|
প্রতিদিন সকালে শাংহাই বিশ্বমেলার উদ্যানে অনেক পর্যটকের মধ্যে খর্ব আকৃতির এক নারীকে ধীর লয়ে হেটে দেখতে পাবেন। ইনি হলেন ৬১ বছর বয়স্ক জাপানের সুপার বিশ্বমেলা ফ্যান ইয়ামাদা টোমিইয়ো। জাপানের বিশ্বমেলা চলাকালে তিনি প্রতিদিন মেলা পরিদর্শন করে সর্বমোট ২৪৩ বার মেলা পরিদর্শনের রেকর্ড গড়েন। শাংহাই বিশ্বমেলা শুরুর আগে, ১৮৪টি টিকিট কিনে তিনি তাঁর বিশ্বমেলা পর্যটন শুরু করেন। বিশ্বমেলার আকর্ষণ সম্বন্ধে তিনি বলেন, বিশ্বমেলা শুধু তাঁর জীবনে নয় গোটা জাপানে এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসে। তিনি বলেন,
"আমি যখন জন্মগ্রহণ করি, জাপানে কিছুই ছিলনা। তখন কেউ জানতো না ভবিষ্যতে জাপানে কি রকম পরিবর্তন হবে। এ সময় বিশ্বমেলার আয়োজন জাপানের জন্য এক স্বপ্ন নিয়ে আসে। বিশ্বমেলা দেখার পর তখনকার জাপানিরা সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সাধন করেন।"
আসলে ১৯৭০ সালে ওসাকা বিশ্বমেলা জাপানের জন্য বিরাট পরিবর্তন বয়ে আনে। এ সম্পর্কে শাংহাই বিশ্বমেলার জাপান ভবনের পরিচালক নরিইয়োশি এহারা মনে করেন, ওসাকা বিশ্বমেলা পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যদ্রব্য, বসবাস ও পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপানের ওপর প্রভাব ফেলে।
"বিশ্বমেলার সবসময় আগের সময়পর্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রস্তাব রয়েছে। যেমন ওসাকা বিশ্বমেলাকালে ফাস্ট ফুড ও হাঁটা পথ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এটা খুবই ব্যাপক, তবে তখন সেটি নতুন জিনিস। তাছাড়া, লোকজনের বাসভবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ওসাকা বিশ্বমেলা থেকে বাসভবন নির্মাণ আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, সহজায়ন বাসভবন মানুষের জীবনযাপন আরও সুবিধাজনক করে দিয়েছে।
ম্যাডাম টোমিইয়ো অনেকবার বিশ্বমেলা পরিদর্শন করেছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্বমেলা মানুষের সাধারণ জীবনযাপন পরিবর্তন করার পাশাপাশি তা মানুষকে অনেক জ্ঞান দিতে পারে।
"বিশ্বমেলা পরিস্কারভাবে শেখার সুযোগ এনে দেয়; তা থেকে বইয়ে নেই এমন অনেক অজানা জ্ঞান পাওয়া। স্কুলে শেখার সময় ক্লাসে যাওয়া বাধ্যতামূলক, তবে বিশ্বমেলা পরিদর্শন করতে গেছি নিজের ইচ্ছায়; বাধ্যবাধকতার জন্য নয়।"
ম্যাডাম টোরিইয়োর মতামতকে শাংহাই বিশ্বমেলা উদ্যানের মহাপরিচালক উ চি ছিয়াং সমর্থন করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি বিশ্বমেলার ওপর গুরুত্ব দেন এবং প্রতিবার বিশ্বমেলা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন। উ চি ছিয়াং মনে করেন, বিশ্বমেলা পরিদর্শন শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। শিশুরা হচ্ছে বিশ্বের ভবিষ্যত, তারা হবে বিশ্বমেলা আয়োজনের সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার।
"বিশ্বমেলা পরিদর্শনের পর শিশুরা অনেক আন্দোলিত হয়। তারা অব্যাহতভাবে উদ্ভাবন করতে চায়। তারা শুধু শেখার জন্য শিখতে চায় না উদ্ভাবনের উত্সাহে শিখতে চায়। অলক্ষ্যণীয় শেখা শিশুরা পছন্দ করে না এবং সহজভাবে বলতে গেলে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে উদ্ভাবনের চাহিদায় তারা যত বেশি শেখে তত বেশি আনন্দিত হয়।"
শাংহাই বিশ্বমেলার কার্যক্রম সমন্বয় ব্যুরোর মুখপাত্র স্যু ওয়েই বলেন, বিশ্বমেলার জ্বানালার মাধ্যমে চীনা অধিবাসীরা বাইরের বিশ্বকে আরো বুঝতে এবং নিজের চিন্তাভাবনাকে প্রসারিত করতে পারবে।
রাজনৈতিক কার্যকর মানোন্নয়ন এবং 'শহর জীবন আরো সুন্দর' লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চীনের কয়েকটি প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তারা শাংহাই বিশ্বমেলা পরিদর্শন করেন। এ পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে উন্নত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এ সম্পর্কে স্যু ওয়েই বলেন,
"শহরের চমত্কার অনুশীলন এলাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভিন্ন শহরের ভিন্ন পদ্ধতিতে নিজের সমস্যার সমাধান করা। যেমন স্বল্প-ভাড়া বাসভবন, পরিবেশ উন্নয়ন পদ্ধতি, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিকে শহরের চমত্কার অনুশীলন এলাকায় রাখা হয়েছে। শহরের কর্মকর্তাদের বিশ্বমেলা পরিদর্শন তাঁদেরকে আলোকিত করবে।
বিশ্বমেলা পরস্পর থেকে শেখা ও আদান-প্রদানের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে দেয়। শহরের চমত্কার অনুশীলন এলাকায় চীনের নেতারা শেখার সুযোগ খুঁজতে পারেন। বিশ্বমেলার চমত্কার অনুশীলন এলাকায় রয়েছে ভ্যানকুভার। ভ্যানকুভার সরকারের কর্মকর্তা ম্যাডাম ওয়েনডি আউ পরিচয় দিয়ে বলেন, ১৯৮৬ সালে ভ্যানকুভার বিশ্বমেলার পর 'ভ্যানকুভার স্কেল' অনুসন্ধান করা হয়ে, যার মাধ্যমে শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার লোকসংখ্যা বাড়ানো এবং পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্ক যথাযথভাবে মোকাবিলা করা যায়।
"১৯৮৬ সালের ভ্যানকুভার বিশ্বমেলায় আরও বেশি আকর্ষণ ছিল। এর মাধ্যমে আমরা একটি আরামদায়ক বসবাস এলাকা নির্মাণ করতে পেরেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক সমাজ এ এলাকাকে সবুজ এলাকা বলে ডাকে। বহুমুখিতা, স্থিতিশীলতা ও সবুজায়ন হচ্ছে আমাদের চিরদিনের লক্ষ্য। আমরা পরিবহনের ওপর গুরুত্ব দেই। তখনকার বিশ্বমেলার প্রতিপাদ্য ছিল পরিবহনের সুবিধা উন্নত করা। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, শহর এলাকার লোকসংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে, তবে সিডান গাড়ির সংখ্যা ১৭ শতাংশ কমেছে।"
ইতিহাসে কাডানায় দুবার বিশ্বমেলা আয়োজিত হয়েছে। ১৯৬৭ সালে মনট্রিল বিশ্বমেলাকালে কানাডার লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ২ কোটির কিছু বেশি। তবে পরিদর্শকের সংখ্যা ছিল ৫ কোটিরও বেশি, যা বিশ্বমেলার একশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে পরিদর্শক সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড। কানাডার প্রধান প্রতিনিধি মার্ক এইচ রাউসওয়েল মনে করেন, বিশ্বমেলার কারণে কানাডা বিশ্বের সামনে উঠে এসেছে। শাংহাই বিশ্বমেলা চীনকে বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করার একটি ভালো সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি বিশ্বমেলা পরিদর্শকদের মাধ্যমে চীন বিশ্বকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবে।
"প্রত্যেকের বিশ্বমেলায় পরিদর্শনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের ভবন দেখা। এ জন্য আমি মনে করি বিশ্বমেলা একটি আদান-প্রদানের উপায়। এ মেলা অবশ্যই শাংহাই শহরের ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে - নতুন পরিবর্তন পদ্ধতি যেমন রেলপথ, পাতালরেল ও নতুন স্থাপত্য। দীর্ঘ দিন থেকে দেখে সম্ভবত আরও বেশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চিন্তাবিদ্যার উত্তরাধিকার রাখা যাবে।"
ভবিষ্যতে শাংহাই বিশ্বমেলা চীনের ওপর প্রভাব সম্পর্কে শাংহাই বিশ্বমেলা উদ্যানের মহাপরিচালক উ চি ছিয়াং নিজের আশাআকাঙ্খা প্রকাশ করে বলেন, "সকল দেশের পুরনো উদ্ভাবন, নতুন উদ্ভাবন ও ভবিষ্যত উদ্ভাবনকে এক জায়গায় এনে দেয় বিশ্বমেলা। চীন একটি কৃষিপ্রধান দেশ ছিল। ৩০ বছরের ব্যবধানে আমরা একটি শিল্পপ্রধান দেশ এবং উত্পাদন শিল্পপ্রধান দেশে পরিণত হয়েছি। আশা করি এবার বিশ্বমেলার মাধ্যমে আরও ৩০ বছর পর চীন একটি উদ্ভাবনী দেশ ও ডিজাইন দেশে পরিণত হবে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |