|
সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতারা পেইচিং রাসায়নিক প্রযুক্তি ইউনিভার্সিটিতে এসে প্রধান শিক্ষাদান ভবনের দুই তলার একটি ছোট ক্লাসরুম পরিদর্শন করেন। এখানকার অনেক বিদেশী শিক্ষার্থী সাবলীলভাবে চীনা ভাষা বলতে পারেন। তাদের মধ্যে অনেকে চীনের বিদেশী তারকায় পরিণত হয়েছেন এবং দর্শকদের সমাদর পেয়েছেন। তাদের শিক্ষক হচ্ছেন চীনের বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা তিং কুয়াং ছুয়ান।
কোন কোন লোক বলেন, একজন কৌতুকাভিনেতা হিসেবে তিং কুয়াং ছুয়ানের খ্যাতির চেয়ে কৌতুক বলার ক্ষেত্রে বিদেশীদেরকে শিক্ষাদানের খ্যাতি আরো বড়। কখন থেকে এবং কি কারণে তিং কুয়াং ছুয়ান বিদেশীদেরকে কৌতুক বলার শিক্ষাদান করতে শুরু করেন?
২০ বছরের আগে তিং কুয়াং ছুয়ান তাঁর প্রথম ছাত্র, অর্থাত্ কানাডীয় মার্ক রাউসওয়েলকে পান। তখন সাবলীলভাবে চীনা ভাষা বলতে পারা বিদেশীদের সংখ্যা বেশি ছিলো না। কৌতুক বলতে পারা বিদেশীদের সংখ্যা ছিল আরো কম। মঞ্চে পরিবেশনা শুরু করার পর মার্ক রাউসওয়েল রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তাঁর শিক্ষক হিসেবে তিং কুয়াং ছুয়ানও সুনাম অর্জন করেছেন। এ সঙ্গে তিং কুয়াং ছুয়ান বলেন,
'মার্ক রাউসওয়েল চীনের শিল্প ও সংস্কৃতি বিশেষ করে কৌতুকের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আমার বাড়িতে আমার কাছ থেকে কৌতুক শিখতে পারেন কিনা। বিদেশীদের কাছে থেকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশন দেখতে পছন্দ করেন চীনারা। আমি মনে করি, এটি একটি ভালো ব্যাপার। তাই রাজী হয়ে যাই।'
কৌতুকে চীনাদের রসিকতা, আশাবাদ ও বুদ্ধি রয়েছে। একজন কৌতুক শিল্পীর জন্য ভাষা প্রকাশের উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতা দরকার। বিদেশীদেরকে তিং কুয়াং ছুয়ানের কৌতুক শিক্ষাদানের কাঠিন্য খুবই বিশাল। একটানা বিশ বছর ধরে তিনি অব্যাহত রেখেছেন তাঁর প্রচেষ্টা। এখন পর্যন্ত তিনি মোট ৮০টিরও বেশি দেশের ১৬০ জনেরও বেশি বিদেশী ছাত্রছাত্রীদেরকে পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মো তা ওয়েই তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি ১৯৯৭ সালে তিং কুয়াং ছুয়ানের কাছ থেকে কৌতুক শিখতে শুরু করেন। এখন তিনি চীনের তারকায় পরিণত হয়েছেন। তিনি বলেন,
'বিদেশীরা চীনা ভাষা ভালোভাবে বলতে চাইলে কৌতুক বলতে শেখা একটি ভালো পদ্ধতি। এতে অনেক আঞ্চলিক ভাষা ও প্রবাদসহ চীনা ভাষা প্রকাশের নানা পদ্ধতি রয়েছে। কৌতুক শেখার মধ্য দিয়ে বিদেশীরা হান ভাষার মান বাড়ানোর পাশাপাশি চীনের লোক সংস্কৃতিও জানতে পারেন।'
অনেক বিদেশী ছাত্রছাত্রী একটানা দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিখেন। আর্মেনিয়ার সহদরা রিয়ানা ও মারিনা ১৯৯৯ সালে কৌতুক বলা শিখতে শুরু করেন। নিজেদের শেখার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে রিয়ানা বলেন,
'জিহ্বা মোচড়ানো আমার জন্য দাঁত-ভাঙ্গা শব্দ শেখা একটু কঠিন। এক নিঃশ্বাসে বলতে হবে।' মারিনা বলেন,
'শিক্ষক তিংয়ের কাছে কৌতুক শেখার প্রক্রিয়ায় পেইচিং অপেরাসহ চীনের অন্য ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনার উপায় শিখতে পারি। শিক্ষক তিং আমাদেরকে ধৈর্যের সঙ্গে চীনের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনার উপায়ের ইতিহাস ও তাত্পর্য ব্যাখ্যা করেন। এসব জ্ঞান স্কুলে আমরা শিখতে পারি না।'
সাম্প্রতিক বছরগুরোতে তিং কুয়াং ছুয়ান কৌতুকের মাধ্যমে চীনা ভাষাকে জনপ্রিয় করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০০৮ সালে তিনি পেইচিং রাসায়নিক প্রযুক্তি ইউনিভার্সিটির অতিথি অধ্যাপক হন। তখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একবার করে আনন্দময় হান ভাষার ক্লাস আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
এটি হচ্ছে তিং কুয়াং ছুয়ানের আনন্দময় হান ভাষার ক্লাসরুম। শোনা যায়, এখানকার পরিবেশ খুব অবাধ; সাধারণ ক্লাসরুমের মতো গম্ভীর নয়। তিং কুয়াং ছুয়ান বলেন, তিনি চান কৌতুকের মতো রসাত্মক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদেরকে বাইতে না থাকা জ্ঞানে আলোকিত করতে। উল্লেখ্য যে, তিং কুয়াং ছুয়ান বিনা খরচে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষাদান করেন। তাঁর এই হান ভাষার ক্লাসরুমও বাধ্যতামূলকভাবে জনসাধারণের জন্য খোলা হয়।
ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে একজন বিদেশীকে চীনাদের রসিকতা সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে জানানো অত্যন্ত মুশকিল। তিং কুয়াং ছুয়ান বলেন, চীনাদেরকে ও বিদেশীদেরকে শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভিন্ন। কেবল ভাষার কারণে নয়, চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানার মাত্রার ওপরও নির্ভর করে তা। এসব প্রেক্ষাপট ভালোভাবে জানলে সত্যিকারভাবে কৌতুক শেখা সহজ হয়। এ প্রসঙ্গে তিং কুয়াং ছুয়ানের ছাত্র ডেভিড মোসার বলেন,
'কৌতুকের মতো রসিকতায় অনেক সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের উপাদান রয়েছে। শিক্ষক তিং একজন ভালো শিক্ষক। আমরা যেখানে পরিবেশন করি, তিনি আমাদেরকে নিয়ে সেখানের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জায়গায় যান। তাই শিক্ষক তিংয়ের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আমাদের জন্য এক একটি ভাষার ক্লাস।'
বর্তমানে অধিক থেকে অধিকতর হারে বিদেশীরা কৌতুক শেখাকে তাদের হান ভাষার দক্ষতা উন্নয়নের উপায় হিসেবে দেখছেন। এত বেশি লোকের কৌতুক শেখা বিদেশে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রচারকে ত্বরান্বিত করেছে। তিং কুয়াং ছুয়ান মনে করেন, আগেকার চীনা প্রবীণ কৌতুকাভিনেতারা কৌতুককে বিদেশে প্রচার করতে চেয়েছিলেন। অনেক প্রজন্মের লোক এই লক্ষ্যে প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন। কোনো কোনো লোক কৌতুক ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। তবে এতে কৌতুকে চীনের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়। এখন তিনি বিদেশী ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষাদান করছেন। বলা যায়, এটা এক ধরনের নতুন অনুসন্ধান। তিনি বলেন,
'এখন হান ভাষা অনেক জনপ্রিয়। অধিক থেকে অধিকতর হারে ছাত্রছাত্রী হান ভাষা শিখতে পছন্দ করেন। অনেক বিদেশী ছাত্রছাত্রী আমার বাড়িতে এসেও শেখেন। আমি সারা বিশ্বে চীনের কৌতুক প্রচারের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবো।'
বিদেশে চীনা কৌতুকের প্রচার ক্ষেত্রে তিং কুয়াং ছুয়ানের বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন উদ্যোগ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আশা চান বিদেশীদের প্রাধান্য বজায় রেখে ঐতিহ্যবাহী কৌতুকে নতুন পরিবর্তন এনে দিতে। কেউ কেউ অনেক বছরের প্রচেষ্টায় চীনের কৌতুক শিল্পকর্মের রসাত্মক উপাদানকে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে আবার সৃষ্টি করে ইংরেজীতে বলেন, যাতে যারা চীনা ভাষা বুঝতে পারেন না, তারাও চীনের রসিকতা উপভোগ করতে পারেন। (লিলি)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |