|
সেপ্টেম্বর মাসে সিছুয়ান প্রদেশ মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হয়। আর তার সঙ্গে সবুজ গাছের গন্ধ মিশে এক উপভোগ্য পরিবেশ তৈরি হয়। সূর্যালোক বৃষ্টিকে থামিয়ে দিয়ে উঁচু স্থাপত্য ও সুন্দর পাহাড় ও নদীতে মিশে যায়। এ সুন্দর সময়পর্বে সিছুয়ান প্রদেশ দূরদূরান্ত থেকে আগত সিআরআই'র অতিথিদের স্বাগত জানায়। এ অতিথিরা হলেন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষ শ্রেষ্ঠ শ্রোতাবন্ধু। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাঁদের সঙ্গে সিছুয়ানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো।
চীন আন্তর্জাতিক বেতার ও সিছুয়ান প্রদেশের পর্যটন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ২০০৯ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে 'আমি সিছুয়ান যেতে চাই' শীর্ষক সাহিত্য ও শিল্পকর্ম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর সাত মাসে বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের শ্রোতাবন্ধুরা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ সাহিত্য ও শিল্পকর্ম পাঠান এতে। তাঁরা কবিতা, প্রবন্ধ, ছবি ও চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে কল্পনায় সিছুয়ানের দৃশ্য আঁকেন। অবশেষে অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, আলবেনিয়া, পোল্যান্ড ও কলম্বিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে ৯ জন বিদেশী শ্রোতাবন্ধু বিশেষ শ্রেষ্ঠ শ্রোতা নির্বাচিত হন।
সুন্দর সিছুয়ান পান্ডার জন্মস্থান। সিছুয়ানের কথা উল্লেখ করলে, দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের অবশ্যই চীনের জাতীয় পশু পান্ডার কথা মনে পড়বে। সিছুয়ান প্রদেশের ইয়া আন বিফেংসিয়া পান্ডা ঘাঁটিতে বিদেশী শ্রোতাবন্ধুরা নিজেদের মতো করে আকর্ষণীয় পান্ডা ও কয়েক মাস বয়সী পান্ডাবাচ্চা দেখেন। আনা লারেনটা পোল্যান্ড থেকে এসেছিলেন। তিনি ও তাঁর ছেলে বন্ধু মোমের রং দিয়ে কাপড়ের ওপর দুটি সুন্দর পান্ডার ছবি এঁকেছিলেন। তিনি যখন বাস্তবে পান্ডা দেখার সুযোগ পান, তখন তাঁর চেহারার মধ্যে প্রতিফলিত হয় তাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও ভালো লাগার অনুভূতি।
সিছুয়ান প্রদেশের ইয়া আন জেলা কেবল পান্ডার জন্মস্থান হিসেবেই খ্যাত নয়, ইয়া আনে অবস্থিত মেংতিং পাহাড় হচ্ছে বিশ্ব চা সংস্কৃতি ও চায়ের উত্পত্তিস্থল। মেংতিং পাহাড়ে বিদেশী শ্রোতাবন্ধুরা সুগন্ধি চা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে শিল্পীদের চা শিল্পকর্ম প্রদর্শনী উপভোগ করেন।
চীনা বংশোদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ শ্রেষ্ঠ শ্রোতা ম্যাডাম চেং ই মেংতিং পাহাড়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
"চা সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক বিষয়ই আমাদের জানা ছিলনা। এখানে আসার পর শিল্পীদের প্রদর্শনী দেখে, তাঁদের ব্যাখ্যা শুনে এবং চা পাহাড় দেখে চা সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আরও গভীর হয়েছে। এখানকার চা খাওয়ার সময় বেশ সুগন্ধ পাওয়া যায় এবং ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতীক উপভোগ করা যায়।"
সিছুয়ান প্রদেশের এমেই পাহাড় অতি সুন্দর পাহাড় হিসেবে পরিচিত। এখানকার ভৌগলিক অবস্থা বেশ জটিল; সবচেয়ে উচুঁ পাহাড় ওয়াফোর উচ্চতা ৩০৯৯ মিটার। এমেই পাহাড় সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। গোটা পাহাড়ই উচুঁ। পাহাড়ের গাছ ও ঘাস সবুজ ও তৃণশ্যামল।
দাউত ক্রিয়েমধি এসেছিলেন আলবেনিয়া থেকে। তিনি এই প্রথমবারের মতো চীন সফরে আসেন। অতি সুন্দর এমেই পাহাড় আরোহণ করার পর তিনি বলেন, সিছুয়ান ভ্রমণ হচ্ছে তাঁর জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার।
"আমি প্রথমবারের মতো এমেই পাহাড় এসেছি। এমেই পাহাড়ের গভীর প্রভাব রয়েছে। কারণ আলবেনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উচ্চতা ২৭০০ মিটারেরও কম। এত উঁচু পাহাড় আরোহণ করা আমার জন্য একটি স্মরণীয় ব্যাপার। এখানকার পরিবেশও খুব ভালো।"
সিছুয়ানে আসলে চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত ৮টি রান্না স্টাইলের অন্যতম সিছুয়ান স্টাইলের খাবার খেতে হয়। সিছুয়ান খাবার এর ঝাল ও সুগন্ধের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হল হটপট। হটপট বা গরম পাত্রের চারপাশে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বন্ধুরা মিশে বসেন। শুধু গরম ও সুগন্ধই হটপট খাবারের বৈশিষ্ট নয়; এর সঙ্গে মিশে রয়েছে কয়েক দিনে সৃষ্ট স্মরণীয় মৈত্রী। মেক্সিকোর শ্রোতাবন্ধু হুয়ান কার্লোস বলেন,
"আমি এ খাবার খুবই পছন্দ করি। কারণ গোটা পশ্চাত্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় সকল খাবার খেতে হয় আলাদা আলাদাভাবে; প্রত্যেকে আলাদা প্লেটে খাবার খান। তবে এখানে সবাই মিলে-মিশে একই হটপটে খাবার খাচ্ছি, এটা দারুণ ভালো লাগছে। মিলনের অনুভব খুবই আন্তরিক। আমি ঝাল খাবার পছন্দ করি। এ কারণে সিছুয়ানের হটপট খেতে বেশ ভালো লাগছে।"
'আমি সিছুয়ান যেতে চাই' বিশেষ শ্রেষ্ঠ শ্রোতাবন্ধুদের সিছুয়ান ভ্রমণ ছিল মোট ৬ দিনের। এ ছয় দিনের প্রতিদিনই তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন সিছুয়ানের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার পাশপাশি এখানকার গভীর সংস্কৃতিকেও জানতে ও বুঝতে। যদিও এ শ্রোতাবন্ধুদের জাতি ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন, তবুও চীনকে ভালোবাসা, সিছুয়ানের ভ্রমণকে পছন্দ করা সব একই রকম। সিছুয়ান ভ্রমণ শ্রোতাবন্ধুদের জন্য একটি স্মরণীয় পর্যটন। ফিলিপাইনের শ্রোতা কার্মেলো মার্টিনেস আকুনা বলেন,
"আমার মনে সবচেয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে সিছুয়ান প্রদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ। সিছুয়ানে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি; আবহাওয়াও একটু ঠাণ্ডা। ফিলিপাইনে তো ভীষণ গরম। আমি এখানকার আবহাওয়া খুবই পছন্দ করি। আরেকটি হল আমি পান্ডা দেখেছি। এর আগে আমি কখনো পান্ডা দেখার সুযোগ পাই নি। এটা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছি। আমি বিশ্বাস করি, এ সব দৃশ্য আরও বেশি ফিলিপিনো পর্যটককে সিছুয়ান ভ্রমণে আকৃষ্ট করবে।"
চমত্কার সিছুয়ান ভ্রমণ শেষ হল। এ কয়েক দিনের ভ্রমণ সবার মনে সুন্দর দৃশ্য ধরে রাখার পাশাপাশি স্মরণীয় মৈত্রী সৃষ্টি করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী চীনা চেং ই বলেন,
"আমাদের এ পর্যটক দল ৮-৯টি দেশের বিদেশী বন্ধুদের নিয়ে গঠিত। সবাই ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন। যদিও আমাদের সংস্কৃতি ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন, তবুও এবার সিআরআই'র অনুষ্ঠানে আমরা সুষমভাবে সহাবস্থান করি। চীনের বিরাট পরিবর্তন এবং সিছুয়ান প্রদেশের গভীর প্রভাবের কারণে আমরা অনেক কথা বলতে চাই এবং প্রবন্ধ লিখতে চাই। প্রতিদিনের অনুষ্ঠান শেষে প্রত্যেকের মধ্যে নতুন নতুন অনুভূতি হয়েছে। আমরা এ সম্পর্কে কথা বলবো; নিজের দেশের জনগণ ও সংবাদমাধ্যমকে জানাবো। আমি মনে করি, এ অনুষ্ঠানের আয়োজন চীনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের জনগণের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য একটি অত্যন্ত ফলপ্রসু পদ্ধতি।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |