|
১৯৬১ সালে ফু থিয়ান লিন ছোং ছিং বিদ্যুত্ প্রযুক্তি বিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর খামারে ফল চাষ করতেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। খামারে কাজ করার জীবন ছিল নিরলস। কাজ করার পর খামারের প্রচার দলের পরিবেশিত অনুষ্ঠান উপভোগ করা ছিল তাঁর একমাত্র বিনোদন। তখন থেকেই তিনি কবিতার ভেতর ডুবে যেতে শুরু করেন। খামারে জীবন যাপনের প্রতিদিনই ছিল তাঁর কবিতা লেখার উত্স। সেখানে তিনি জীবনের প্রথম কবিতা 'ছু কোং'লিখেছেন। তিনি স্মৃতিকে স্মরণ করে বলেন,
'তখন আমার বয়স মাত্র ১৬ বা ১৭ বছর হবে। আমি বেশি লেখা পড়া করিনি। তাই আমি মনে করছিলাম যে, কবিতায় ছন্দ থাকতে হবে।'
প্রায় ৫০ বছর কেটে গেছে। তাঁর প্রথম কবিতা প্রসঙ্গে ফু থিয়ান লিন হাসতে হাসতে বলেন, সেটাকে পুরোপুরিভাবে কবিতা বলা ঠিক নয়। তখন খামারে কাজ করার সময় স্বাস্থ্যের কারণে ফু থিয়ান লিনকে প্রতি মাসে চার বা পাঁচ বার হাসপাতালে যেতে হতো। তাই খামারের নেতারা তাঁকে দিয়ে প্রচার স্টেশনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর তিনি আরো বেশি সময় দিয়ে কবিতা লিখতে পারছিলেন এবং তাঁর লেখা কবিতাও দিন দিন পরিপক্ক হতে থাকে। তিনি বলেন, তখন তাঁর লেখা কবিতা কিছুটা সরল ছিল, কিন্তু সেগুলোতে মাটির গন্ধ ভরপুর ছিলো। তখন তাঁকে খামারের কবি গণ্য করা হতো। খামারে থাকা ১৯ বছরে ফু থিয়ান লিন মোট কয়েক'শরও বেশি কবিতা লিখেছেন। অবশেষে তিনি সেসব কবিতা দিয়ে নিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'সবুজ সুর' প্রকাশ করেন।
গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে ফু থিয়ান লিন খামার থেকে ছোং ছিং শহরের পেই পেই জেলার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে চাকরি করতে শুরু করেন। সুপরিচিত পরিবেশ থেকে বিদায় এবং নতুন জীবনের সম্মুখীন হয়ে তিনি রচনা করার উত্স অনুসন্ধান করতে থাকেন। একটি কাকতালীয় সুযোগের মাধ্যমে তিনি আবিষ্কার করেন যে, আসলে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়টি কী তাঁর কাছে? তা হলো তাঁর ছেলেমেয়ে। তিনি বলেন,
একদিন রাত বারোটায় আমি বাসে পেই পেই জেলায় ফিরে যাই। বাস থেকে নামার পর আমি দেখেছি, আমার ছোট ছেলেমেয়ে বাস স্টেশনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। শরতকালে তারা একজন আমার বাম হাত ধরে এবং আরেকজন আমার ডান হাত ধরে আমাকে বলে, মা, কাপড় আমরা নিজেরাই ধুয়ে নিয়েছি। এ কথা শুনে আমার চোখে একটু পানি এসে যায়। তখন আমি মনে করছিলাম যে, তারা হলো আমার পাশে থাকা লেখার উত্স। আমার ছেলেমেয়ের সঙ্গে ভাবানুভূতির বিনিময়ের বিষয়ের মধ্য দিয়ে আমি দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটি লিখেছি।'
সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কাজ করার দু'বছর পর ফু থিয়ান লিন ছোং ছিং শহরের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। এখানে কাজ করার সময় ফু থিয়ান লিনের জীবনে আরো বেশি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা তথা বিদেশেও ভ্রমণ করতে পারেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী আরো বিশাল হতে থাকে। নতুন অনুভূতি তাঁর জন্য নতুন আঘাত এনে দিয়েছে। জীবনের প্রতি তাঁর অনুভূতি আরো সুগভীর হচ্ছে। তিনি বলেন,
'আমি গোবি মরুভূমিতে যাওয়ার পর দেখেছি, সেখানকার গাছের চেয়ে আমাদের এখানকার গাছ ভিন্ন। সেখানে গাছ দেখতে একটি মুড়ার মতো। কিন্তু সে মৃত নয়। নতুন বছরে সে আবার অঙ্কুরিত হবে। তাই দেখা যায়, বিশ্বে এত বেশি কষ্ট পাওয়া মানুষ ছাড়াও, আরো রয়েছে কষ্ট পাওয়া গাছও রয়েছে। আস্তে আস্তে নিজেকে অনুধাবন করতে পারি, আগে মনে করছিলাম যে, খামারের জীবন কষ্টকর, কিন্তু এখন মনে করি সেটার কোন মানে নেই।'
অনেকে মনে করেন, একজন সত্যিকারের কবি অবশ্যই দেবতার সুগভীর ছায়া পান। কারণ তাঁর ভাষার প্রতিভা জন্ম থেকেই ভেতরে থাকে। কিন্তু ফু থিয়ান লিনের জীবনে কিছু প্রতিভা ছাড়াও, আরো রয়েছে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা। তিনি একটানা কয়েক দশক কবিতা লিখে আসছেন। 'সবুজ সুর' নামে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ১৯৮৩ সালে দেশের প্রথম শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পায় এবং 'ফু থিয়ান লিনের কবিতার বিশেষ কিছু অংশ' নামে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ২০০৩ সালে সারা দেশের নারী সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছে। তিনি বলেন,
'আমি মনে করি, কবিতা লিখে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম। যদিও শুরুতেই আমি ভালোভাবে লিখতে পারছিলাম না, কিন্তু কয়েক দশক ধরে আমি একটানা লিখতে থাকি। অনেকে আমাকে জিজ্ঞাস করেন যে, আমি কীভাবে কয়েক দশক ধরে একটানা কবিতা লিখে যাচ্ছি? কিন্তু আমি মনে করি, আসলে সেটা অবিচল নয়, আমি শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছাতেই কবিতা লিখি।'
কয়েক বছর আগে ফু থিয়া লিন দাদী হয়েছেন। মেয়ের শিশুটির যত্ন নেয়ার জন্য তিনি কতিবার মঞ্চ থেক তিন বছর দূরে রয়েছেন। তিন বছর পর তার নিজের নাতির বড় হওয়ার প্রক্রিয়া রেকর্ড করার ডাইয়ারি 'রবিবারে পাহাড় লম্বা হবে' প্রকাশিত হয় এবং তা ব্যাপক সমাদর পেয়েছে। তিনি বলেন,
'আমার নাতি কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার পর আমি আবার কবিতা লিখতে শুরু করি। কিন্তু কি বিষয় নিয়ে লিখবো? আমি চিন্তা করছি যে, আমার নাতিকে নিয়ে লিখবো এবং সে কত মনোরম। তার করা প্রতিটি কাজ, বলা প্রতিটি কথা কত বিশুদ্ধ ও সুন্দর। আমি মনে করি, একজনের জন্ম থেকে কবিতার অনুভূতি ভরপুর। তাই চীনের একটি কথা আছে, একজনের জন্ম থেকে, তার চরিত্র দয়ালু। আমি একথাটি বিশ্বাস করি।'
ফু থিয়ান লিনের কবিতা পড়ার সময় মন ভরে যায়। যেন একটি নদীর স্রোতের মতো। এতে বড় ঢেউ নেই কিন্তু যেন প্রশান্তিভরে বয়ে যাচ্ছে নিশিদিন। (লিলি)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |