|
"চীনের শান্তি রক্ষা বাহিনী স্থানীয় শান্তি রক্ষী অভিযানে অংশ নিতে পেলে আমি খুব ভাগ্যবান মনে করি"।
"যখন আমি সমস্যার সম্মুখীন, তখন আমি প্রথমেই চীনের ভাইয়ের কথা মনে করি"।
চলতি বছর হলো চীন জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী অভিযানে অংশ নেয়ার ২০ বছর বার্ষিকী। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাতিক সম্প্রতি সুদান ও কংকো মোতায়েন চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় দেখেছেন, বিমানবন্দর, জাতিসংঘের ঘাঁটি এবং বিভিন্ন কর্তব্য সস্থানে চীনের শান্তি রক্ষী সৈন্য দেখা যায়। এর পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী কর্তকর্তা এবং মৈত্রী দেশের বাহিনীও চীনের শান্তি রক্ষী সৈন্যের ভয়সী প্রশংসা করেছে। জাতিসংঘের সুদানস্থ বিশেষ শান্তি রক্ষী বাহিনীর কমান্ডার মোসিস ওবি সম্প্রতি সুদানের রাজধানী কার্তুমে জাতিসংঘ বিশেষ বাহিনীর সদর দপ্তরে আমাদের বেতারের বিশেষ সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় বলেছেন, তিনি কমান্ডার হওয়ার পর কর্তব্য এলাকা পরিদর্শনের সময় চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনী তার মনে গভীর দাগ কেটেছে। তিনি মনে করেন, চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা খুব ভাগ্যবান ব্যাপার। তিনি বলেন:
চীনের সৈন্য বিশ্বে সবচেয়ে শৃংখলভাবে প্রশিক্ষিত এবং খুব পেশাগত। আমি ঘাঁটিতে দেখেছি চীনের সৈন্যরা খুব শৃংখল। ওয়াউ'র জাতিসংঘের ঘাঁটি হলো সবচেয়ে ভালোভাবে নির্মিত এক ঘাঁটি। এর কারণ হলো চীনের প্রকৌশলী সৈন্য দল সেখানে আছে। তাদের নির্মাণের গুণগতমান অনেক ভালো। তারা সড়ক নির্মাণ এবং জাতিসংঘের ঘাঁটির নির্মাণেও অংশ নিয়েছেন। ওয়াউ বিমানবন্দরে আমি দেখেছি চীনের প্রকৌশলী সৈন্যরা উচ্চ গুণগতমানের বৃষ্টি আশ্রয় নির্মাণ করছে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীয় বাহিনীর দ্বিতীয় পর্যালয়ের হাসপাতাল পুরো যুদ্ধ এলাকার জন্য সেবাদান করে। ওয়াউতে এ সেবা চীনের শান্তি রক্ষী চিকিত্সক দেন। আমি জানতে পেরেছি যে, সেখানে চীনের পাঠানো শান্তি রক্ষী চিকিত্সকের মান অনেক উচ্চ। হাসপাতালে অনেক আধুনিক মানের চিকিত্সা সরঞ্জাম আছে। আমি আরো দেখেছি, চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনী ও অন্যান্য দেশের শান্তি রক্ষী বাহিনীর মধ্যে খুব ভালো সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে খুব ভালো সাংস্কৃতিক পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় শান্তি রক্ষী অভিযানে চীনের বাহিনী অংশ নিতে পেলে আমরা খুব ভাগ্যবান মনে করি।
সুদানে পাঠানো চীনের সপ্তম কিস্তি প্রকৌশলী দল চলতি বছরের জুলাই মাসে কর্তব্য এলাকা পৌঁছার পর যথাক্রমে যুদ্ধ এলাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দৃঢ় করা, pilot থাকার জায়গার মেরামত, বিমানবন্দরের মেরামত এবং বি রকমের তাঁবুর স্থাপন, কার্যালয় নির্মাণ এবং গণ ভোটদান স্টেশনের নির্মাণসহ ২৪টি কর্তব্য শুরু করেছে। এতের মধ্যে দশ বারোটি প্রকল্প ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে এবং ব্যবহার করা হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের গণ ভোটদান শুরু হবে। তখন চীনের প্রকৌশলী দল জেলা পর্যায়ের অঞ্চলে গিয়ে ভৌটদান স্টেশনের নির্মাণে অংশ নেবেন।
এসব পরিকল্পনার মধ্যে জেলা পর্যায়ের গণ ভোটদান স্টেশন নির্মাণ কাজ অনেক কঠিন। এসব স্টেশন সবই অনেত দূরত্ব এবং পাহাড়ী অঞ্চলে আছে। নিরাপত্তা রক্ষা, সরবরাহ, প্রকল্পের নির্মাণ এবং চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করা এসব কাজ করতে চাইলে অনেক দূর যেতে হবে। এ ছাড়া এখন ঠিক সুদানের বৃষ্টি ঋতু। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভ মিছিল ও সহিংস হামলাসহ বিভিন্ন উপাদান শান্তি রক্ষী সৈন্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছে। গণ ভোটদান স্টেনের নির্মাণ এখন শান্তি রক্ষী বাহিনীর সম্মুখীন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জমূলক কাজে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের সুদান মোতায়েন দ্বিতীয় যুদ্ধ এলাকার প্রকৌশল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী, চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনীর একটি ৪৫ জনের প্রকৌশলী দল কেনিয়ার নিরাপত্তা রক্ষা দল ও স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় উত্তর বাগারগাজাল রাজ্যে পোঁছেছে এবং সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের প্রথমটি গণ ভোটদান স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। চীনের প্রকৌশলী দল নিজের পেশাগত প্রযুক্তি ও দ্রুত দক্ষতা নিয়ে আবার "চীনের গতি" সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন পক্ষের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। দ্বিতীয় যুদ্ধ এলাকার কমান্ডার, কেনিয়া কর্মকর্তা ওনদিয়েকি বলেন:
গণ ভোটদানের আগে আমাদের সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ হলো গণ ভোটদানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা দেয়া। যাতে আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে সময় মত ভোটদান শুরু করা যায়। চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনীর প্রকৌশলী দল সুষ্ঠুভাবে সাংগঠন হয়। তারা ঐকবদ্ধ হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। এখন সময় অনেক কম। অনুমান করা যায়, ভবিষ্যতে চীনের শান্তি রক্ষী দল আরো গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চীনের প্রকৌশলী সৈন্য দল এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গিয়ে গণ ভোটদান স্টেশনের নির্মাণ করতে হয়। এ সপ্তাহে তারা শুধু দশ দিনের মধ্যে প্রথমটি ভোটদান স্টেশন নির্মাণ করেছে। এর তুলনায় সাধারণ লোকেরা তিন মাস সময় নিয়ে এমন একটি স্টেশন নির্মাণ করতে পারে। তাই একটা খুব কঠিন কর্তব্য।
চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনীর সৈন্যরা জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্তব্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি সড়ক মেরামত, স্থানীয় হাসপাতালে ওষুধ দান করেছে এবং চিকিত্সা প্রশিক্ষণ দেয়াসহ বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে কাছাকাছি জনগণ এবং মৈত্রী দেশের সৈন্যের জন্য যথাসাধ্য সাহায্য দিয়েছে। পাকিস্তানের শান্তি রক্ষী বাহিনীর হেলিকপ্টার দলের কর্মকর্তা তাউকির চীনের শান্তি রক্ষীয় বাহিনীর কথা উল্লেখ করে বলেন:
যে কোন সময় যখন আমরা সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন আমরা প্রথমেই চীনের ভাইয়ের কথা মনে করি। এ সমস্যা তাদের দায়িত্বের ভিতরে হোক, তাদের দায়িত্ব নয় হোক, তারা দ্বিথা না করে আমাদের সাহায্য করে। গত দু'প্তাহে আমাদের হেলিকপ্টারের সমস্যা হয়, আমরা চীনের প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদেরকে অনেক সাহায্য দিয়েছেন। যদিও একাজ তাদের দায়িত্ব নয়। চীনের শান্তি রক্ষী বাহিনী খুব পেশাগত এবং তারা অন্যকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। তারা সবসময় আমাদেরকে যথাসাধ্য সাহায্য করেন। যখন আমরা হাসপাতালে যাই, তখন অনেক চিকিত্সক এসে আমাদের খুব ভালোভাবে চিকিত্সা সেবা দেন।
জাতিসংঘের সুদান মোতায়েন শান্তি রক্ষী বাহিনীর কমান্ডার মোসিস ওবি জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কাজে চীনের বাহিনীর রাখা অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, জাতিসংঘের জন্য চীনের শান্তি রক্ষা ক্ষেত্রের সমর্থন অনেক প্রয়োজন। তিনি বলেন:
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা অভিযানে চীনের অর্জিত সাফল্য খুব উল্লেখযোগ্য। এখন চীন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কর্তব্য এলাকার শান্তি রক্ষা অভিযানে অংশ নিয়েছে। চীন জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কাজে বিরাট সমর্থন দিয়েছে। চীনের মানব সম্পদ, অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি আছে। এ দিকে শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কার্যকর সমর্থন দরকার। চীন জাতিসংঘকে প্রযুক্তি, প্রকল্প নির্মাণ, কর্তব্য সামর্থ্য নির্মাণ ও চিকিত্সাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমর্থন দিতে পারে। চীন এখন বিশ্বের খুব প্রভাবশীল একটি দেশ। চীন এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে শান্তি রক্ষা ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং বিশ্বের শান্তি বাস্তবায়নের জন্য নিজের অবদান রাখছে। আমার বিশ্বাস, এখন চীন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী, চীন যে কোন সময় জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা অভিযানে অংশ নিতে পারবে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা অভিযানে চীনের অব্যাহত সমর্থন খুব প্রয়োজনীয়। জাতিসংঘ চীনের অব্যাহতভাবে উচ্চ মানের সামরিক সদস্য পাঠিয়ে শান্তি রক্ষা কাজে পাঠানোর দরকার।
সুদানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি ছাং উনের মতে, প্রথম গণ ভোটদান স্টেশন নির্মাণ কাজের সম্পন্ন হওয়া এবং ভবিষ্যতে আরো বেশি ভোট স্টেশনের নির্মাণ জাতিসংঘের শান্তি রক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নে চীনের বাহিনীর দৃঢ়তা প্রতিফলন করেছে। তাও সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের ভোটদানে চীনের অবস্থাও প্রতিফলন করেছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি বিভিন্ন পক্ষ পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পারবে যে, সুদানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিভিন্ন পক্ষ ভোটদানের ফলাফল অনুমান করবে না। বিভিন্ন পক্ষের উচিত সুদানের গণ ভোটদানের জন্য চেষ্টা করা এবং সুদানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন করা। যাতে সুদানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়।
(শুয়েই ফেইফেই)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |