|
লিউ চোংয়ের শিল্পকর্মে জীব-জন্তুর বেশ উপস্থিতি দেখা যায় এবং এগুলোর মধ্যে পান্ডা হলো তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। তিনি বলেন,
"ছোটবেলা থেকে আমি পান্ডা পছন্দ করি। পান্ডা চীনের বিশেষ প্রাণী। দেখতে বেশ হাবাগোবা। এ প্রাণী চীনের প্রতিনিধিত্বকারী ও বিশ্বের শান্তির প্রতীক। চীনা চিত্রকলার মধ্য দিয়ে পান্ডার রূপ ফুটিয়ে তুলে চীনের ঐতিহ্যবাহী আকর্ষণীয় শক্তি প্রকাশ করা সক্ষম।"
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিউ চোং পান্ডাকে উপজীব্য করে হিসেবে অনেক চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোর মধ্যে 'ইয়োং' শিরোনামে একটি চিত্রকর্ম 'লা বিয়েনাল দি ভেনেজিয়া'য় সমাদৃত হয়।
লা বিয়েনাল দি ভেনেজিয়াকে 'চিত্রকলার অলিম্পিক' বলে গণ্য করা হয়। ২০০৯ সালে লা বিয়েনাল দি ভেনেজিয়ায় অংশগ্রহণকারী চীনা চিত্রশিল্পী হিসেবে লিউ চোং সেখানে একটি একক চিত্রকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সেটিই লা বিয়েনাল দি ভেনেজিয়ায় কোনো চীনা চিত্রশিল্পীর প্রথম একক চিত্রকলা প্রদর্শনী। ওই প্রদর্শনীতে যেসব চিত্রকর্ম স্থান পায় তার মধ্যে 'ইয়োং'ও ছিল। এ চিত্রকর্মের উপজীব্য একটি পান্ডা, যে একটি লাল পাথরের ওপর বসে দূরে তাকিয়ে আছে। লিউ চোং বলেন,
"যে প্রাণী চীন ও চীনের বৈশিষ্টের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, সেটি হলো পান্ডা। আমার আঁকা এ চিত্র খুব সরল। পাথরের ওপর একটি পান্ডা। দেখতে খুব শান্ত। ঠিক যেন আমাদের চীনের মতো। বরাবরই শান্তভাবে উন্নয়ন অর্জন করে চলেছে।"
১৪২ বছর আগে ১৮৬৯ সালে ফ্রান্সের প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও ধর্মপ্রচারক জ্যঁ পিয়েরে আরমান্ড দেভিদ ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের মারসেইলিস থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সুপ্রাচীন মরমী দেশ — চীনে এসেছিলেন। ওই বছরের মার্চ মাসে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সি ছুয়াং ইয়া আন পাও সিং জেলার ক্যাথলিক গির্জায় দায়িত্ব পালনকালে দেভিদ বিশ্ব-কাঁপানো এক আবিষ্কার করেন। সেটি হলো পান্ডাকে আবিষ্কার করা এবং প্রথমবারের মতো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে তার নামকরণ করা। তখন থেকে চীনের মূল্যবান সম্পদ পান্ডা বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে শুরু করে। ১৪২ বছর পর চীনের তরুণ চিত্রশিল্পী লিউ চোং ফ্রান্স থেকে অধ্যায়ন সম্পন্ন করার পর পান্ডার জন্মস্থান—সি ছুয়ানের ইয়া আনে ফিরে আসেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৃষ্টির আরো প্রেরণা খুঁজে বের করার জন্য লিউ চোং ইয়া আন পান্ডার কেন্দ্রে যান। সেখানে কয়েক ডজন পান্ডা স্বাধীনভাবে খেলছে এবং স্বাস্থ্যকরভাবে বড় হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে লিউ চোং বলেন,
"ছোটবেলা থেকে আমাকে টানতে শুরু করে পান্ডা। তখন মাঝেমাঝে পেইচিং চিড়িয়াখানায় পান্ডা দেখার সঙ্গে সঙ্গে ছবি আঁকতাম। কিন্তু এত কাছ থেকে পান্ডা দেখার সুযোগ আগে আমার খুব কমই হয়েছে। এবারের ইয়া আন সফরের মাধ্যমে আমি এত সুন্দর একটি পরিবেশে পান্ডাকে দেখতে পেরেছি। এবারের সফর আমার সৃজনশীলতার জন্য সহায়ক হবে।"
সি ছুয়ান পান্ডার জন্মস্থান বলে পরিচিত। পান্ডা আবিষ্কৃত হওয়ার প্রথম স্থান হিসেবে ইয়া আনকে পান্ডার শহর বলে গণ্য করা হয়। ছাং চিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকায় এবং সি ছুয়া অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইয়া আনের আয়তন ১৫ হাজার ৩ শ বর্গমিলোমিটার। সেখানের বনের আবৃতির হার ৫৬ শতাংশ। বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও গ্রীষ্মন্ডলীয় মৌসুমী বায়ুর কারণে ইয়া আনে বিশেষ ভৌগলিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা পান্ডাদের বংশবৃদ্ধির উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছে।
ইয়া আন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ পান্ডার আবাসভূমি। বর্তমানে সেখানে ৩শ'রও বেশি অতিবিরল ও গৃহপালিত পান্ডা আছে। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়ান আনের ২০টি পান্ডা চীনের মৈত্রীর দূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ব্রিটেন ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে।
ইয়া আন সফরকালে লিউ চোং প্রতিটি দিনের অধিকাংশ সময় পান্ডার সঙ্গে থাকেন। তিনি মনোযোগ দিয়ে পান্ডার প্রত্যেক ক্রিয়াকলাপ ও অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করেন। এবারের ইয়া আন সফরের মাধ্যমে পান্ডার ব্যাপারে লিউ চোংয়ের অনুভূতি আরো জোরদার হয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি পান্ডাকে বিষয় হিসেবে নিয়ে আরো বেশি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করবেন, যাতে চীনের পান্ডার ও চীনের সংস্কৃতির ওপর বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
তিনি বলেন,
"পান্ডার পেছনের অর্থ হলো আমাদের বসবাস করা বাড়িঘরের এক ধরনের সুন্দর অবস্থা। তাই পান্ডা এবং তার বসবাস করা পরিবেশ বিষয়ে আমার বর্ণনার লক্ষ্য হলো চীনের শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী উন্নয়ন ফুটিয়ে তোলা।"
চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে ইয়া আন শহরে পান্ডা ও অন্যান্য প্রাণী সম্পর্কিত প্রাকৃতিক চলচ্চিত্র সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে স্থান পাবে পান্ডাকে উপজীব্য করে চীনা চিত্রশিল্পী লিউ চোংর আরো চিত্রকর্ম। তিনি বলেন,
"আমি আশা করি, তুলির মাধ্যমে বিশ্বের আরো বেশি মানুষকে মুগ্ধ করতে এবং পান্ডার ওপর তাদের আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো।"
লিলি
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |