|
সম্প্রতি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ইসরাইলে সি আর আই সংবাদদাতাকে একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । সাক্ষাত্কারে তিনি চীনের উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন । আমাদের সংবাদদাতা ইউয়ান ছি জেরুজালেম থেকে এ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। শিমন পেরেস বলেছেন , মোটের উপর বলতে গেলে আমি মনে করি , চীন বৃহত্ দেশের বৈশিষ্টসম্পন্ন একটি মহান দেশ ।
শিমন পেরেস চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিকে পছন্দ করেন । ১৯৯৮ সালে তার চীন সফরকালে তিনি চীনের প্রাচীন কবি লি পাইয়ের কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন । কবিতায় বলা হয় , মাথা উঁচু করে আকাশের পূর্ণিমা চাঁদের দিকে তাকাই , দূরদুরান্তের জন্মস্থানের কথা মনে পড়ে । চীনের মতো ইসরাইলও কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতাসম্পন্ন একটি দেশ । চীনের দীর্ঘকালের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তার নিজের উপলব্ধি থেকে তিনি বলেন , বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা একই নয় ,তাই ইতিহাস সম্পর্কে তাদের ধারণাও ভিন্ন । চীনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইতিহাস নিয়ে আলোচনার সময় তারা চীনের ইতিহাস বর্ণনায় দিন , সপ্তাহ বা মাস দিয়ে হিসাব করেন না , তারা হাজার বছর আগের বা আরো প্রাচীনকালের কথা উল্লেখ করেন । তাই আপনি চীনে গিয়ে চীনের দীর্ঘ ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার কথা শোনার সুযোগ পান ।
সাক্ষাত্কারে প্রেসিডেন্ট পেরেস শিক্ষা ও মানুষের নৈতিকতার ওপর চীনের গুরুত্ব দেয়ার ধারণার প্রশংসা করে বলেছেন , এটা চীন ও ইসরাইলের সংস্কৃতির একটি মিল । তিনি বলেন , চীনারা ও ইসরাইলীরা এ কথা প্রায়ই বলেন যে আমি আজ যে সাফল্য অর্জন করেছি , তার মূলে রয়েছে ছোট বেলায় আমার মায়ের উপদেশ ও শিক্ষা। হাজার হাজার বছর ধরে মায়েরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে তাদের সন্তানকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেন , তারা নৈতিকতার দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন ।
একজন মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধ সঠিক না হলে তার ভবিষ্যত ভালো হবে না । এ ক্ষেত্রে তিনি চীনের প্রাচীন শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদ কনফুসিয়াসের তত্ত্বের গভীর মূল্যায়ন করেন । তিনি বলেন , কনফুসিয়াস বলেছিলেন ,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষা । এখন আমরা সবাই এ কথা বুঝতে পারি , কিন্তু কনফুসিয়ান আড়াই হাজার বছর আগেই এ কথা বলেছেন । তিনি আরো বলেন , মানুষের জীবনে তিনটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ । এ তিনটি ব্যাপার হল প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক , ভালো স্কুল ও ভালো শিক্ষক । এ ক্ষেত্রে ইসরাইল ও চীনের অনেক মিল রয়েছে ।
প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস চীনের সঙ্গে বিনিময়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন । ১৯৯৩ সালে ইসরাইল ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সময় পেরেস ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে চীন সফর করেছিলেন । এর পরের বছরগুলোতে তিনি গড়পড়তা প্রতি চার বছর একবার চীন সফর করেন । ১৯৯৮ সালে তিনি ইসরাইল –চীন সম্পর্ক উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান আর ২০০২ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে চীন সফর করেছেন , ২০০৮ সালে তিনি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন ।
চীনে তার সবক'টি সফরই তার মনে গভীর রেখাপাত করেছে । চীন সফরকালে তিনি নিজের চোখে চীনের বিরাট পরিবর্তন দেখেছেন । তিনি বলেন , পেইচিং আর আগের সেই প্রাচীন নগর নয় । আমার প্রথমবার চীন সফরের সময় রাস্তায় অজস্র সাইকেল ছিল , এখন পেইচিংয়ের রাস্তাগুলোতে সাইকেল বলতে গেলে নেই ,এখন শুধু মোটর গাড়ি আর গাড়ি । পেইচিংয়ে সুন্দর সুন্দর স্থাপত্যগুলো বিশ্বের উন্নত মানে পৌঁছেছে । আমি যেন একটি নতুন পেইচিং দেখেছি । চীন হত দরিদ্র অবস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে । আজকের চীনে সবাই ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী । বিশ্বের বিভিন্ন দেশও চীনের জন্য গর্ববোধ করে । বিশ্বের শতাধিক দেশ চীনের উন্নয়ন , ঐক্য ও প্রাণবন্ত পরিস্থিতিকে প্রশংসার চোখে দেখে ।
প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস শুধু চীনের দ্রুত উন্নয়ন নয় , চীনের শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি ও সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার প্রস্তাবের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন । তিনি মনে করেন এটা চীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । কিছু দিন আগে তিনি ইসরাইলে চীনা দূতাবাসে চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বলেন , আমি আশা করি চীন আরো শক্তিশালী হবে। চীনের নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবিত সুশম বিশ্ব গড়ে তোলার ধারণা বিশ্বের অনেক দেশের সমর্থন পেয়েছে । এ নীতির আলোকে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসার ঘটাবে এবং তা বিশ্ব উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে । চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানো আনন্দের ব্যাপার । আমি ইসরাইল ও চীনের সম্পর্ক উন্নয়নে আশাবাদী।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |