|
এবারের চীন সফরের সাফল্য সম্পর্কে ডেভিচ মনে করেন, তাঁদের অর্জন অনেক সমৃদ্ধ। একদিকে তাঁরা চীনের সুদীর্ঘকালীন ইতিহাসসম্পন্ন ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছেন, অন্য দিকে পশ্চিমা সিম্ফোনির পরিবেশনা ও শিক্ষাদান-সংশ্লিষ্ট চীনের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যাতে দুদেশের সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করা যায়। ডেভিচ বলেন, হাঙ্গেরিতে ফিরে যাওয়ার পর তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব বিনিময়ের ফলাফল বাস্তবায়ন করবেন।
লিস্ট সংগীত ইনস্টিটিউট হচ্ছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেষ্টে অবস্থিত একশ' বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসসমৃদ্ধ একটি উচ্চমার্গীয় সংগীত প্রতিষ্ঠান। এবারের চীন সফরের অনুভূতি প্রসঙ্গে পরিচালক ডেভিচ বলেন,
'আমি এখানে আনন্দের সঙ্গে দশ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছি। এবারের সফরের আয়োজকরা আমাদের জন্য একটা চমত্কার ভ্রমণের বন্দোবস্ত করেন। চীনের খাবার আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে এবং হোটেলও খুব আরামদায়ক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো আমাদের এবারের সফরের লক্ষ্য, অর্থাত্ সংগীত বিনিময়ের ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য সমৃদ্ধ।'
চীনে আসার পর প্রতিনিধি দলের প্রথম সফরের স্থান ছিল উত্তর পশ্চিমের শ্যান সি প্রদেশের রাজধানী সি'আন। এ জায়গাটি 'ছাং আন সুপ্রাচীন সংগীতের' উত্পত্তিস্থান। 'ছাং আ সুপ্রাচীন সংগীত' চীনের প্রাচীন সংগীতের জ্যান্ত জীবাশ্ম বলে পরিচিত এবং এর এক হাজার তিনশ' বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস রয়েছে। পরিচালক ডেভিচ এবার প্রথমবারের মতো চীনের প্রাচীন লোকসংগীতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বেশ আলোড়িত বোধ করেন। তিনি বলেন,
'এবারের সুযোগে আমি চীনের লোকবাদ্যযন্ত্র দিয়ে বাজানো অনেক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংগীত শুনেছি। আমি দেখি, চীনের লোকসংগীত বাঁচিয়ে রাখা বয়স্করা এসব লোকবাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন। তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।'
ডেভিচ আরো বলেন, চীনের সুপ্রাচীন সংগীত ও হাঙ্গেরির ঐতিহ্যবাহী সংগীতের মধ্যে কিছু মিল আছে। তাই তিনি সহজে বুঝতে পারেন। তিনি বলেন,
'আমি হাঙ্গেরির ঐতিহ্যবাহী সংগীত খুব পছন্দ করি বলে পরিবেশনায় আমি চীনের সুপ্রাচীন লোকসংগীত এবং হাঙ্গেরির ঐতিহ্যবাহী সংগীতের মধ্যকার কোনো কোনো মিল অনুধাবন করতে পারি। গত কয়েক হাজার বছরে চীন নিজের বিশেষ সংগীত সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগে এগুলো শুনতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।'
চীনের ছাং আন সুপ্রাচীন সংগীত পরিচালক ডেভিচ যেমন মুগ্ধ হন, তেমনি সিয়া মেন শহরে স্থানীয় আই ইউ সংগীত দলের সঙ্গে যোগাযোগ করায় তিনি উত্তেজিত বোধ করেন। তিনি বলেন,
'সিয়া মেন শহরে আমি আই ইউ সংগীত দলের বাজানো লিস্ট শুনেছি। এটি আমার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। কারণ এখানে অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ একটি সিম্ফোনি সংগীত দল রয়েছে।'
সিয়া মেন কু লাং ইয়ু পিয়ানো স্কুলে ডেভিচ স্কুলের প্রধান ইয়াং মিংয়ের সঙ্গে ভবিষ্যত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা ধারাবাহিক শিক্ষাবিনিময় ও সফরের পরিকল্পনা করেন। আসলে ডেভিচের এবারের সফরের একটি মহত্ ইচ্ছে হলো চীনের পিয়ানো স্কুলের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করা। তিনি আশা করেন, চীনে পিয়ানো শেখা ছাত্রছাত্রীরা লিস্ট সংগীত ইনস্টিটিউটে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারবেন। তিনি বলেন,
'কু লাং ইয়ু স্কুলে পিয়ানো শেখা সব ছেলেমেয়ে হচ্ছে মাধ্যমিক বা প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী। বর্তমানে মোট ১১০জন ছাত্রছাত্রী এখানে পিয়ানো শিখছে। ভবিষ্যতে তাঁরা আমাদের ইনস্টিটিউটে শিখবে। এ ক্ষেত্রে আমি স্কুলের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি।'
পরিচালক ডেভিচের চীন সফরের তৃতীয় গন্তব্যস্থান ছিল রাজধানী পেইচিং। পেইচিং রেডিও অর্কেস্ট্রা সফরের পর তিন বলেন, হাঙ্গেরিতে ফিরে যাওয়ার পর তিনি এ অর্কেস্ট্রা ও হাঙ্গেরির লোকসংগীতের একজন সুরকারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করবেন। এভাবে এই অর্কেস্ট্রার লোকসংগীতজ্ঞরা চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দিয়ে শ্রোতাদের জন্য হাঙ্গেরির সংগীত বাজাবেন। ডেভিচ আশা করেন, ভবিষ্যতে দুদেশের সংগীতজ্ঞরা সফর বিনিময় করবেন। তিনি বলেন,
'আমার পরিচিত হাঙ্গেরির একজন সংগীতজ্ঞ বিশেষভাবে লোকবাদ্যযন্ত্রের জন্য সংগীত সৃষ্টি করেন। আমি পেইচিং রেডিও অর্কেস্ট্রাকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। আশা করি, দুদেশের সংগীতজ্ঞরা সফর বিনিময় করবেন। এটাই হবে আমাদের এবারের সফরের একটি সাফল্য।'
এবারের চীন সফরের ব্যাপারে পরিচালক ডেভিচ মনে করেন, সফরের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা অর্জিত হয়েছে। দেশে ফেরার পর তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নানা ধরনের সহযোগিতার ইস্যু বাস্তবায়ন করবেন। তিনি বলেন,
'এসব স্মৃতি আমার মনে চিরদিন থাকবে। চীনে থাকার দশ দিনেরও বেশি সময়ে সবকিছু ঠিকঠাক চলেছে। দেশে ফেরার পর আমি এসব সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।'
লিলি
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |