|
সেদিনের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে সোনালী রংয়ের চুল ও নীল চোখের বাবা-মা ও কালো চুল ও হলুদ চামড়ার চীনা শিশুরা এক সঙ্গে বসেন , দূতাবাসের মধ্যে সর্বত্র ছেলেমেয়েদের হাসি ও আনন্দময় কোলাহল শোনা যায়। চীনা শিশুদের হাসিমুখ দেখে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রাষ্ট্রদূত চান ইয়ে সুইয়ের স্ত্রী ছেন নাই ছিং চীনা শিশু দত্তক নেয়া মার্কিন অভিবাবকের প্রতি তার শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, বেশির ভাগ মার্কিন পরিবার দত্তক নেয়া চীনা শিশুর জন্য ভালো থাকা, খাওয়া ও শিক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা চীনা শিশুদের নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত করতে এবং তাদের জন্মস্থান চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছে। আমরা প্রতি দিনই এই সব অভিবাবকদের কাছ থেকে চিঠিপত্র বা ইমেল পাই। তারা তাদের চিঠি বা ইমেলে চীনা দূতাবাসের কাছ থেকে চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কিত বইপত্র , ছবি , হস্তশিল্প দ্রব্য এমনকি চীনা মুদ্রা পাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান, যাতে এ সব জিনিস দেখে তাদের দত্তক নেয়া চীনা শিশুরা বুঝতে পারে তারা কোথা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে।
মার্কিন কংগ্রেসের শিশু দত্তক বিষয়ক পরিষদের প্রতিনিধি ক্যাথলিন স্ট্রোটমেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শিশু দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রের সহযোগিতার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শিশু দত্তক নেয়া ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিনের সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। চীনের শিশু দত্তক নেয়ার ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা এ ব্যবস্থা দিয়ে চীনা শিশুদের জন্য সুখী পরিবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।
চীন সম্পর্কে দত্তক নেয়া শিশুদের মনের ছাপ দৃঢ করার জন্য সেদিন চীনা দূতাবাস শিশুদের অনেক ছোট ছোট উপহার দিয়েছে। চীনের হস্তাক্ষর , পেপার-কাটিং ও মাটির পুতুলসহ ছোট ছোট হস্তশিল্প দ্রব্য ছেলেমেয়েদেরর খুব পছন্দ হয়। চীনা শিশু দত্তক নেয়া মার্কিন অভিবাবকরা তাদের ছেলেমেয়েকেও চীনের সংস্কৃতি জানতে উত্সাহ দেন। চীনা মেয়ে ছুন ইয়েনের বয়স আট বছর, সাত বছর আগে মেয়েটি যুক্তরাষ্ট্রে আসে। পাঁচ বছর বয়স থেকে ছুন ইয়েনের বাবা পেট্রিক ব্রুকোভার মেয়েটিকে চীনা বক্সিং উস্যু শিখতে পাঠান । তিনি আশা করেন তার মেয়ে জানবে সে একটি চীনা মেয়ে। ব্রুকোভার বলেন, আমার মেয়ে ছুন ইয়েন চীন সম্পর্কে কিছুই জানে না । আমরা আশা করি চীনা বক্সি উস্যু শেখার মাধ্যমে চীনের সঙ্গে তার যোগাযোগ শুরু হবে। আমরা আজকের মতো এ ধরনের আরো কর্মসূচীতে অংশ নিতে আগ্রহী। আগামী বছরের গ্রীষ্মকালে আমরা তাকে চীনে নিয়ে যাবো এবং সেখানকার উস্যু ট্রেনিং কোর্সে অংশ নেবো। আমরা ছুন ইয়েনকে চীন সম্পর্কিত সব কর্মসূচীতে অংশ নিতে উত্সাহ দেব । আমরা আশা করি , সে কিছু চীনা ভাষাও শিখবে।
সেদিনের অনুষ্ঠানে আগাগোড়া আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজমান করছিল। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চান ইয়ে সুই এ কর্মসূচীর মধ্যে চীন-মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন আশার আলো দেখেছেন । তিনি বলেন, হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের ভিন্ন জাতির মানুষ এক সাথে বসবাস করে একই পরিবারের সদস্য হয়েছে, তারা সংস্কৃতির ব্যবধান অতিক্রম করে সুখী জীবনযাপন করছে । এটা সত্যিই বিস্ময়কর। এতে প্রমানিত হয়েছে যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির সংঘাতের পরিবর্তে সহাবস্থান করতে পারে । তিনি আশা করেন, এ সব ছেলেমেয়েরা চীন-মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষুদে রাষ্ট্রদূত হবে। তিনি আরো বলেন, আমি জেনেছি দুটি দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৯৯৯সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলো মোট ৫৯ হাজার চীনা শিশুকে দত্তক নিয়েছে। এ সব ছেলেমেয়েদের হাসি মুখ দেখে আমি আমাদের সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে দেখতে পাচ্ছি । আমাদের দুটি দেশের সম্পর্ক ও জনগণের বন্ধুত্ব এসব ক্ষুদে দূতের কারণে আরো জোরদার হবে। আমার দৃঢ বিশ্বাস, এ সব চীনে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা আমাদের দুটি দেশকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নে একটি বিশেষ সেতু নির্মান করবে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |