|
২০০১ সালে বিশিষ্ট এক সমালোচক ও তত্ববিধের উদ্যোগে নির্বাচিত চীনের প্রথম ৫০জন শ্রেষ্ঠ লেখকের তালিকায় হান শাও কোং রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে । তাঁর সাহিত্যকর্ম চীনে তুমুল সাড়া জাগানো ছাড়াও, ইংরেজী, ফরাসী ও জার্মানসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। সমাজ ও জীবনের প্রতি তাঁর সাহিত্যকর্মে ফুটে ওঠা গভীর সমঝোতা সবসময় সাংস্কৃতিক এবং পাঠক মহলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম।
সমাজ ও জীবন প্রসঙ্গে তাঁর সাহিত্যকর্মে দেখানো গভীর সমঝোতা সবসময় সাংস্কৃতিক মহলে এবং ব্যাপক পাঠকদের মধ্যে তুমুল সাড়া জাগাতে সক্ষম।
গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে হান শাও কোং প্রথমে 'সংস্কৃতির শিকড়'নামে তাঁর একটি প্রবন্ধে বলেছেন, সংস্কৃতির শিকড় আছে। এ শিকড়টি জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ভূমিতে বদ্ধমূল হওয়া উচিত্। ফলে চীনের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সংস্কৃতির শিকড় খুঁজে বের করার উত্তাল জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এক দল লেখক ঐতিহ্যবাহী ধারা ও জাতির সাংস্কৃতিক মনস্তত্ত্বের অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করেন। তাঁদের রচনাকে 'শিকড় অনুসন্ধানী সাহিত্য' বলে গণ্য করা হয়।
এ প্রসঙ্গে হান শাও কোং মনে করেন, চীনা সভ্যতা বিশ্বে বিরল, নিরন্তর ও বিলুপ্ত না হওয়া একটি বিশেষ সভ্যতা। চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি চীনের গ্রামাঞ্চলে বেশি বিরাজ করে থাকে। তাই গ্রামাঞ্চলের লেখকদের রচনায় এ সংস্কৃতির উত্স্য হওয়া উচিত্। তিনি বলেন,
"আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি। তা হলো চীনের গ্রামাঞ্চলের সমাজ ও নিজস্ব সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করছি। আমি মনে করি, পাঠকরা আমার সাহিত্যকর্ম পড়তে যে পছন্দ করেন তার কারণ হলো তারা আমার লেখনীর মাধ্যমে চীনের অন্য দিকের বিষয়কেও দেখতে ও জানতে পারেন।"
হান শাও কোংয়ের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য তাঁর তরুণবেলার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। গত শতাব্দীর ৬০ বা ৭০'র দশকে চীনের 'সাংস্কৃতিক বিপ্লব"অভিযানের শেষ পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী যারা শহরে বসবাস করতেন তারা সরকারের অনুরোধে শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করতে শুরু করে। ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক স্কুল থেকে মাত্র স্নাতক হওয়া ১৫ বছর বয়সী হান শাও কোং হু নান প্রদেশের ফো লুও জেলায় কৃষি কাজ করতেন। শহর ও গ্রামাঞ্চলের ব্যাপক ব্যবধানে সেই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের তারুণ্যপূর্ণ সময়পর্বে ভালোবাসা ও ঘৃণা, বেদনা ও খুশি, রক্ত ও চোখের জল বিরাজমান ছিল। এসব অভিজ্ঞতা তাঁদের জীবনের স্মৃতির অক্ষরে পরিণত হয়। হান শাও কোং বলেন,
"সেই যুগে অনেকে ব্যাপক উষ্ণতা পোষণ করে বিপ্লবের সেবায় ঝাপিয়ে পড়েন। পরের মানুষ হয়তো সেই যুগের লোকের উদ্দীপনার কারণ উপলব্ধি করতে পারবেন না।"
১৯৮৮ সালে হান শাও কোং হু নান থেকে হাই নান প্রদেশে চলে যান। তিনি হাই নান প্রদেশের লেখক সমিতির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাহিত্য চর্চার জীবনে হান শাও কোংয়ের পছন্দের জীবন হলো আচরণের সঙ্গে জ্ঞানের সমন্বয়। তিনি বলেন,
"আচরণের সঙ্গে জ্ঞানের সমন্বয় এই কথাটা আমি খুব পছন্দ করি। যেমন আমি বই পড়তে পছন্দ করি, কিন্তু সবসময় বই পড়তে অভ্যস্ত নই। আমি আচরণের পক্ষপাতী। কিন্তু জ্ঞান না থাকলে আচরণ করা সহজ ব্যাপার নয়।"
অনেক বছর ধরে শহর ও গ্রামে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা হান শাও কোংয়ের জীবন এবং তাঁর রচনায় সৃষ্টির উত্স সমৃদ্ধ করছে। তিনি বলেন,
"২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর আমি অর্ধেক সময় শহরে কাটাই এবং অর্ধেক সময় গ্রামাঞ্চলে কাটাই। আমি মনে করি, এটা আমার স্বপ্নের জীবন। শহর, গ্রামাঞ্চল, সমাজ ও প্রকৃতির সঙ্গে আমার মেলামেশার সুযোগও রয়েছে। মাঝে মাঝে আমি মানুষের মাঝে থাকতে চাই এবং মাঝে মাঝে শান্তভাবে একটি গাছের সঙ্গে থাকতে চাই। শহর ও গ্রাম উভয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছাড়াও, সুদীর্ঘকাল থেকে পর্যবেক্ষণ হারানোর ঘটনাও রয়েছে।"
গ্রামে থাকার সময় হান শাও কোং নিজ উদ্যোগে কৃষি কাজ করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন তিনি কমপক্ষে এক ঘন্টা কৃষি কাজ করেন। তিনি আরো বলেন,
"আমি সবজি চাষ ও বাড়িঘর নির্মাণসহ নানা ধরণের কাজ করতে পারি। আমার মনে হয়, যথাযথ কায়িক শ্রম প্রত্যেক মানুষের জীবনেই প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের মাথা ছাড়াও, আরো আছে হাত ও পা। আমাদের পুরোপুরিভাবে এসব অঙ্গপ্রতঙ্গকে ব্যবহার করা উচিত্। আমি মনে করি, সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যবান থাকার উপায় হলো কায়িক শ্রমের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক শ্রমের সমন্বয়। "
হান শাও কোংয়ের সাহিত্যকর্মে তিনি সবসময় কৃষকদেরকে বন্ধু ও সুপ্রতিবেশী হিসেবে তাঁদের সত্যিকার অবস্থা তুলে ধরেন।
কোন কোন সমালোচক বলেন, বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে যে, হান শাও কোং শহর ও গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছেন, আসলে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে আধুনিক অবহেলিত গ্রামীন সমাজ ও কৃষকদের সঙ্গে পনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেন। (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |