Web bengali.cri.cn   
তথ্য মহাসড়কে তিব্বতী ভাষা
  2011-06-22 18:38:13  cri

তিব্বতী ভাষার সুপ্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, খ্রিষ্ট্রীয় সপ্তম শতাব্দীতে তখনকার তিব্বতী রাজা সোংজাইন গাম্বো ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি একীভূত করার পর নিজ জাতির সংস্কৃতির উন্নয়নে নিকটবর্তী অঞ্চলের সংস্কৃতিকে গ্রহণের ওপর খুব গুরুত্ব দিয়েছিলেন। নিকটবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে সহযোগিতা ঘনিষ্ঠতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাদের বর্ণ দেখে বিস্মিত হন। তিনি বর্ণের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং নিজ জাতির বর্ণ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেন। তাই বর্ণ বিষয়ক শিক্ষার জন্য তিনি ১৬ জন কিশোরকে ভারত পাঠান। কিশোরদের কেউ কেউ যাত্রাপথে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে ফিরে আসেন আর কেউ কেউ ভারতে পৌঁছানোর পর উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মারা যান। কিন্তু সোংজাইন গাম্বো হাল ছাড়েন না; ভাষা শিখার জন্য তিনি আবার একটি দলকে ভারত পাঠান। দ্বিতীয় দলের একজনের নাম ছিল থুন মি সাং বু চাই। তিব্বতের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির গবেষক বা সাং ওয়াং তুই ব্যাখ্যা করেন,

'তিব্বতী ভাষা ও তিব্বতী বর্ণ নিয়ে বরাবরই বিতর্ক চলে আসছে। অধিকাংশ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, সোংজাইন গাম্বোর মন্ত্রী থুন মি সাং বু চাই ভারতে বর্ণ নিয়ে লেখাপড়া করে ফিরে আসার পর বর্তমান তিব্বতী হরফ সৃষ্টি করেন।'

বর্ণ হলো এক জাতি বা সভ্যতার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতীক। তিব্বতী ভাষা তিব্বতী জাতির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পরিণত যেমন হয়, তেমনি এর মাধ্যমে তিব্বতী জাতির উজ্জ্বল ইতিহাস ও সংস্কৃতিও লিপিবদ্ধ হয়। তিব্বতী ভাষা হলো বিশ্বের সুপ্রাচীন ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। খ্রিষ্ট্রীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে এর সৃষ্ট থেকে এখন পর্যন্ত এর মোট এক হাজার তিন শর বছরেরও বেশি সময়ের উন্নয়ন ইতিহাস রয়েছে। সুদীর্ঘ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গতা লাভ করার পর চীনের সংখ্যালঘু জাতির ভাষা হিসেবে তিব্বতী ভাষাই প্রথম বৈশ্বিক তথ্য মহাসড়কে প্রবেশকারী আন্তর্জাতিক মানের ভাষায় পরিণত হয়।

তথ্যায়ন যুগ আসার সঙ্গে সঙ্গে তিব্বত অঞ্চলে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি ভাষা হিসেবে তিব্বতী ভাষা দ্রুত গতিতে তথ্যায়ন যুগে প্রবেশ করেছে। তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক, তিব্বতী ভাষার তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক ও চু, যিনি ১৯৮৬ সালে তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিব্বতী ভাষার তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে লিপ্ত রয়েছেন, তিনি বলেন,

'গত আশির দশক থেকে আমাদের দেশে তিব্বতী ভাষার তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা শুরু হয়। বহু সংখ্যক প্রযুক্তিবিদের বিশ বছরেরও বেশি সময়ের যৌথ প্রচেষ্টায় গবেষণা, অন্যদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ এবং উদ্ভাবনসহ উন্নয়নের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমানে আমাদের তিব্বতী ভাষার তথ্যপ্রযুক্তির মান অনেক ভাষাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং বিশ্বের প্রথম সারিতে পৌঁছেছে।'

১৯৯৩ সালে চীন তিব্বতী ভাষার কোডিংয়ের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও জাতীয় মানদণ্ড নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করে। অনেক বিশেষজ্ঞের যৌথ প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সংগঠনের ভোটদানের মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে প্রথম হিসেবে তিব্বতী ভাষা বৈশ্বিক তথ্য মহাসড়কে প্রবেশের আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে।

এ ভাষার গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক, তিব্বতী ভাষার তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক ও চুয়ের নেতৃত্বে অনেক প্রযুক্তিবিদ তাদের পেশাগত জ্ঞান নিয়ে তিব্বতী ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ ভাষার তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে মৌলিক ও উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা কাজ শুরু করেন এবং ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। ও চু বলেন,

'আমাদের গবেষণার কাজ তিব্বতী ভাষার বর্ণের কোডিং, তিব্বতী ভাষার ইনপুট পদ্ধতি, অপরেটিং সিস্টেম এবং অফিস সফ্‌টওয়্যারসহ বিভিন্ন সফ্‌টওয়্যারের উন্নয়ন সম্পর্কিত।'

২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রথম 'তিব্বতী, চীনা ও ইংরেজি ভাষার ইলেকট্রোনিক অভিধান' তৈরি হয়। এর উদ্ভাবক হলেন তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লুও চাং। তা ছাড়া, তিনিই প্রথম তিব্বতী ভাষার ওয়েবসাইট এবং প্রথম তিব্বতী ভাষার কম্পিউটার কিবোর্ড তৈরি করেন। তাঁর তৈরি 'তিব্বতী, চীনা ও ইংরেজি ভাষার ইলেকট্রোনিক অভিধানে' এ তিনটি ভাষার মোট ৩৪টি অভিধানের শব্দ অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ অভিধানের মাধ্যমে তিব্বতী, চীনা ও ইংরেজি - এ তিনটি ভাষার যে কোনটিকে অন্য দুটিতে অনুবাদ করা যায়। এ ইলেক্ট্রোনিক অভিধান লেখাপড়া ও অনুবাদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী ও প্রযুক্তিবিদদেরকে সুবিধা দিয়েছে।

তিব্বতে শিক্ষার মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর লোক কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন। তিব্বত গণবেতারের তিব্বতী ভাষা তরঙ্গের উপ-প্রধান পরিদর্শক তা ফু সংবাদদাতাদেরকে বলেন, তিব্বতী ভাষায় অফিস সফটওয়্যার তৈরি হওয়ার পর থেকে এ সম্প্রচার তরঙ্গের কার্যকরিতা ও প্রচারের মান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন,

'এ সফ্‌টওয়্যার ব্যবহারের আগে আমরা যখন খবর ও প্রতিবেদন অনুবাদ করতাম তখন লেখার অক্ষরের রূপ ভিন্ন থাকার কারণে ঘোষক প্রচারের সময় খবর ও প্রতিবেদনের বিষয় দেখতে পারতেন না। এতে কার্যকরিতা বেশ কমে যেত। এখন আমরা তিব্বতী ভাষায় ইনপুট দেয়ার মাধ্যমে কম্পিউটারে অনুবাদ করছি এবং তা অনেক সুবিধাজনক হয়েছে।'

দেশের সমর্থনে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী তিব্বতী ভাষার সমন্বয়ের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতির এ ভাষা তথ্যায়নের পথে এগুচ্ছে। তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক, তিব্বতী ভাষার তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক ও চু বলেন,

'দেখা যায়, আমাদের তিব্বতী ভাষা তথ্য মহাসড়কে প্রবেশ করেছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে আমরা আরো বেশি ক্ষেত্রে আরো বেশি বিষয় নিয়ে গবেষণা করবো এবং লোকজনের জন্য আরো বেশি সুবিধা যোগাবো।'

ও চুর মতো অনেকে বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে তিব্বতী ভাষা সম্পর্কিত আরো বেশি তথ্যপণ্য পাওয়া যাবে এবং সেগুলো তিব্বতের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখবে।

লিলি

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040