Web bengali.cri.cn   
তিব্বতী লেখক আ লাই
  2011-08-03 20:11:07  cri
তিব্বতী লেখক আ লাই হচ্ছেন চীনের আধুনিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি তাঁর 'ছেন আই লুও তিং' শীর্ষক উপন্যাসের জন্য পঞ্চম মাও তুন সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি হচ্ছেন এ যাবতকাল এ পুরস্কার অর্জনকারী একমাত্র তিব্বতী লেখক। একজন তিব্বতী লেখক হিসেবে আ লাই তিব্বতী জাতির অধিবাসীদের জীবন এবং সে জীবনের পরিবর্তন ও আকাঙ্ক্ষার ওপর বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আসছেন।

আজকের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনুষ্ঠানে আমরা আ লাইয়ের মাধ্যমে একজন তিব্বতী লেখকের দৃষ্টিতে ওই অঞ্চলের ইতিহাস ও সাস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতি নজর বুলাবো।

আ লাই ১৯৫৯ সালে সি ছুয়ান প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের তিব্বতী এলাকার মা আর খাং জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মা আর খাং শিক্ষক ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি কবিতা লিখতে এবং আশির দশকের শেষ দিকে উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। 'ছেন আই লুও তিং' নামের উপন্যাসের জন্য ২০০০ সালে তিনি চীনের উপন্যাসের সর্বোচ্চ পুরস্কার, অর্থাত্ পঞ্চম মাও তুন সাহিত্য পুরস্কার পান। এই উপন্যাস ১৬টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

'ছেন আই লুও তিং' উপন্যাস ১৯৯৪ সালে লেখা। আ লাই ৮ মাস সময় নিয়ে এ উপন্যাস লেখেন। উপন্যাসে গোষ্ঠীপতি পরিবারের একজন বোকা ছেলের দৃষ্টিতে তিব্বত জাতির উপজাতীয় সর্দার ব্যবস্থা নিশ্চিহ্নের আগের এক ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।

সাহিত্য করতে গিয়ে আ লাই দেখেন তাঁর সবচেয়ে সুপরিচিত বিষয় হলো জন্মস্থানের ইতিহাস ও কাহিনী। তারপর তাঁর জন্য আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিতভাবে গবেষণা করা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি বলেন, আপনি সি ছুয়ানের তিব্বতী অঞ্চলে সেখানকার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে প্রথম বিষয় হলো ধর্ম; অন্য একটা হলো স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। 'ছেন আই লুও তিং' উপন্যাস এমন ধরনের একটি বিশেষ অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বর্ণিত একটি কাহিনী।

আমাদের বেতারের সংবাদদাতা আ লাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করেন যে, যে কোনো লেখক-লেখিকা তাঁদের সুপরিচিত জীবনযাপনের পরিবেশকে নিজেদের সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নেন - তা ঠিক কিনা? তাঁর জবাব, রচনা জীবন থেকে আসে। কিন্তু শুধু জীবন থেকে আসা উত্সই যথেষ্ঠ নয়। তিনি বলেন, অনেক লেখক-লেখিকা তাঁদের পরিচিত পরিবেশ নিয়ে লেখার সময় সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করেন। কিন্তু রচনায় যে নিজের জন্মস্থানকে লেখার উত্স হিসেবে নিধারণ করা হয়, এমন ধরনের কথায় বেশি জোর দেয়া হয় না। আ লাই বলেন, আমরা রচনার সময় যে জায়গা নিয়ে লিখি তা প্রথমত হলো বিশ্বের একটি জায়গা। আমাদের লেখার দৃষ্টি সুদূরপ্রসারী হওয়া উচিত্। প্রথমে আমরা এই পৃথিবীর একজন সদস্য, তারপর দেশের ও উপজাতির একজন। আ লাই বলেন,

'প্রত্যেক রচনার কোনো অর্থ থাকা উচিত্। সাহিত্যের সঙ্গে থাকা আমার জন্য এক ধরনের ভাগ্যের ব্যাপার। আমি আশা করি, মারা যাওয়ার পর আমার সকল সাহিত্যকর্ম আমার সারা জীবনের প্রচেষ্টাকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হবে।'

সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি প্রসঙ্গে আ লাইয়ের চিন্তা-ভাবনা উন্নত এবং সুগভীর। তিনি বিশ্বের সাহিত্য ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করেন। যদিও সাহিত্যকর্মে তিনি পরিচিত পরিবেশ নিয়ে লেখেন, কিন্তু তিনি রচনায় আধুনিক সাহিত্যের উন্নয়নে তাঁর চিন্তাভাবনাও যোগ করেন। তাঁর রচনার বিষয় সমৃদ্ধ। একজন লেখক হিসেবে আ লাই মনে করেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো সাহিত্যকর্মে ভালোভাবে মানুষ নিয়ে লেখা। কারণ একটি গল্পে শুধু একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের চরিত্র ও ভাগ্যের উন্নয়ন। আ লাই বলেন,

'রচনায় একজনকে এক দল, তথা এক দেশ বা জাতির প্রতিনিধিত্বকারী করা এখন অসম্ভব।'

২০০৮ সালে আ লাই 'কো সা আর রাজা' শীর্ষক উপন্যাস রচনা করেন। এই উপন্যাসে আরো সুগভীর আধুনিক চেতনা রয়েছে। এ উপন্যাসটি ছটি ভাষায় বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে আ লাইয়ের যোগাযোগ অধিক থেকে অধিকতর ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। তিনি বলেন,

'আমি বিশ্বের কাছে যেতে চাই, এমন নয়। বরং বিশ্ব আমার সামনে তাড়াহুড়া করে আসছে।'

সাহিত্য রচনা শুরু করার পর থেকে জন্মস্থান তিব্বত অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বরাবরই আ লাইয়ের রচনার উত্স ও চালিকাশক্তি হিসেবে থেকেছে। শহরে বসবাস করা সত্ত্বেও তিনি জন্মস্থানে ফিরতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, তিনি সবসময় তিনটি জায়গায় থাকেন। এ তিনটি জায়গা হলো গ্রাম, সি ছুয়ান ছাড়া অন্য প্রদেশ ও বিদেশ। আ লাই বলেন, প্রতি বছর তিনি কোনো এক সময় গাড়ি চালিয়ে পাহাড়ে বেড়াতে যান; শুধু বেড়ানোর উদ্দেশে।

রচনায় আ লাই এভাবে তাঁর জন্মস্থানের মূল্যায়ন করেন। একটি বই বা একজনের বুদ্ধিমত্তার জন্য এই মাটি অতিরিক্ত সুগভীর ও বিস্তীর্ণ হয়। এখানে নদনদী দিন-রাত বয়ে চলে, চার ঋতুর পরিবর্তন হয় এবং জনগণ বংশ পরম্পরায় জীবনযাপন করে। আ লাইয়ের জন্য তিব্বতী অঞ্চলের জীবনের পরিবর্তন ও উন্নয়ন চিরদিন তাঁর লেখার বিষয়।

লিলি

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040