|
সি শুয়াং বান নান অঞ্চলের তায় জাতি ব্যবহৃত তায় ভাষার সাত শ' বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস রয়েছে। বর্তমানে ৮ লাখ লোক এ ভাষা ব্যবহার করছে। তায় জাতির লোকেরা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। সি শুয়াং বান নার স্থানীয় ইতিহাসের নথিপত্র থেকে জানা যায়, আগে তায় জাতির কোন বর্ণ ছিলো না। তাদের বৌদ্ধ ধর্মাচার পদ্ধতি মুখে মুখে প্রচারিত হতো। এ জাতির একজন পণ্ডিত বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পাত্তরা গাছের পাতায় খোদাই করার পর এ ভাষা নতুন করে প্রাণ পায়। পাত্তরা গাছের পাতায় এ ধর্মগ্রন্থ খোদাই করা হয় বলে, তাকে পাত্তরা গাছের পাতা ধর্মগ্রন্থ বলেও গণ্য করা হয়।
সুপ্রাচীন কাল থেকে পাত্তরা গাছের পাতা ধর্মগ্রন্থের মধ্য দিয়ে তায় জাতির ঐতিহাসিক ঘটনা ও সংস্কৃতি লিপিবদ্ধ করা হয়। বর্তমানে সি শুয়াং বান নায় দু হাজারেরও বেশি পাত্তরা গাছের পাতা ধর্মগ্রন্থ সংগৃহীত আছে। তাদের মধ্যে মাত্র দেড় শতাধিক আধুনিক চীনা ভাষা অনুদিত হয়েছে। কারণ তায় জাতির ভাষার সঙ্গে সুপরিচিত মানুষের সংখ্যা খুব কম। তায় জাতির অধিকাংশ তরুণ-তরুণী হান সংস্কৃতির সঙ্গে মেলামেশা করছেন এবং হান ভাষায় লেখাপড়া করছেন বলে পাত্তরা গাছের পাতা ধর্মগ্রন্থ বুঝতে পারা মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
তায় জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বর্তমানে সি শুয়াং বান নার তায় জাতির মানুষের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা কী? সি শুয়াং বান না স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী তুয়ান চিন হুয়া বলেন,
"বর্তমানে তায় জাতির তরুণ-তরুণীরা দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি ধারা নিরংকুশভাবে হানকরণ সংস্কৃতির অন্বেষণ করছে এবং অন্যটি তায় জাতির সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।"
তিনি আরো বলেন, প্রথম ধারার তরুণ-তরুণীরা আধুনিক জীবনের রূপ পছন্দ করেন এবং দ্বিতীয় ধারার তরুণ-তরুণীরা তায় জাতির সংস্কৃতির পক্ষ অবলম্বন করেন। তাঁরা তায় ভাষা দিয়ে গান লেখা ও গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওসের তায় জাতির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিনিময় করেন। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপজাতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণের চেতনা আরো প্রবল।
এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার তায় জাতির সংস্কৃতি উন্নয়নের সঙ্গে সংরক্ষণ সমন্বয়নের নীতিতে অবিচল রয়েছে। এক শ'রও বেশি পাত্তরা গাছের পাতা ধর্মগ্রন্থ প্রকাশ ছাড়াও, প্রতি বছর নিয়মিতভাবে তায় ভাষায় রচিত গানের প্রতিযোগিতাসহ বেসরকারি সাংস্কৃতিক তত্পরতার আয়োজন করা হয়।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যেটি শুনচ্ছেন সেটি হলো সি শুয়াং বান নার টিভি কেন্দ্রের তায় ভাষার অনুষ্ঠান। টিভি অনুষ্ঠান ছাড়াও, সি শুয়ান বান নায় তায় ভাষার বেতার অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং তায় ভাষার পত্রিকা ও সাংস্কৃতিক ম্যাগাজিনও প্রকাশিত হয়।
ইউ হাং হেন হচ্ছেন সি শুয়াং বান না টিভি কেন্দ্রের তায় ভাষার একজন ঘোষক। তিনি একটানা পাঁচ বছর ধরে তায় ভাষার ঘোষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন,
"দেশ-বিদেশ ও আমাদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের খবর পড়ি আমি। আমি মনে করি, তায় ভাষার একজন ঘোষক হিসেবে কাজ করা এ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার শামিল।"
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিত্সা শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ইউ হাং হেন চিকিত্সা পেশায় না গিয়ে তায় ভাষার সম্প্রচারে নেমে পড়েন। তিনি আশা করেন, আরো ভালো অনুষ্ঠান তৈরি করার মাধ্যমে তায় জাতির আরো বেশি শ্রোতা, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদেরকে আকর্ষণ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, নিজেদের উপজাতীয় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে হান ও তায় - এ দুটি সংস্কৃতির সমন্বয় ও উন্নয়ন করা উচিত্।
সি শুয়াং বান না অঞ্চলে 'দুই ভাষার' শিক্ষাদানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। 'দুই ভাষার' শিক্ষাদান মানে সংখ্যালঘু জাতি অধ্যূষিত এলাকায় স্বজাতির ভাষা থাকা উপজাতীয় স্কুলে ছাত্রছাত্রীদেরকে উপজাতীয় ভাষা ও হান ভাষায় শিক্ষাদান করা।
অনেক বছর ধরে সি শুয়াং বান না 'দুই ভাষার' শিক্ষক এবং উচ্চ মানের 'দুই ভাষার' দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ২০০৮ সালে সি শুয়াং বান নার অনুরোধে ইয়ুন নান জাতীয়তা বিশ্ববিদ্যালয় হান ও তায় ভাষার দক্ষতা প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। সি শুয়াং বান না কারিগরি ইন্সটিটিউটের হান ও তায় ভাষার অনুবাদ বিষয়ের শিক্ষক ইয়ান নুও লা ইয়ুন নান জাতীয়তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বলেন,
"হান ও তায় ভাষার শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি, আমি তায় জাতির সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা পালন করছি।"
২০১১ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপজাতীয় শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করে। দেখা যায়, সংখ্যালঘু জাতি অধ্যূষিত অঞ্চলে দুভাষার শিক্ষাদান ইতোমধ্যেই ২০১১ সালে সারা দেশের শিক্ষা কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
হান ও তায় এ দুটি সংস্কৃতির সম্পর্ক প্রসঙ্গে সি শুয়াং বান নান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সম্প্রচার উপমন্ত্রী তুয়ান চিন হুয়া বলেন,
"উন্নত সভ্যতা শিক্ষার অর্থ আমাদের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ছেড়ে দেয়া নয়।"
সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভাষা ও শিক্ষাদানের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই হান ও তায় ভাষার শিক্ষাদানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এ দুটি ভাষার দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়া সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লিলি
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |