|
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে, চীনের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি সন্তানকে লালন-পালন করতে অপেক্ষাকৃতভাবে বেশী খরচ লাগে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষার ওপর অত্যন্ত মনোযোগ দেন। সুতরাং শিক্ষার খরচকে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সাধারণ পরিবারের জন্য একটি অত্যন্ত ভারী বোঝা হিসেবে মনে করা হয়। বতর্মানে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারী শিক্ষার ব্যবস্থা মোটামূটি সম্পূর্ণ এবং শিক্ষার ফিও অপেক্ষাকৃতভাবে যুক্তিযুক্ত। কিন্তু সন্তানদের আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অভিভাবক সন্তানদের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত খরচ ব্যয় করেন। যেমন সন্তানদের পড়াশুনা আরও উন্নত করার জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের গৃহ শিক্ষকদের বাসায় রাখেন অথবা কোচিং সেন্টারে পাঠায়। কেবল এ ক্ষেত্রের খরচ মাসে কমপক্ষে ৩ হাজার রেন মিন পির মতো । সংবাদদাতা জেনলিনের একজন বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেতারে কাজ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বেতনের ওপর নিভর্র-করা শ্রেণীতে তার আয় মোটামুটি বেশী। তার দু'জন মেয়ে বতর্মানে পেইচিংয়ে পড়াশুনা করেন। একজন মাধ্যমিক স্কুল আরেক জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। তার স্ত্রী পেইচিংয়ে দু'জন মেয়েকে দেখাশুনা করছেন। এখন তিনি একাই এই সংসার চালাছেন। তাকে সব সময় চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যাতায়াত করতে হয়। বলাবাহুল্য তার আথির্ক চাপ খুব বেশী।
সন্তানদের লালন-পালন করতে এত বেশী খরচ দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজের উপর কী কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদদাতা জেন লিন বললেন
এই নেতিবাচক প্রভাব প্রকট। সবর্শেষ পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিবাহ ও জন্ম হার অনেক পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া হচ্ছে বিশ্বে নিম্ন জন্ম হার বিশিষ্ট দেশগুলোর অন্যতম। ২০০৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রজননযোগ্য মহিলারা গড় ১ দশমিক ১৯ শতাংশ সন্তান প্রসব করে। বতর্মানে দক্ষিণ কোরিয়ায় লোকসংখ্যার হ্রাস দেখা দিয়েছে। এক জরিপে জানা গেছে , ৬০ শতাংশ কোরীয়ন লোক দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেছেন যে, বিয়ের পর তারা সন্তান চান না। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান লালন-পালনের ব্যয় অধিক থেকে অধিকতর বেড়েছে বলে লোকেরা সন্তান চায় না। যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে তাহলে কয়েক দশকের পর জ্যোষ্ঠ সমস্যা খুব প্রকট হয়ে দাঁড়াবে। তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমশক্তির অভাব দেখা যাবে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বতর্মানে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দু'জন সন্তানেরও বেশী সন্তান প্রজনন করেছে এমন পরিবারের জন্য ভতুর্কি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সন্তান প্রসব না করা দম্পতি ও বিবাহযোগ্য সিনগল নারী ও পুরুষদের জন্য কর আদার করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
এতক্ষণ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতার নিপোট শুনলেন। এখন যুক্তারাষ্ট্র থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতা ওয়াং সাং সাং এক এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাত্কারে সংবাদদাতা ওয়াং সাং সাং বললেন,
শুনেছি দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি সন্তান লালন-পালন করতে অনেক খরচ লাগে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্তান বড় করিয়ে তোলা সহজ কাজও নয়। সম্প্রতি যুক্তরাষর্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয় সন্তান পালন-পালনের ব্যাপার নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, এক সন্তানকে ১৮ বছর বয়স পযর্ন্ত পালন-পালন করতে প্রায় ২ লাখ মার্কিন ডলার লাগবে। প্রতি বছর প্রায় ১১ হাজার মার্কিন ডলারের মতো খরচ করা হয়। কিন্তু পরিবার ভেদে ব্যয়ের পাথর্ক্য রয়েছে। সাধারণত যারা বেশী বেতন পান সন্তানদের ওপর তাদের খরচ বেশী। কিন্তু সন্তানদের খাদ্য ও কাপড়চোপড়ের ওপর বিভিন্ন পরিবারের ব্যয় ভিন্ন। হয়তো যাদের পরিবারের অবস্থা ভাল তাদের সন্তানদের জন্য বিলাসী কাপড়চোপড়ে বেশী খরচ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণের পরিবারে সন্তানদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ হল গুঁড়োদুধ ,খাদ্য , কাপড়চোপড় ও খেলনাসহ জিনিপত্রের ওপর। কিন্তু এ সব জিনিস সাধারণ যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারের জন্য কিছুই না। কারণ এ সব জিনিস যুক্তরাষ্ট্রে খুব দামী জিনিস নয়। চিকিত্সার বীমা বলতে গেলে, যদি নিম্ন বেতন ভোগী পরিবার চিকিত্সা বীমা দিতে না পারে তাহলে সরকার তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা দিতে পারে। আসলে যুক্তরাষ্ট্রে আবাসিক ক্ষেত্রে যে ব্যয় হয় তা কনো পরিবারের পক্ষে সবচেয়ে বেশী। সাধারণত আবাসিক ক্ষেত্রের খরচ সান্তান লালন-পালনের মোট ব্যয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ। তা ছাড়া, খাদ্য ও সন্তান দেখাশোনার ব্যয়ও কম নয়। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমশক্তি খুব দামী। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ পরিবারে কোন কাজের লোক রাখে না। তারা নিজের হাতে পরিবারের কাজকর্ম সেরে ফেলে। ৫ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য ব্যয় সবচেয়ে বেশী। কারণ এ পর্যায়ে বিনা পয়সায় সেবার কোন ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে নেই। তবে যদি সন্তানরা ইস্কুলে পড়তে শুরু করে তাহলে পরিবারের পক্ষে ব্যয় আপনাআপনি কমে যায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল পযর্ন্ত শিক্ষা ও পাঠ্য বইয়ের ফি লাগে না।
সন্তান লালন-পালন করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এত বেশী ভতুর্কি দেয় , তাহলে মার্কিনীরা কী সন্তান প্রজনন করতে ইচ্ছুক এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদদাতা ওয়াং সাং সাং বললেন,
যুক্তরাষ্ট্রকে ' সন্তানদের স্বর্গ' বলে আখ্যায়িত করা হয়। গোটা যুরক্তরাষ্ট্রে শিশুরা পযার্প্ত সুবিধা ভোগ করছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রে শিশুর জন্ম হার অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে বেশী। বতর্মানে উন্নত দেশগুলোর শিশু জন্ম হার অনেক নিচু। অন্য কথায় একজন মহিলা গড়ে মাত্র ২ দশমিক ১টি সন্তান প্রজনন করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এর ব্যতিক্রম । গত শতাব্দির ৭০ দশকের শেষ দিকে নারী অধিকার আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠা ও অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শিশু জন্ম হার দ্রুত গতিতে কমে যায়। কিন্তু নবম দশকে শিশুর জন্ম হার আবার বেড়ে যায়। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হার গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করে। সরকারের সুবিধাজনক পদক্ষেপ ছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসনের সংখ্যা বেড়েছে।
সন্তান লাপন-পালন করার ব্যাপারে ভারতের অবস্থা কি রকমের এ প্রশ্নের উত্তরে ভারতে চীনা আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতা হু হুয়ে মিন বললেন,
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমাদের একটি ধারণা অর্জন করা জানা উচিত। তা হল, ভারত একটি বৈচিত্রময় সমাজ। কারণ ভারতের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিরাট পাতর্ক্য রয়েছে। বতর্মানে ভারতের লোখ ১১০ কোটি। তারা বিভিন্ন স্তরে বাস করে। ভারতের বিভিন্ন শহরে যেখানে সেখানে নিহাত গরীব মানুষ দেখা যায়। তাদের সান্তানদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর খবর অত্যন্ত কম। অনেক শিশু পড়াশুনার অধিকার থেকে বাঞ্চিত হয়। ভারতে অনেক ধনী লোকও আছে। কিন্তু গরীব ও ধনিদের মধ্যে আকাশ-পাতাল পাতর্ক্য রয়েছে। বলাবাহুল্য ধনীদের সন্তানরা বিলাসী জীবন ভোগ করেন। তারা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে বিদেশে পাঠায় পড়াশুনার জন্য। এ সব তো গরীবদের পক্ষে অসম্ভব।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |