Web bengali.cri.cn   
সঙ্গীতজ্ঞ সিয়াও উয়েইয়ের পরিবেশ সংরক্ষণ কাহিনী
  2011-07-06 18:37:37  cri
আপনারা যে গানটি শুনছেন সেটি চীনের বিখ্যাত রক ব্যান্ড, 'গমক্ষেত রক্ষাকারী'র একটি পুরানো গান, 'পথে পথে চলছে'। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ ব্যান্ডের প্রধান গায়ক সিয়াও উয়েইর সঙ্গে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিয়াও উয়েই গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ-সংরক্ষণ সংক্রান্ত ভ্রমণ করছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, তিনি 'গম ক্ষেতের রক্ষাকারী' থেকে 'বন ও হাতির রক্ষাকারী'তে পরিণত হয়েছেন।

গায়ক থেকে পরিবেশ সংরক্ষকে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ায় সিয়াও উয়েই তাঁর গানের কথার মতো সবসময় পথে পথে চলছেন। তাঁর প্রথম ভ্রমণ ২০০৬ সালে শুরু হয়। তখন পরিবেশ সংরক্ষণের একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে ভূস্বর্গের মতো একটি জায়গা, পাপুয়া নিউ গিনির অতি প্রাচীন বনে যান। সিয়াও উয়েই বলেন,

'আগে আমি এই দেশ সম্পর্কে একদম জানতাম না। তারপর আমি কিছু তথ্য খুঁজে জানতে পারি যে, দেশটি এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একমাত্র অতি প্রাচীন বন রয়েছে এই দেশে। কিন্তু সে বন বর্তমানে নানা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সেখানকার মানুষের প্রতিদিনকার খাবার সে বনে শিকারের ওপর নির্ভর করে পাওয়া যায়। বন তাঁদের জন্য সবকিছুই; তাঁদের খাবার, পানি ও ওষুধ সবই অতি প্রাচীন বন থেকে আসে। একদিন ওই বন লুপ্ত হলে তাদের জীবনও হুমকির মুখে পড়বে।'

২০০৬ সালের সেই ভ্রমণ ছিলো প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সিয়াও উয়েইয়ের প্রথম ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। প্রতিদিন তিনি মাটির ঘ্রাণ নেন এবং পাখির গান শোনেন। প্রতিদিন তিনি আগে কখনো দেখেননি এমন ধরনের বৃক্ষ আবিষ্কার করেন এবং প্রতিদিন বনের ধাপে ধাপে লুপ্ত হওয়ার বার্তা পান।

সেবারের ভ্রমণ সিয়াও উয়েইকে বদলে দেয়। দেশে ফিরে আসার পর তিনি পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজে বেশি আগ্রহী হতে শুরু করেন। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণকে বিষয় হিসেবে নিয়ে গান লেখেন এবং পরিবেশনা করেন। তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণা প্রচার করেন।

২০০৯ সালে তিনি একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে থাইল্যান্ডে যান। তিনি হাতির সঙ্গে ভ্রমণের এক কার্যক্রমে অংশ নেন। সিয়াও উয়েই পাঁচটি হাতির সঙ্গে সিয়ান লুও রেনফরেষ্ট অতিক্রম করেন। ২৫০ কিলোমিটারের ভ্রমণে তিনি, অন্যান্য সেচ্ছাসেবক ও থাইল্যান্ডের মানুষেরা বনের বিধস্ত হওয়ার অবস্থা এবং হাতির বেঁচে থাকার পরিবেশের পরিবর্তন স্বচক্ষ দেখেন। তিনি বলেন,

'আমরা পাঁচ হাতির সঙ্গে থাইল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলের জাতীয় পার্ক থেকে রওয়ানা হয়ে রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছাই। পথে আমরা জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল জায়গার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম; যেমন গ্রাম, জেলে গ্রাম ইত্যাদি। সেখানকার গ্রামবাসীরা জলবায়ু প্রসঙ্গে কিছু জানে না। তাঁরা শুধু জানে, খাদ্যশস্যের উত্পাদন কমে যাচ্ছে এবং মাছ ধরার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে দেই। তাদের কাছে হাতি এক ধরনের সম্মানের প্রতীক। তারা হাতিকে ভালোবেসে, যেমন ভালোবাসি আমরা প্রচারক দল।'

হাতির সঙ্গে চলার দশ-বারো দিনে সিয়াও উয়েই প্রথমবারের মতো ভিডিকন দিয়ে পথের ঘটনা রেকর্ড করেন। প্রতিদিন তিনি হাতির সঙ্গে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে জানতে পারেন এটি কতোটা চৌকস ও মনোরম প্রাণী এবং তিনি এটিকে আরো পছন্দ করতে থাকেন। এখনো সিয়াও উয়েই মাঝে মাঝে থাইল্যান্ডের সেই হাতিগুলোর কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি হাতি ভিন্ন এবং তাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্য আছে। তিনি বলেন, পাঁচটি হাতির মধ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিল থোং তান নামে একটি হাতি। সিয়াও উয়েইয়ের কাছে থোং তান হলো পাঁচটি হাতির মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন একটি ছেলে হাতি। তার দাঁত, শরীর ও অবয়ব অনেক ভালো এবং তার মেজাজও খুব ভালো।

হাতির সঙ্গে থাকার সময়ে সিয়াও উয়েই উপলব্ধি করেন যে, এ প্রাণী সম্পর্কে তিনি যত বেশি জানেন, এদের রক্ষায় নিজের তত বেশি দায়িত্ব রয়েছে। তিনি সবার সঙ্গে হাতির দেখাশোনা ভাগাভাগি করতে চান। তাই তিনি পাগল হয়ে নিজের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি হাতি সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন। প্রায় আট মাসের চেষ্টায় তিনি এই চলচ্চিত্র সম্পন্ন করেন। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি আশা করেন, হাতির জীবন ঝঁকিমুক্ত থাকবে। তিনি চলচ্চিত্র উপভোগ করা মানুষের মনে হাতি ও বন সংরক্ষণের একটি বীজ বপন করতে চান। তিনি বলেন,

'বন এবং মানুষের সঙ্গে হাতির ভাগ্যের খুব জটিল সম্পর্ক রয়েছে। এক শ'বছর আগে থাইল্যান্ডে মোট ৩ লাখ হাতি ছিলো এবং তা কমে মাত্র তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ কী? থাইল্যান্ডের বনের আবৃতির হার কীভাবে ৯০ শতাংশেরও বেশি থেকে বর্তমানে দশ-বারো শতাংশে নেমে এসেছে?'

সিয়াও উয়েই নির্মিত এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি চীনের তৃতীয় প্রাকৃতিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পুরস্কার পায়। চলচ্চিত্রটির ডিভিডিও সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে সিয়াও উয়েই আনন্দে দেখেন যে, তাঁর প্রচেষ্টায় সবাই প্রকৃতির ওপর নজর দিচ্ছেন।

সিয়াও উয়েইয়ের থাইল্যান্ডের ভ্রমণ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর তাঁর নজর রাখা সবে শুরু হচ্ছে।

আসলে চীনে সিয়াও উয়েইয়ের মতো গণকল্যাণমূলক সেবায় আগ্রহী হওয়া তারকার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাঁরা যার যার অবস্থান থেকে আরো বেশি মানুষকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছেন এবং আমাদের বিশ্বকে আরো সুন্দর করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

লিলি

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040