্তে আমি একে বিদেশে জনপ্রিয় করে তুলছি। বিদেশী বন্ধুরাও চীনের অপেরা দেখতে পারেন। কারণ চীনের অপেরা শিল্প শুধুমাত্র চীনের, তা নয়, এটি বিশ্বের সাংস্কৃতিক শিল্পের মূল্যবান রত্ন।'
২০১১ সালের ২২ মার্চে 'পেইচিং অপেরা—লি বিংয়ের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী' তা লিয়ান থাই তা মেই চুয়ে হোটেলে প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনী চিত্রকলা ও ক্যালিগ্রাফি মহলের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লিয়াও নিং শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা বিভাগের অধ্যাপক সোং মিং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লি বিংয়ের চিত্রকলার ওপর সজাগ দৃষ্টি রেখে আসছেন। তিনি এভাবে মূল্যায়ন করেন যে,
'লি বিং একটানা কয়েক বছর ধরে অপেরার চরিত্রকে উপজীব্য হিসেবে ছবি আঁকছেন। তিনি চরিত্রের প্রতিমূর্তি ও অভিব্যক্তি ভালোভাবে আঁকতে সক্ষম। তা ছাড়া, তাঁর চিন্তা অনেক উন্নত। পুরানো পদ্ধতিতে ছবি আঁকেন না তিনি। অপেরাকে একটি উপজীব্য হিসেবে নির্ধারণ করা অনেক ভালো। সংস্কৃতি ক্ষেত্র থেকে বলা যায়, তিনি চীনের সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।'
বৃটেন থেকে আসা মাইক এখন তা লিয়ানের একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক পদে চাকরি করেন। তা ছাড়া, তিনি একজন অপেরা অনুরাগী। তিনি বলেন, একজন বিদেশী হিসেবে তিনি চীনের অনেক ক্লাসিক্যাল সাহিত্যকর্ম পড়েছেন। তিনি চীনের অপেরা খুব পছন্দ করেন এবং লি বিংয়ের এসব শিল্পকর্মে আগ্রহী। তিনি বলেন, লি বিংয়ের শিল্পকর্ম হলো অতি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, কিন্তু তিনি আধুনিক নৈপুণ্য দিয়ে এসব শিল্পকর্ম প্রকাশ করেন।
প্রদর্শনী পরিদর্শনকারী তা লিয়ান অপেরা থিয়েটারের মহাপরিচালক ইয়াং ছি রুই তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
'অপেরা হলো ঐতিহ্যবাহী শিল্প এবং আমাদের চায়নীজ চিত্রকলা ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। দুই ধরনের শিল্প সমন্বয় করায় সুগভীর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অনেক ভালো। চীনা জাতির পুনরুদ্ধারে সংস্কৃতির দরকার, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী ও শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
নিজের মনের আকাঙ্ক্ষার মতো জীবনের প্রতি অনুভূতি এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক শিল্পের প্রতি তাঁর জানাশোনা প্রসঙ্গে লি বিং ছবি আঁকার মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রকাশ করেন। তাঁর ছবি নিঃশব্দ। কিন্তু এতে রঙ ও শক্তির ভাষা রয়েছে। এবারের প্রদর্শনীর পর লি বিং আমন্ত্রিত হয়ে তাইওয়ান ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন জায়গায় তিন মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তখন তাঁর শিল্পকর্ম অবশ্যই আরো বেশি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি অনুরাগীদের মুগ্ধ করতে সক্ষম হবে।
লিলি/আবাম
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |