|
থাং লেইর সঙ্গে যারা সুপরিচিত, তারা তাঁকে 'পিটার' নামে ডাকেন। পিটার সংস্কৃতি ও শিক্ষাদান বিষয়ের একজন স্নাতক এবং শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টারস ডিগ্রির অধিকারী। তিনি কানাডায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। চীনের সুপ্রাচীন ইতিহাস ও মরমী সংস্কৃতির প্রতি অপরিসীম অনুরাগ পোষণ করে ২০০১ সালে কানাডা থেকে উ সি শহরে চলে আসেন তিনি। তারপর তিনি এই সুন্দর শহর পছন্দ করে ফেলেন। তিনি বলেন,
'আমি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উ সি শহরে আসি। কানাডায় থাকার সময় আমি বিভিন্ন দেশের মানুষকে শিক্ষাদান করতাম। সেই সময় বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হই। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমার পেশা খুব পছন্দ করি। আমি চীনের সংস্কৃতিকে জানার সুযোগ পেতেও ইচ্ছুক।'
থাং লেই বলেন, কানাডার টোরেন্টোয় থাকার সময় শিক্ষক হিসেবে চাকরি করা ছাড়াও স্থানীয় চীনাবংশোদ্ভুত কানাডীয়দেরকে সাহায্য করার জন্য তিনি পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সমন্বয়কারীর কাজ করতেন।
এমন ধরনের কর্ম-অভিজ্ঞতার কারণে সুপ্রাচীন ও মরমী চীন তাঁর স্মরণীয় জায়গার মধ্যে অন্যতম একটি হয়ে ওঠে। নিজের চোখে এই দ্রুত উন্নয়নের দেশ দেখতে এবং চীনাদের জীবন উপলব্ধি করতে তিনি চীনে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন।
থাং লেইয়ের শরীরে ইহুদী রক্ত। তিনি বলেন, অন্যকে সাহায্য করা এক ধরনের আনন্দময় জীবন উপভোগের শামিল। তিনি জানান, তাঁর বাবার প্রভাবে তিনি কল্যাণকর সেবায় আগ্রহী হন। তিনি বলেন,
'ছোটবেলায় আমি বাবার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। বাবা কমিউনিটির একজন নেতা ছিলেন। তিনি বরাবরই স্থানীয় স্কুলগুলোতে গণকল্যাণমূলক তত্পরতার আয়োজন করতেন। তাঁর এসব তত্পরতা আমি নিজের চোখে দেখেছি।'
উ সি শহরে আসার পর থাং লেই অব্যাহতভাবে তাঁর জনকল্যাণমূলক সেবা অব্যাহত রাখেন। ৯ বছরে কত খারাপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রতি রোববার সকালে তিনি ছেং চোং পার্কের ইংলিশ কর্নারে গিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।
ছেং চোং পার্কের ইংলিশ কর্নার ছাড়াও, তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার একটি হোটেলের ইংলিশ কর্নারে মানুষদেরকে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। তাঁর প্রভাবে অনেক ইংরেজি অনুরাগী এখন ইংরেজি দিয়ে ভাব বিনিময় করেন।
ইংলিশ কর্নারে রয়েছেন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, বিদেশী বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও সাধারণ কর্মী এবং অন্যান্য ইংরেজির অনুরাগী। এখানে ইংরেজির মধ্য দিয়ে তাঁরা একে অন্যের ভালো বন্ধু হন। কর্নারের সবাই থাং লেইকে খুব পছন্দ করেন। থাং লেই বলেন, একজন পেশদার ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তিনি জানেন, উ সি শহরে অনেকে ইংরেজি ভাষা শিখছেন। তিনি আশা করেন, এসব ইংরেজি অনুরাগীদের জন্য শেখার একটি ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। তিনি বলেন,
'ইংলিশ কর্নার প্রতিষ্ঠার অনেক কারণ আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সবাইকে একত্রিত হয়ে বিনিময়ে সক্ষম করে তোলা এবং তাদেরকে মৌখিক ইংরেজি চর্চার একটি সুযোগ দেয়া।'
একটি বিদেশী বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করা সিয়াও উ একটানা কয়েক বছর ধরে ইংলিশ কর্নারে আসেন। তিনি বলেন,
'ইংলিশ কর্নারে আসার পর আমার ইংরেজির মান অনেক উন্নত হয়েছে। থাং লেই একজন খুব ভালো মানুষ। তাঁর শিক্ষাদানও অনেক ভালো।'
সিয়াং ছেন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী নিজের ইংরেজি, বিশেষ করে মৌখিক ভাষার ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। ইংলিশ কর্নারে আসার পর থাং লেই তাঁকে ইংরেজি ভাষায় কথা বলার অনুপ্রেরণা দেন। তিনি বলেন,
'এখানে আসার পর আমি আনন্দ বোধ করি। বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলি এবং দেখি নিজের ইংরেজির মান কেমন হলো।'
থাং লেইয় সব সময় একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন। তা হলো জীবনকে আরো সুন্দর করে তোলা। সময় থাকলে থাং লেই সামাজিক কল্যাণমূলক কেন্দ্রে অনাথদেরকে সমবেদনা জানান, শিশুদেরকে সহজ ইংরেজি গান শিখান, তাদের সঙ্গে খেলেন এবং তাদের মধ্যে উষ্ণতা ও আনন্দ সঞ্চার করে। প্রতিবার শিশুদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় থাং লেই আবার তাদের দেখার প্রতিক্ষায় থাকেন।
গত ৯ বছরে মোট কতটি গণকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন সেটা থাং লেইয়ের নিজেরও মনে নেই। ভারত মহাসাগরের জলোচ্ছাস কবলিত অঞ্চলকে সাহায্য দেয়ার জন্য উ সি শহরে অনুষ্ঠিত চাঁদা সংগ্রহ কার্যক্রম এবং উ সি দাতব্য চাঁদা সংগ্রহ কর্মসূচিতে তিনি যেমন সক্রিয় ছিলেন, তেমনি এখনো সক্রিয় আছেন উ সি সামাজিক কল্যাণকেন্দ্রের কার্যক্রমে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি উ সি'র শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক ও চিয়াং সু প্রদেশের শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবকসহ অনেক পুরস্কার অর্জন করেন। কিন্তু থাং লেইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, পুরস্কার পাওয়া অতো গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উ সি শহরের জন্য কিছু কাজ করা। তিনি বলেন,
'স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমাদের কাজ করার লক্ষ্য অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা নয়। আমরা শুধু কয়েকটি বাস্তব কাজ করতে চাই। আপনি যখন কাউকে সাহায্য করেন এবং সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি যখন আপনাকে ধন্যবাদ জানান, তখন আপনার মন নিশ্চয়ই খুব আনন্দ বোধ করে। এখানে আমিও ধন্যবাদ বলতে চাই; উ সি শহরে অন্যকে সাহায্য করার সুযোগ পাওয়ার জন্য।'
থাং লেই আনন্দের সঙ্গে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নেয়ার সময় তিনি নিজেকে একজন উ সি'র নাগরিক হিসেবে মনে করেন। তিনি মনে করেন, এটা তাঁর দ্বিতীয় জন্মস্থানে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,
'অবিসংবাদিত বিষয় হলো উ সি আমার দ্বিতীয় জন্মস্থানে পরিণত হচ্ছে। আমি পুরোপুরিভাবে এই শহরে মিশে যাওয়ার অনুভূতি বোধ করি। বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সময় আমি নিজেকে উ সি'র একজন সদস্য হিসেবে মনে করি।'
থাং লেইয়ের স্ত্রী হু লিং হান বলেন, অন্যকে সাহায্য করা থাং লেইয়ের সবচেয়ে বড় আনন্দ। তিনি বলেন,
'কেউ সাহায্য চাইলে থাং লেইকে জিজ্ঞাস করি, সাহায্য করবো কিনা। সে অব্যশই বলবে, করো। উ সি শহরে আসার পর সে নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে অন্যকে প্রভাবিত করেছে। সে মনে করে, এটা তার জীবনের একটি অংশ।'
থাং লেই বলেন, নিখিল চীনের এক শ' জন শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবকের তালিকায় তাঁকে অন্তর্ভূক্ত করায় তিনি আনন্দ বোধ করেন। তিনি বলেন, এ গৌরব উ সি'র সকল স্বেচ্ছাসেবকের। উ সি শহরে অনেক স্বেচ্ছাসেবক আছেন। হতে পারে - প্রত্যেকে মাত্র একটি বীজ বপন করেন, কিন্তু এসব বীজের একত্রিত হয়ে বড় হওয়ার শক্তি যেন সূর্যের উজ্জ্বল আলো। মানুষকে উষ্ণতা এনে দিতে সক্ষম। তিনি অব্যাহতভাবে গণকল্যাণমূলক সেবায় অবদান রেখে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। (লিলি)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |