|
চলতি বছরের ২৫ নভেম্বরে পেইচিং শহরের ছাও ইয়াং জেলার মেই চি তিয়ান স্ট্রিটের চাও ইং পেই লি কমিউনিটি, কমিউনিটি জীবনের ইন্টারনেট, চিয়ে ইয়া আন্তর্জাতিক লিমিটেড কোম্পানি এবং হো সিয়ে সাংস্কৃতিক শিল্প গোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত 'আমি আমার পুর্বপূরুষ'নামে ধারাবাহিক আলোচনা সভা 'আমার বাড়ি'নামে একটি নিরামিষাশী খাদ্যের রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পেইচিং শহরের ছাও ইয়াং জেলার মেই চি তিয়ান স্ট্রিটের চাও ইং পেই লি কমিউনিটি, যাকে পরে সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়, 'চাও পেই কমিউনিটি'। এটি দূতাবাসের তৃতীয় এলাকায় অবস্থিত। এ অঞ্চলটি জনবহুল, বাণিজ্যিক দিক থেকে উন্নত এবং এখানে চীন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির সংমিশ্রণ রয়েছে। এ কমিউনিটির পার্টি সম্পাদক সোং শুয়াং ইয়ু বলেন, এখানকারর এই বিশেষ ভৌগলিক অবস্থা তাঁদেরকে এবারের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। তাঁরা আশা করেন, এ ধরণের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনাদেরকে পিতামাতাসহ গুরুজনদের প্রতি ভক্তিপূর্ণ আচরণ ও ভালোবাসার কথা বলা ছাড়াও, আরো বেশি বিদেশী বন্ধুরা চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং চীনকে ভালোবাসবেন।
সুপ্রাচীনকালে একটি কথা ছিলো। তা হলো 'সকল দয়ার মধ্যে পিতামাতার প্রতি সম্মান জানানোর ভক্তিপূর্ণ আচরণ শীর্ষ স্থানে থাকতে হবে'। যদি একজন তাঁর পিতামাতাকে ভালো না বাসেন, তাহলে তিনি অন্যকে ভালোবাসতে পারবেন কী করে? পার্টি সম্পাদক সোং আমাদেরকে জানান,
২০১০ সালে হলো আমাদের কমিউনিটিতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরকে সেবা করার বর্ষ। এ বছরে আমরা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য অনেক কাজ করেছি। চলতি বছর প্রায় শেষ হয়ে এলো। আমরা চিন্তা করছি যে, আমাদের আরো কিছু করতে হবে। আমাদের কমিউনিটিতে থাকা 'আমার বাড়ি'নামে নিরামিষাশী খাদ্যের রেস্তোরাঁও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য কিছু করতে চায়। তাই আমরা একসাথে এবারের আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ভালোবাসা হলো আমাদের জাতির ঐতিহ্যবাহী গুণ। আমরা কোনদিন তাকে ভুলবো না। একটি পরিবার যদি সম্প্রীতিমূলক হয় তাহলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলবে। পরিবারের সম্প্রীতি মানে পিতামাতাদের প্রতি সন্তানদের সম্মান প্রদর্শন এবং সন্তানদেরকে পিতামাতাকে বুঝতে পারা।'
চীনারা কনফুসিয়াস ও মেনসিয়াসের ধারা মেনে চলেন। পার্টি সম্পাদক সোংয়ের মুখে উচ্চারিত 'সম্প্রীতি'আসলে চীনা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। সম্প্রীতিও এবারের অনুষ্ঠানের একটি মূল বিষয়, অর্থাত্ হো সিয়ে সাংস্কৃতিক শিল্প গোষ্ঠীর এবারের এ আয়োজন। হো সিয়ে সাংস্কৃতিক শিল্প গোষ্ঠীর প্রবর্তক ম্যাডাম লিয়াও শা ও ইয়ে মাও সাহেব হচ্ছেন গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের চীনের বিখ্যাত পুরুষ ও মহিলা দ্বৈতসঙ্গীত শিল্পী। তাঁরা আগে ছিলেন নৌবাহিনীর রাজনৈতিক নাচগান দলের শিল্পী। তাঁদের শিল্পকর্ম 'লিউ ইয়াং নদী'ও 'চিউ চিউ ইয়েন ইয়াং থিয়ান'কোটি কোটি চীনাদের মন জয় করেছে। তাঁদের গান গাওয়ার সেবা দিন দিন ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মঞ্চ ত্যাগ করে পেইচিংয়ে হো সিয়ে সাংস্কৃতিক শিল্প গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছেন। চীনা ভাষায় হো সিয়ে মানে সম্প্রীতি। তাঁদের সাংস্কৃতিক কোম্পানি প্রসঙ্গে ম্যাডাম লিয়াও শা বলেন,
তখন আমরা একটি কোম্পানি নিবন্ধিত করার জন্য মোট ৫টি নাম দিয়ে আবেদন করেছিলাম। অন্যান্য চারটি নামও অন্য লোকের উদ্যোগে নিবন্ধিত হয়েছে। শুধুমাত্র হো সিয়ে এ নামটিই ব্যবহার করা হয় নি। তাই আমরা হো সিয়ে এ নামটি বেছে নিয়েছি। পুরুষ ও মহিলার দ্বৈতসঙ্গীতের সর্বোচ্চ মান হলো সম্প্রীতি। যদিও আমরা মঞ্চ ত্যাগ করেছি এবং গান গাইনি, কিন্তু আমরা শিল্পকে ত্যাগ করিনি। আমরা শিল্পীদের উদ্দীপনা দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নতুন এক ধরণের শিল্প ও সংস্কৃতির সৃষ্টি করছি।
'আমার বাড়ি'নামে নিরামিষাশী খাবারের রেস্তোরাঁ হলো হো সিয়ে সাংস্কৃতিক শিল্প গোষ্ঠীর পরিচালিত রেস্তোরাঁর মধ্যে একমাত্র নিরামিষাশী খাবারের রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁটির নির্মাণ শৈলী চীনের সুগভীর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। রেস্তোরাঁয় দাঁড়িয়ে তিনটি বড় গাছের ছবি দেখা যায়। ম্যাডাম লিয়াও শা বলেন,
এ তিনটি গাছ আলাদা আলাদা পরিবার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও জাতির সম্প্রীতি। এখন সম্প্রীতিমূলক সমাজ স্থাপন করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। সম্প্রীতিমূলক পথ কোথায় পাওয়া যায়? আমাদের প্রত্যেকের তা নিজ উদ্যোগে করতে হবে। আমরা সম্প্রীতিমূলক পরিবার ও আদর্শ কমিউনিটি নির্মাণ করছি এবং আমরা সারা চীনে, তথা বিশ্বের কাছে আমাদেরকে তুলে ধরতে চাই, ফলে আরো বেশি লোক আমাদের চীনের সংস্কৃতি জানতে পারবে।
এবারের অনুষ্ঠানের আরেকটি উদ্যোক্তা হিসেবে চিয়ে ইয়া আন্তর্জাতিক লিমিটেড কোম্পানি বরাবরই চীনের সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তুলছে। এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুন লি লি আমাদেরকে জানান,
আমাদের কোম্পানির লক্ষ্য হলো বিশ্বে চীনের সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তোলা, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা, সংস্কৃতিকে প্লাটফর্ম হিসেবে অর্থনীতির সহযোগিতা ত্বরান্তিব করা এবং অর্থনীতিকে শক্তির নিশ্চয়তা হিসেবে সংস্কৃতির সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত করা। 'চায়নিজ চার্ম 'নামের প্রকল্প হলো চলতি বছর আমাদের শুরু হওয়া প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম। আমরা আশা করি, চীনের আরো বেশি সংস্কৃতিকে বিশ্বে জনপ্রিয় করে তুলতে পারবো। পরিবার সম্পর্কিত সংস্কৃতি চীনের সংস্কৃতির একটি অংশ। আমরা এমন ধরণের আলোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে আরো বেশি লোকের কাছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানাতে ইচ্ছুক। চীনাদের একটি কথা আছে, তা হলো 'পরিবারে একজন বৃদ্ধ থাকলে তা খুবই সুখের ব্যাপার'।
আমাদের বড় হওয়ার পথের জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য পিতামাতা আমাদের নানা অভিজ্ঞতা শেখাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বেশি কথা শোনার পর আমাদের ধৈর্যও থাকবে না। আসলে আমরা প্রত্যেকেই ধন্যবাদ জানানোর মন পোষণ করে এসব কথা শুনলে বোঝা যাবে যে, তাঁদের জীবনের সব কথা সত্য। চীনের সভ্যতার পাঁচ হাজারেরও বেশি বছরের ইতিহাস আছে। আমাদের পুর্বপূরুষ আমাদের জন্য অনেক সত্য রেখে গিয়েছেন। এসব সত্য আমাদের নৈতিকতার গুণ বাড়ানো ছাড়াও, ঔষুধের মাধ্যমে রোগীদের চিকিত্সা সেবা দেয়া যায়। এবারের ধারাবাহিক আলোচনা সভার প্রথম দিনে শিক্ষক চি রান বলেন, আমাদের চীনা সংস্কৃতি মনস্তাত্ত্বিক রোগ প্রতিকার করা ছাড়াও, শরীরের রোগও প্রতিকার করতে পারে। তিনি বলেন,
আমি একজন মনস্তত্ত্ব-সম্বন্ধীয় চিকিত্সক। দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে আমি সবার আগে পশ্চিমা পদ্ধতিতে চিকিত্সা করতাম। ২০০৫ সালে আমি চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটি অংশের মাধ্যমে রোগীদেরকে দুশ্চিন্তা, বিতৃষ্ণা ও অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতার প্রতিকার করতে শুরু করি এবং ভালো ফলাফল পেয়েছি। সব মনস্তত্ত্ব রোগের মূল হলো ভয়। কীভাবে ভয় দূর করবো? তাই আমি চীনের সম্প্রীতিমূলক সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রতিকার করি। ভয় লুপ্ত হলে শিষ্টতা আসবে। মানুষ শিষ্টাচারকে মেনে চললে শরীরের রোগসহ কোন রোগেই আক্রান্ত হবেন না।
সুশীল মন বজায় রাখা ছাড়াও, দৈনন্দিন খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চীনারা আরো বেশি নিরামিষাশী খাদ্য খেতে শুরু করে জীবনের এই সুস্বাস্থ্য উপায় জনপ্রিয় করে তুলছেন। নিরামিষাশী খাদ্য প্রসঙ্গে 'আমার বাড়ি'রেস্তোরাঁর মালিকা লিয়াও শারও নিজের মতামত আছে। তিনি বলেন,
স্বাস্থ্য, পরিবেশ-বান্ধব ও বিজ্ঞানের দিক থেকে বলা যায়, নিরামিষাশী খাবার খেতে হবে। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। আমি দু'বছর ধরে নিরামিষাশী খাবার খেয়ে আসছি। আমার অনুভূতি অনেক ভালো। আমি খুব কম রোগেই আক্রান্ত হয়েছি। আমার মনে হয়, নিরামিষাশীর খাবার খাওয়া এক ধরণের অনুশীলনযোগ্য সুস্বাস্থ্যগত উপায়। পৃথিবী সংরক্ষণের জন্য সহায়ক হবে।
মার্টিনা কোসোলো হচ্ছেন চিয়ে ইয়া আন্তর্জাতিক লিমিটেড কোম্পানির একজন কর্মী। তিনি চীনা সংস্কৃতিকে পছন্দ করার কারণে ইতালি থেকে চীনে এসেছেন। তাঁর একটি সুন্দর চীনা নাম আছে। তা হলো লি মেই শান। মেই শানের চীনা ভাষা অনেক ভালো। আমরা বিশ্বাস করিনি, তিনি মাত্র দুই মাস পেইচিংয়ে এসেছেন। তিনি বলেন,
আমি ইতালিতে তিন বছর ধরে চীনা ভাষা শিখেছি। এখন চিয়ে ইয়াতে ইতালি ও চীনের সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমি চীনকে খুব ভালোবাসি এবং এখানে চিরদিন থাকতে চাই। কিন্তু চীনে আসার আগে আমার উদ্বেগও ছিল। আমার মা একজন নিরামিষাশী। তাই আমি বরাবরই নিরামিষাশী খাদ্য খেয়ে আসছি। চীনে আসার পর আমি আবিষ্কার করেছি যে, আমার উদ্বেগের কোন দরকার ছিল না। চীনাদের মধ্যে অনেকেই নিরামিষাশী খাবার খাচ্ছেন। এটাই জীবনের এক ধরণের সুস্বাস্থ্যগত পদ্ধতি। তা অনেক অল্প-কার্বন ও পরিবেশ-বান্ধব।
সেদিনের আলোচনা সভার শেষে ছিল আরো একটি মজার অংশ । তা হলো অতিথিদেরকে উপহার দেয়া। এসব উপহার আসলে ধন্যবাদ জানানোর দিনে এ রেস্তোরাঁর খাদ্য-পরিবেশনকারীদের পরস্পরকে উপহার হিসেবে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা এবারের অনুষ্ঠান জানার পর এসব উপহার অতিথিদেরকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা আশা করেন, তাঁদের ভালোবাসা অব্যাহতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনুষ্ঠানের শেষে আমরা কাও চুন নাম কমিউনিটির একজন বৃদ্ধের সাক্ষাত্কার নিয়েছি। তিনি হচ্ছেন চাও পেই কমিউনিটির একজন অধিবাসী। তিনি বলেন,
আমাদের কমিউনিটিতে এমন ধরণের যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তা তাত্পর্যসম্পন্ন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা তরুণ-তরুণীদের জন্য এ অনুষ্ঠান সহায়ক হবে এবং আমাদের কমিউনিটির সম্প্রীতির জন্য অনুকূল হবে।
আজকের অনুষ্ঠানের শেষে আমরা এবারের অনুষ্ঠানের জন্য তিং চিয়াও নামে চীনের বিখ্যাত হস্তলিপিকারের লেখা একটি কবিতা শোনার মধ্য দিয়ে আমাদের আজকের অনুষ্ঠান শেষ করবো।
জীবনে মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে হবে, পুর্বপূরুষদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য নিজের শিকড় খুঁজতে হবে, আমরা বড় বাড়ির বংশাবলী, বংশানুক্রমে পুর্বপূরুষের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। চীনা সংস্কৃতি আজ চাও পেই কমিউনিটিতে প্রচলিত হচ্ছে, প্রত্যেক অতিথিকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এ ক্যালিগ্রাফি লিখেছি। (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |