Web bengali.cri.cn   
লাওসান দেবতার কাহিনী
  2011-07-18 16:49:00  cri
'লিয়াওচাইইচি' প্রাচীন চীনের একটি বিখ্যাত ভৌতিক কাহিনীর বই। এই বইয়ের প্রতিটি গল্প যেমন অদ্ভুত, তেমনি শিক্ষনীয়। 'লাওসান দেবতা' তার মধ্যে একটি। আজকে আপনাদেরকে শোনাব সেই কাহিনীটা।

সমুদ্রের পাশে লাও পাহাড়ে এক দেবতা থাকেন। সবাই তাকে লাওসান তাওসি বলে ডাকে। তিনি অনেক জাদুবিদ্যা জানেন। লাও পাহাড়ের কয়েক শ' কিলোমিটার দূরের জেলা শহরে ওয়াংছি নামে এক ব্যক্তি ছোট বেলা থেকেই জাদুবিদ্যা শিখতে চায়। লাওসান তাওসি জাদুবিদ্যা জানেন একথা শুনে ওয়াংছি তাঁর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লাও পাহাড়ে পৌঁছে লাওসান তাওসির সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে শিক্ষানবীস হিসেবে গ্রহণের অনুরোধ জানায়। লাওসান তাওসি ওয়াংছিকে আপদমস্তক দেখে বলেন, তুমি বাড়ীতে সব সময় আরামে দিন কাটাও, তুমি তো কষ্ট ভোগ করতে পারবে না। কিন্তু ওয়াংছির বারংবার অনুরোধে লাওসান তাওসি তাকে শিক্ষানবিস হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী হন।

  শিগগির জাদুবিদ্যা শিখতে পারবে বলে ওয়াংছি সে রাতে জানালার বাইরে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভীষণ আনন্দ বোধ করে। কিন্তু পরদিন ভোরবেলায় তার শিক্ষক তাকে জাদুবিদ্যা তো শিখানই না, বরং তার হাতে এক কুড়াল দিয়ে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে যেতে বলেন। ওয়াংছি মনে মনে আপত্তি করলেও মুখে কিছু বলে না। পাহাড়ে জ্বালানির কাঠ সংগ্রহের কাজ ওয়াংছি কখনও করেনি, তাই সূর্য নামার আগেই তার হাত ও পায়ে অনেক রক্ত ফোসকা পড়ে।

  একমাস পর ওয়াংছির হাত ও পায়ের ফোসকা ধীরে ধীরে শক্ত কড়ায় পরিণত হয়। সে আর সারাদিন কাঠ সংগ্রহের কষ্ট সহ্য করতে চায় না। তাই বাড়ী ফেরার কথা চিন্তা করতে শুরু করে। সেদিন সন্ধ্যায় ওয়াংছি ও অন্য ছাত্ররা বাসায় ফিরে দেখে তাদের শিক্ষক দুজন অতিথির সঙ্গে মদ খেতে খেতে আলাপ করছেন। তখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছিলো; তবে ঘরে বাতি জ্বালানো হয়নি। ওয়াংছি দেখে তার শিক্ষক একটি কাগজ গোল চাঁদের মতো কেটে দেওয়ালে এঁটে দিলেই কাগজের চাঁদ থেকে আলো বের হতে শুরু করে; ঘরটি তত্ক্ষণাত্ আলোকিত হয়ে ওঠে। তখন এক অতিথি বলেন, এই মনোরম রাতে আমাদের একসঙ্গে আনন্দে কাটানো উচিত। লাওসান তাওসি এক বোতল মদ তাঁর ছাত্রদের হাতে দিয়ে তাদের যত ইচ্ছে খেতে বলেন। পাশে বসা ওয়াংছি শিক্ষকের এই কথা শুনে ভাবতে থাকে, এক বোতল মদ আমরা কি করে যত পান করতে পারবো? কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার - এই মদের বোতল সবার বাটি পূর্ণ করার পরও মদ কমে না। কিছুক্ষণ পর আরেকজন অতিথি লাওসান তাওসিকে বলেন, ঘরের মধ্যে চাঁদের আলোতে মদ খাওয়া খুব আনন্দের ব্যাপার। তবে যদি মদ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাচ দেখতে পারতাম, তাহলে খুব ভালো হতো। এই কথা শুনে লাওসান তাওসি টেবিলের ওপর রাখা একটি খাবার কাঠি হাতে নিয়ে দেওয়ালে আঁটা সাদা কাগজে স্পর্শ করেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদের আলো থেকে এক এক-ফুট লম্বা মেয়ে বেরিয়ে আসে। মেয়েটি ঘরের মাটিতে দাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত বড় হয়ে সাধারণ এক নারীতে পরিণত হয়। এই মেয়ে দেখতে যেমন ফর্সা, তেমন সুন্দর। মেয়েটি নাচতে নাচতে গান করতে শুরু করে। একটি গান শেষ করার পর মেয়েটি ঝাঁপ দিয়ে টেবিলে উঠে উপস্থিত সবাই চমকে দেয়। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে সে আবার একটি খাবার কাঠিতে পরিণত হয়। এইসব দেখে ওয়াংছি ভীষণ অবাক হয়ে যায়। এ সময় এক অতিথি বলেন, আজ আমি খুব খুশি, আমাকে এখন ফিরে যেতে হবে। একথা বলে লাওসান তাওসি ও দুজন অতিথি খাবার টেবিলটি দেওয়ালের চাঁদে নিয়ে যান। চাঁদের আলো ধীরে ধীরে কমে যায়। ছাত্ররা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে দেখতে পায়, তাদের শিক্ষক লাওসান তাওসি একাই বসে আছেন; অতিথিরা অদৃশ্য হয়ে গেছেন। বাকী মদ ও তরকারিগুলো টেবিলে আছে।

  এরপর আরো এক মাস পেরিয়ে যায়। শিক্ষক লাওসান তাওসি ছাত্রদের জাদুবিদ্যা শিখান না দেখে ওয়াংছি আর সহ্য করতে পারে না। সে শিক্ষককে বলে, আপনার কাছ থেকে জাদুবিদ্যা শেখার জন্য আমি দূর থেকে এখানে এসেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই শিখিনি। আপনি যদি অমরত্বের মতো বড় বড় জাদু আমাকে না শেখান, তাহলে দয়াকরে ছোটখাটো দু-একটা জাদু আমাকে শিখান। কিন্তু লাওসান তাওসি শুধু হাসেন, কিছু বলেন না। ওয়াংছি আবার বলে, আমি প্রতিদিন পাহাড়ে উঠে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করি, বাড়িতে অবস্থানকালে আমি কোনো দিন এরকম কষ্ট করিনি। লাওসান তাওসি হেসে বলেন, আমি আগেই জানতাম তুমি কষ্ট সহ্য করতে পারবে না। আচ্ছা, কাল সকালে তুমি বাড়ি ফিরে যাও। ওয়াংছি প্রার্থনা করে বলে, আমি খালি হাতে ফিরে যেতে চাই না, আপনি অন্তত ছোট একটা জাদু আমাকে শেখান। লাওসান তাওসি তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জাদু শিখতে চাও? ওয়াংছি জবাব দেয়, আমি দেখেছি আপনি পথে হাটার সময় কোনো দেওয়াল আপনাকে বাধা দিতে পারে না, আপনি দয়া করে আমাকে দেওয়ালে ঢোকার জাদু শেখান। তার কথায় লাওসান তাওসি রাজি হন। এক দেওয়ালের সামনে গিয়ে তিনি ওয়াংছিকে সেখানে ঢোকার মন্ত্র শিখিয়ে তাকে এই মন্ত্র পড়ার নির্দেশ দেন। ওয়াংছি এই মন্ত্র পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাওসান তাওসি তাকে দেওয়ালে ঢোকার আদেশ দেন। কিন্ত তার ঢোকার সাহস হয় না এবং কাঁপতে শুরু করে। লাওসান তাওসি আবার বলেন, ঢোকার চেষ্টা করো। ওয়াংছি কয়েক পদক্ষেপ এগিয়ে যাওয়ার পর আবার থামে। শিক্ষক ভ্রুকুঁচে বলেন, মাথা নীচু করে সামনে যাও। এবার ওয়াংছি সামনে দৌঁড় দিতে শুরু করে। নিজের অজান্তে ওয়াংছি দেওয়াল অতিক্রম করে তার বিপরীত দিকে চলে যায়। সে মহাখুশি হয় এবং লাওসান তাওসিকে বার বার ধন্যবাদ জানায়। লাওসান তাওসি তাকে বলেন, তুমি বাড়ি ফিরে গিয়ে ভালো করে পরিশ্রম করবে, নাহলে তোমার শেখা জাদুকে কোনো কাজ হবে না।

  ওয়াংছি বাড়ি ফিরে গিয়ে তার স্ত্রীকে জানায় যে, সে দেবতার কাছ থেকে জাদু শিখে এসেছি; এখন দেওয়াল তাকে বাধা দিতে পারে না। কিন্তু তার স্ত্রী তার কথায় বিশ্বাস করে না। সে বলে, পৃথিবীতে কি এই ধরনের অদ্ভুত ব্যাপার আছে? ওয়াংছি স্ত্রীকে তার শেখা জাদু দেখানোর জন্য মুখে মন্ত্র পড়তে পড়তে দেওয়ালের দিকে দৌঁড় দেয়। কিন্তু কী হলো - মাথা দেওয়ালে লেগে ওয়াংছি মাটিতে পড়ে যায়। তার স্ত্রীর সাহায্যে কোনো রকমে উঠে দেখতে পায় আঘাতে তার কপাল ফুলে উঠেছে। ওয়াংছি একেবার হতাশ হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী তাকে বলে, পৃথিবীতে এই ধরনের জাদুবিদ্যা থাকলেও তোমার মতো মাত্র তিন মাসে তা অর্জন করা সম্ভব নয়। ওয়াংছি ভাবে, সেদিন রাতে আমি সত্যিই মন্ত্র পড়ে দেওয়ালের ভিতরে ঢুকেছি, কেন বাসায় ফিরে ব্যর্থহলাম? সে সন্দেহ করে লাওসান তাওসি তাকে ঠকিয়েছে, তাই সে লাওসান তাওসিকে গালি দিতে থাকে। ওয়াংছি আগের মতোই এক অবিদিত ও অসমর্থ লোক হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040