|
একদিন নিউলান ক্ষেত বাড়ি ফিরে আবিষ্কার করেন, তার ঘর খুব পরিষ্কার-পরিছন্ন। তার ময়লা জামা-কাপড়গুলো পরিষ্কার; টেবিলে গরম ও সুস্বাদু খাবার রাখা। এইসব দেখে তিনি অবাক হন। ব্যাপারটা কী? কে এইসব করেছে? নিজেকে হাজার প্রশ্ন করেও তিনি উত্তর খুঁজে পান না।
সেইদিন থেকে পর পর কয়েক দিন ধরে একই ঘটনা ঘটতে থাকে। নিউলান আর নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন না। তিনি লুকিয়ে তার বাসায় ঘটা এসব অদ্ভুত ব্যাপার নিজের চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। একদিন ভোরবেলা তিনি প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বের হন। তারপর বাড়ির অদূরে এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে পড়েন, যেখান থেকে বাড়ির দরজা দেখা যায়।
কিছুক্ষণ পর দেখতে পান একটি সুন্দরী মেয়ে তার বাড়িতে ঢুকছে। মেয়েটি প্রবেশ করেই ঘরকন্নার কাজ করতে শুরু করে। নিউলান লুকিয়ে থাকে জায়গা থেকে বের হয়ে সোজা তার বাসায় ঢুকে পড়েন; মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে? কেন রোজ রোজ আমাকে সাহায্য করো? মেয়েটি নিউলানকে দেখে অবাক হয়ে যান, তার মুখ লাল হয়ে যায়। মেয়েটি বলেন, আমার নাম চিনুই, আমি দেখেছি আপনি একা থাকেন, পাশে সাহায্য করার কোনো লোক নেই। তাই আপনাকে সাহায্য
করতে এসেছি। একথা শুনে নিউলান খুব খুশি হন। সাহস নিয়ে চিনুইকে বলেন, তাহলে আপনি আমাকে বিয়ে করুন, আমরা একসঙ্গে থাকি। চিনুইও সায় দেন। সেদিনই তাদের দুজনের বিয়ে হয়ে যায়। প্রতিদিন নিউলান তার বুড়ো গরু নিয়ে জমি চাষ করতে যান, চিনুই বাড়িতে কাপড় বুনেন ও ঘরকন্নার কাজ করেন। তারা সুখী জীবন কাটাতে থাকেন।
ক'বছর পর তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়। তাদের জীবন সুখে ভরে ওঠে। কিন্তু তাদের সুখী জীবন স্থায়ী হয় না। একদিন হঠাত্ আকাশে কালো মেঘ ভেসে উঠে। প্রবল বাতাসের সঙ্গে দুজন স্বর্গীয় সৈনিক নিউলানের বাড়িতে এসে হাজির হয়। তারা নিউলানকে বলে, চিনুই স্বর্গীয় রাজার নাতনি। কয়েক বছর আগে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে চলে আসেন। গত কয়েক বছর ধরে স্বর্গীয় রাজা তার এই নাতনিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ কথা বলে ওই দুই স্বগীয় সৈনিক চিনুইকে নিয়ে যায়।
প্রিয় স্ত্রীকে হারিয়ে নিউলানের জীবন দুঃখে ভরে ওঠে। তার দুঃখ দেখে বুড়ো গরু নিউলানকে বলে, আপনি আমাকে জবাই করে আমার চামড়া গায়ে পরে স্বর্গের রাজপ্রাসাদে যেতে পারেন। বুড়ো গরু সব সময় নিউলানের সঙ্গে থাকে। তাই তিনি গরুটিকে জবাই করতে চান না। কিন্তু বুড়ো গরু তার কথায় জেদ ধরে। অবশেষে নিউলান বুড়ো গরুকে জবাই করেন।
নিউলান গরুর চামড়া গায়ে পরে তার দুটো বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্গের রাজপ্রাসাদের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং এক সময় সেখানে পৌঁছে যান। কিন্তু স্বর্গের রাজপ্রাসাদে গিয়েও নিউলান তার স্ত্রীর দেখা পান না। স্বর্গীয় রাজা তার নাতনির সঙ্গে নিউলানের সাক্ষাতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
কিন্তু নিউলান ও তার দুটো বাচ্চা স্বর্গীয় রাজাকে বার বার মিনতি করতে থাকেন। শেষে স্বর্গীয় রাজার মন গলে। তিনি তাদের অনুরোধ গ্রহণ করেন। স্বর্গের জেলখানায় বন্দি অবস্থায় চিনুই স্বামী ও ছেলেমেয়েদের দেখে খুব খুশি হন। কিন্তু স্বর্গীয় রাজার দেয়া সময় খুব কম। এই সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনুইকে আবার জেলখানায় নেয়া হয়। নিউলান ও তার বাচ্চার তার পিছনে পিছনে ছুটতে থাকেন। পথে নিউলান বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়েও যান। কিন্তু উঠে আবার ছুটতে শুরু করেন। দৌঁড়তে দৌঁড়তে নিউলান চিনুইয়ের পিছনে এসে পড়েন। ঠিক সেই সময় স্বর্গীয় রানী চুল থেকে একটি সোনালী চুলের কাটা বের করে তাদের দুজনের মধ্যে একটি রুপোলী নদী সৃষ্টি করে দেন। তখন থেকেই নিউলান ও চিনুই শুধু এই রুপোলী নদীর দুই তীরে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতি বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন তারা একবার করে মিলনের সুযোগ পান। সেই দিন হাজার হাজার পাখি রুপোলী নদীর উপরে দাঁড়িয়ে একটি পাখির সেতু তৈরি করে। সই সেতুতেই মিলন হয় নিউলান ও চিনুইর।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |