|
সম্প্রতি ১৭তম পেইচিং আন্তর্জাতিক বই মেলা পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের ৫৮টি দেশ ও অঞ্চলের ১ হাজার ৮৪১টি প্রকাশনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবারের বই মেলায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল দেশি-বিদেশী বিভিন্ন রকমের ২ লাখেরও বেশি বই। একই সঙ্গে দর্শকদের সংখ্যাও দাঁড়িয়েছিল ২ লাখেরও বেশি। বিশ্বে চারটি বৃহত্তম বই মেলার অন্যতম হিসেবে ১৭তম পেইচিং আন্তর্জাতিক বই মেলা পুনরায় দেশি-বিদেশী প্রকাশনা সংস্থার জন্য একটি বিনিময় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে। আচ্ছা বন্ধুরা, আজকের 'সাংস্কৃতিক বিনিময়' অনুষ্ঠানে আমরা এবারের বই মেলার চমত্কার বিষয় নিয়ে আপনাদের শোনাবো।
পাঁচ দিনব্যাপী ১৭তম পেইচিং আন্তর্জাতিক বই মেলা আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে চীনের বই ' বাইরে বিক্রি সংক্রান্ত সাফল্যও প্রদর্শিত' হয়েছে। এ প্রদর্শনীর প্রধান প্রতিপাদ্য হচ্ছে ' বিশ্বে চীনা প্রকাশনা শিল্প'। যা ডিজিটাল প্রকাশনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রকাশনা শিল্প-এর বিদেশে অর্জিত সাফল্যকে প্রদর্শন করেছে।
এবারের বই মেলার উদ্যোক্তা ইউনিট--চীনের বই আমদানি ও রপ্তানি কোম্পানির সংশ্লিষ্ট একজন প্রধান বলেন, এবারের বই মেলায় অংশ নেয়া দেশি-বিদেশী প্রকাশনা পণ্যের সংখ্যা ছিল ২ লাখেরও বেশি। বই মেলা আয়োজনকালে সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি ছিল। সারা চীনের বিভিন্ন প্রধান প্রকাশনা সংস্থা নিজেদের সর্বশেষ সব শিল্প-কর্ম প্রদর্শন করেছে। চীনের প্রকাশনা শিল্প আন্তর্জাতিক প্রকাশনার বৃহত্তম ক্ষেত্রে যোগ দেয়ার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বৈদেশিক বই প্রকাশনা ও জনপ্রিয়তা সম্পর্কিত আলোচনায় চীনের প্রকাশনা গোষ্ঠীর মহাপরিচালক নিয়েই চেন নিং বলেন:
" কর্তমানে আমরা গুরুত্বসহকারে দু'ক্ষেত্রের বিষয়-এর উন্নয়ন করবো। প্রথম ক্ষেত্র হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আধুনিক চীনের পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু কিছু পাঠক চীনা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে উত্তর খুঁজতে পছন্দ করেন। সুতরাং, এ ক্ষেত্রে আমাদের আরো প্রচেষ্টা চালানো উচিত। দ্বিতীয় ক্ষেত্র হচ্ছে আধুনিক সংস্কৃতি। কারণ আধুনিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় চীনের অগ্রগতি। আধুনিক চীনাদের এ জীবন ব্যবস্থা পশ্চিমা দেশগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমরা দায়িত্বশীল। আসলে এ ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যেই প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছি।"
চীনা লেখক ও তাঁদের শিল্প-কর্ম হচ্ছে বিদেশীদের চীনকে জানার একটি কার্যকর চ্যানেল। চীনের হু নান প্রদেশের 'ইউয়ে লু' প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশিত ' চীনের ইতিহাস----বাধ্যতামূলক শিক্ষা ক্লাস সংক্রান্ত পরীক্ষামূলক পাঠ্যপুস্তক বই' ইতোমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একটি বই-এ পরিণত হয়েছে। এটিও চীনা পাঠ্যপুস্তক বই প্রথমবারের মত বিদেশে যাওয়া।
বর্তমানে চীনের প্রকাশনা গোষ্ঠী ইতোমধ্যেই প্যারিস, সিডনি, লন্ডন, ফ্রান্কফট, নিউইয়র্ক, ভানকুভার, সিউল ও টোকিওসহ ৮টি শহরে বিভিন্ন ব্যাপকতার কোম্পানি স্থাপন করেছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে স্থানীয় বাজারে চীনা বই জনপ্রিয় করা। ২০০৯ সালে চীনের প্রকাশনা গোষ্ঠীর সিডনি কোম্পানির প্রকাশিত ১৭টি রকমের বই অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে চীনের ইতিহাস, ভূ-বিদ্যা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়।
চীনের বই-এর 'বাইরে চলে যাওয়া' আসলে শুধু বই রপ্তানি করা ও বই কপিরাইট বিনিময় করা নয়। চেন নিং মনে করেন, চীনা বইয়ের বাইরে চলে যাওয়া হচ্ছে চীনা প্রকাশনা শিল্প বিশ্বে এখন তৃতীয় পথ । এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" তৃতীয় পথ হচ্ছে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করা। আমাদের উচিত বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে বৈদেশিক প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলা। অথচ বিদেশের কিছু বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার কপিরাইট কেনা ।"
একই সঙ্গে ডিজিটাল প্রকাশনা এবারের বই মেলায় অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ডিজিটাল প্রকাশনা কপিরাইটও এবারের বই মেলার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে পরিণত হয়। জাপানের 'তুং ফাং'নামক বই দোকান জাপানের ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে পেইচিং 'থুং ফাং চি ওয়াং' প্রযুক্তিগত লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল সেবা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
বর্তমানে ডিজিটাল প্রকাশনা ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ ও জনশক্তি ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনার চেয়েও বেশ বড়। চীনের বই বৈদেশিক জনপ্রিয় পরিকল্পনায় ডিজিটাল প্রকাশনার ভূমিকা সম্পর্কিত আলোচনায় নিয়েই চেন নিং বলেন:
" 'বাইরে চলে যাওয়ার' উপায় বৈচিত্রময়। আগে প্রধানত কাগজের মাধ্যমে প্রকাশিত হতো। তবে এখন মানবজাতি ইতোমধ্যেই ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। প্রকাশনা শিল্পের ডিজিটাল মানও ধাপে ধাপে উন্নত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট ভান্ডার গড়ে তোলার কাজ করছি। ডিজিটাল ওয়েব-সাইটের অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শুরু করেছি।"
প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এবারের বই মেলায় পোঁছানো দেশি-বিদেশী সংস্করণ বাণিজ্য ক্ষেত্রে চুক্তি হয়েছে মোট ২ হাজার ৩৯৭টি।
চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প ব্যবস্থা সংস্কার গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা প্রকাশনা শিল্প ইতোমধ্যেই 'বাইরে চলে যাওয়ার' নতুন গতিতে এগিয়ে চলেছে। চীনের বৈদেশিক প্রকাশনা কেবল যে চীনের প্রকাশনাশিল্পের একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে তা নয়, তা চীনা সংস্কৃতির বিশ্বে চলে যাওয়া এবং বিশ্ব চীনা সংস্কৃতি জানানোর কৌশলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ---ওয়াং হাইমান
আচ্ছা বন্ধুরা, আজকের 'সাংস্কৃতিক বিনিময়' এ পর্যন্তই। এখন শুনুন 'সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব' অনুষ্ঠানটি।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |