|
"আমি 'রোমান্স অব দ্যা থ্রি কিংডম, 'জার্নি টু দ্যা ওয়েস্ট' এবং 'ড্রিমস অব রেড ম্যানসন' - এ বই তিনটি পড়েছি। এসব সাহিত্যকর্মে চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতির কাহিনী ব্যাখ্যা করা ছাড়াও জনগণের জীবনযাপনের প্রণালী তুলে ধরা হয়েছে। চীনের শিষ্টাচার বংশপরম্পরায় বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি চীনের সংস্কৃতি ও চীনাদের জীবনযাপন প্রণালী আরো বেশি করে জানতে আগ্রহী।"
কারোলিন ওয়ানজিরু চীনে কাজ করেছিলেন। হান ভাষা ও চীনের সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহ সুগভীর। কেনিয়ায় চীনের রাষ্ট্রদূত লিউ কুয়াং ইউয়ান বলেন, এটি হচ্ছে দুদেশের সরকারের প্রচেষ্টার ফল। তিনি আরো বলেন,
"সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও কেনিয়া পর্যায়ক্রমে সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রত্নতত্ত্ব, ক্রীড়া, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বর্তমানে চীনে অধ্যয়নরত কেনিয়ান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনশ' জন। প্রতি বছর চীন সরকার কেনিয়ার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বৃত্তি দেয়।"
এখন নাইরোবিতে দুটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালু আছে। ২০০৫ সালের শেষ দিকে কেনিয়ার নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট আফ্রিকার প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট। এটাকে দুদেশের শিক্ষা বিনিময় ইতিহাসের মাইলফলক বলে অভিহিত করা হয়। এর কারণ কেবল এই নয় যে, এটি সবচেয়ে আগে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট; বরং এর খুব ভালো ফলও এর অন্যতম কারণ। পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ে পর্যায়ক্রমে তিনশ' জনেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এখানে লেখাপড়া করেছেন। ইনস্টিটিউটে মোট ২৮টি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট পেশাদার ভাষা বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। হান ভাষা নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো একটা আনুষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অধিক থেকে অধিকতর হারে চীনের পুঁজি বিনিয়োগকারী কোম্পানি কেনিয়ায় আসছে এবং নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের স্নাতকদেরকে গ্রহণ করছে। ২০০৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন। ছাত্রছাত্রীদের গাওয়া 'জেসমিন ফুল' শিরোনামের একটি গান প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওকে দারুণ অভিভূত করে। তথ্যমাধ্যমের মাধ্যমে নাইরোবি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বিশ্ববিখ্যাত হয়ে উঠেছে। সেজন্য চীন পক্ষের প্রধান সা তো ছুয়ান গৌরব বোধ করেন। তিনি বলেন,
"কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চীন ও কেনিয়ার সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিনিময়ের নতুন সূচনা করেছে।"
প্রত্নতত্ত্ব ক্ষেত্রে আফ্রিকার মূলভূভাগে এখন পর্যন্ত মানবজাতির সবচেয়ে প্রাচীন হাড়-জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। এখনো অনেক জায়গায় আদিকালের জীবন ও সংস্কৃতির রূপ বজায় রয়েছে। এসব জায়গাকে 'আদিকালের জীবিত জীবাশ্ম' বলে গণ্য করা হয়। অনেক আগে চীন ও আফ্রিকার মেলামেশা শুরু হয়। তাই প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমে দুদেশের বিনিময়ের ইতিহাস সন্ধান করা সম্ভব।
চীন ও কেনিয়ার বিনিময় প্রথম শুরু হয় ১৫ শতাব্দীতে চেং হোর নৌবহর যখন কেনিয়ায় পৌঁছায় তখন থেকে। লামু দ্বীপপুঞ্জ এবং এর কাছাকাছি দ্বীপে অনেকে নিজেদেরকে চীনা বংশোদ্ভূত হিসেবে মনে করে। লামুয় আসা চীনাদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে যৌথভাবে দুদেশের প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধানের অনুরোধও দিন দিন বাড়ছে।
২০১০ সালে চীন সরকারের অর্থায়নে প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত তিন বছরের একটি যৌথ সহযোগিতা প্রকল্প শুরু হয়। এটি হচ্ছে চীনের প্রত্নতত্ত্ব দলের প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে যাওয়া। যৌথ প্রত্নতত্ত্ব দলের মোট দুটি উপদল আছে। এক দল লামু দ্বীপপুঞ্জ এবং এর কাছাকাছি সামুদ্রিক অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ নিয়ে বৈজ্ঞানিক জরিপ ও খনন কাজ চালায়। অন্য দল মালিন্দির কাছাকাছি ভূ-পৃষ্ঠে প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান করে। যৌথ প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধানের লক্ষ্য হলো প্রাচীনকাল থেকে চীন ও আফ্রিকার সাংস্কৃতিক ও আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময়ের বেশ কয়েকটি অস্পষ্টতা সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো।
চীন ও কেনিয়ার সাংস্কৃতিক সহযোগিতা পর্যটন শিল্পের সহযোগিতায় ফুটে উঠেছে। কেনিয়ার চিড়িয়াখানায় অতিবিরল জীব-জন্তুর সংখ্যা অনেক বেশি। তা ছাড়া, সেখানে আকর্ষণীয় সমুদ্রতীর এবং প্রাচীন ও মরমী আফ্রিকান সংস্কৃতিও রয়েছে। পর্যটন শিল্প বরাবরই জাতীয় অর্থনীতির স্তম্ভ। ২০০৪ সালে কেনিয়া চীনা নাগরিকদের পর্যটন গন্তব্যস্থলের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর থেকে চীনারা অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যায় সেখানকার বিশেষ আকর্ষণীয় শক্তিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। কেনিয়ার পর্যটন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কেনিয়া ভ্রমণকারী চীনা পর্যটকের সংখ্যা বছরে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কেনিয়ার পর্যটন মন্ত্রী নাজিব মোহামেদ বালালা বলেন,
"চীন ও কেনিয়া উভয়েই সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদসমৃদ্ধ বৃহত্ দেশ। সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চীনের অর্জিত সাফল্য বিশ্বের প্রথম ধাপে রয়েছে। চীনারা যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন, আমরা তার জন্য আনন্দ বোধ করি। এ সুযোগে আমি চীনা বন্ধুদেরকে বলতে চাই, কেনিয়ায় অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। আমরা আপনাদেরকে এখানে স্বাগত জানাচ্ছি।"
চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীন ও কেনিয়ার পর্যটন মহলের কর্মকর্তারা নাইরোবিতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়ে যে আলোচনা করেন, তা নাইরোবির চীনা পর্যটন কোম্পানির দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিভিন্ন পক্ষ এটাকে নতুন সুযোগ হিসেবে দেখেছেন। যৌথ প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান নতুন ফল অর্জন করলে আরো বেশি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে। চীনা পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা ভাষা ও চীনের রীতিনীতি জানা মানুষের আরো বেশি দরকার হবে এখানে। দুদেশের এই আলোচনাসভা প্রসঙ্গে কেনিয়ার জাতীয় উত্তরাধিকার সম্পদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইউলিয়াম তিমামা বলেন,
"কেনিয়া ও চীনের সাংস্কৃতিক বিনিময় খুব নিয়মিত। তা দুদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। আমি মনে করি, দুদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের জনগণ আরো কাছাকাছি আসবে।" (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |