|
কিন্তু নুইউও মানবজাতিকে বাচাঁনোর জন্য দৈত্যদানব ও হিংস্র পশুদের হত্যা করেন এবং বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ করেন। তারপর তিনি আকাশের ফাটল জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নুইউও প্রচুর খাগড়া আকাশের ফাটলে জমা করেন, তারপর আকাশের মতো নীল রংয়ের পাথর খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু নীল রংয়ের পাথর কম বলে তিনি নীল রং ছাড়া সাদা, হলুদ, লাল ও কালো রংয়ের পাথরগুলো খাগড়ার উপর স্থাপন করেন। তখনও মাটির নীচ থেকে জ্বলা আগুন পুরোপুরি নেভেনি। নুইউও গাছের একটি ডাল দিয়ে খাগড়া জ্বালিয়ে দেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই জমা খাগড়া জ্বলে ওঠে। আগুনে গোটা আকাশ আলোকিত হয়। খাগড়ার উপরের নানান রংয়ের পাথর ধীরে ধীরে গলতে থাকে। গলে যাওয়া পাথর চিনির রসের মতো আকাশের ফাটলে পড়তে থাকে। খাগড়ার পাহাড় ছাই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের বড় ফাটলও জোড়া লেগে যায়।
নুইউও আকাশের ফাটল জোড়া দেন ঠিকই, কিন্তু আকাশ আর তার আগের অবস্থা ফিরে পায় না। আকাশের উত্তর-পশ্চিম দিক একটু টেরা, কাজেই সুর্য ও চাঁদ প্রায়ই ওখানে থাকে। আর পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। তাই ছোট-বড় নদী দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। প্রচুর পানি জমে থাকার দরুণ সেখানে সমুদ্র সৃষ্টি হয়।
পো সাগরের পূব দিকে একটি গভীর পরিখা আছে, যেটির নাম 'কুইসুই'। মাটির নদ-নদীর পানি আর সমুদ্রের পানি সবই এই পরিখায় যায়। কিন্তু এই পরিখার পানি সব সময় একই অবস্থায় বজায় থাকে। কমেও না, আবার বাড়েও না। তাই 'কুইসুইয়ের' পানি কখনও মানবজাতির ক্ষতি করে না।
পরিখা 'কুইসুইয়ে' পাঁচটি পাহাড় আছে। এই পাঁচটি পাহাড়ের নাম হলো তাইইয়ু, ইয়েনছিয়াও, ফানহু, ইনচৌ ও ফেনলাই। প্রতিটি পাহাড়ের উচ্চতা ১৫ হাজার কিলোমিটার। দুটি পাহাড়ের ব্যবধান ৩৫ হাজার কিলোমিটার। এইসব পাহাড়ে সোনার তৈরি রাজপ্রাসাদ ও দামি পাথর দিয়ে তৈরি অলিন্দ আছে। অনেক দেবতা এইসব প্রাসাদে থাকেন।
এই পাঁচটি পাহাড়ের সব পশুর চামড়া ও পাখির লোমের রং সাদা। পাহাড়ের গাছের ফলগুলোও সব দামি পাথর বা মুক্তার মতো। সুমিষ্ট ফলগুলো খেলে মানুষ চিরঞ্জীব হয়। দেবতারা সাদা রংয়ের পোশাক পরেন; তাঁদের পিঠে থাকে একজোড়া ছোট পাখা। তাঁরা পাখির মতো ডানা মেলে স্বাধীনভাবে সমুদ্র ও আকাশে উড়ে বেড়াতে পারেন এবং পাঁচটি পাহাড়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করে তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। দেবতারা এই পাঁচটি পাহাড়ে সুখী জীবনযাপন করেন।
কিন্তু দেবতাদের সুখী জীবনে একটি ছোট্ট অসুবিধাও আছে। এই পাঁচটি পাহাড় সমুদ্রের উপর ভাসে বলে প্রবল বাতাসে পাহাড় পাঁচটি স্থিরভাবে দাড়াঁতে পারে না। এটা দেবতাদের জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করে। তাই দেবতারা স্বর্গীয় রাজার কাছে তাদের অভিযোগ তোলেন। স্বর্গীয় রাজার চিন্তা হলো, প্রবল বাতাসে এই পাঁচটি পাহাড় আকাশে ভেসে বেড়ালে দেবতারা পৃথিবীতে কোথায় থাকবেন? তাই স্বর্গীয় রাজা সমুদ্র দেবতা 'ইয়ুচিয়ানকে' পনেরটি কাছিম পাঠিয়ে এই পাঁচটি পাহাড় বহন করার আদেশ দেন। এই ১৫টি বড় কাছিম পাঁচ দলে বিভক্ত করা হয়। প্রতি দলের তিনটা কাছিমের মধ্যে একটি কাছিম একটি করে পাহাড় বহন করে, বাকী দুটো পাহাড়ের দুই পাশ অপেক্ষায় থাকে। প্রতি ৬০ হাজার বছর পর পর তাদের দায়িত্ব বদল হয়। এই ভাবে পাঁচটি পাহাড় স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর দূর হয় পাহাড়ে থাকা দেবতাদের অসুবিধা।
একদিন লুনপো রাজ্যের এক ব্যক্তি মাছ ধরার জন্য কুইসুইয়ে যায়। লুনপো রাজ্য থেকে আসা ওই ব্যক্তির উচ্চতা পাহাড়ের মতো। ওই ব্যক্তি ছিপ ফেলে পর পর সমুদ্র থেকে ছয়টি বড় কাছিম তোলে। ওইগুলো ছিলো পাহাড় বহনকারী পনেরটি কাছিমের মধ্যে ছয়টি। লুনপো রাজ্যের ওই মানুষ ছয়টি কাছিম নিয়ে ফিরে যায়। কাছিম ছাড়া পাহাড় তাইইয়ু ও ইউয়েনছাও সমুদ্রের পানিতে দাঁড়াতে না পেরে প্রবল বাতাসে উত্তর মেরুতে ভেসে সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। ওই দুটি পাহাড়ে থাকা দেবতারা আকাশে উড়তে উড়তে নতুন আবাসন খোঁজার চেষ্টা করেন।
স্বর্গীয় রাজা এই ঘটনা শুনে রেগে যান। তিনি লুনপো রাজ্যের অধিবাসীর উচ্চতা কমিয়ে দেয়ার আদেশ দেন। কুইসুইতে অবস্থানরত বাকী তিনটি পাহাড় কাছিমের উপর দাঁড়ানো বলে আজো সেগুলো পূর্ব চীনের উপকুলীয় অঞ্চলে রয়েছে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |