|
১০৪ বছর বয়সী চৌ ইউ কুয়াং পেইচিং ছাও নেই সড়কের একটি সরু গলিতে বসবাস করছেন। আমাদের বেতারের সংবাদদাতা যখন তাঁর বাড়িতে পৌঁছান তখন তিনি পাঠকক্ষে বসে বই পড়ছিলেন। তিনি মনে করেন, ভাষাই হলো অন্যান্য জীব-জন্তুর সঙ্গে মানবজাতির আলাদা হওয়ার প্রধান কারণ। তিনি বলেন,
"ভাষা কারণে প্রাণীকুল থেকে মানবজাতি আলাদা হয়েছে, শব্দের কারণে আদিমতা থেকে সভ্যতা আলাদা হয়েছে এবং শিক্ষার কারণে পশ্চাত্পদতা থেকে অগ্রগতি আলাদা হয়েছে। আদিমতা থেকে মানবজাতির সভ্যতার দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপ হলো কথা বলা। মানবজাতি কথা বলতে পারে। কিন্তু অন্যান্য প্রাণী পারে না। এভাবে মানবজাতি ও প্রাণীকুল আলাদা হয়েছে। সভ্যতা ও আদিমতার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত রেখা হলো ভাষা। তাই ভাষা সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
চৌ ইউ কুয়াং সংবাদদাতাকে জানান, চীন ভাষাবিজ্ঞান সৃষ্টি করেছে। এখন থেকে ৩,৩০০ বছর আগে প্রাণীজ হাড়ে খোদাই করা শব্দ হচ্ছে চীনের সবচেয়ে পুরানো শব্দ এবং তার মানও অনেক উঁচু। এ শব্দের আবিস্কার এলাকা অর্থাত্ আন ইয়াংয়ে শব্দের জাদুঘর নির্মাণ করা ভাষাবিজ্ঞানের গবেষণা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ফু তান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থশাস্ত্রের অধ্যাপক চৌ ইউ কুয়াং ১৯৫৫ সালে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোনীত হয়ে শব্দের সংস্কার সম্পর্কিত দেশব্যাপী এক সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য পেইচিংয়ে এসেছিলেন। সম্মেলন শেষে তিনি নবগঠিত চীনের শব্দ সংস্কার কমিটিতে যোগ দেন এবং ভাষা ও শব্দ সম্পর্কিত গবেষণায় লিপ্ত হন। তিনি 'হান ইউ ফিন ইন'-এর পরিকল্পনায় অংশ নেন বলে তাঁকে ফিন ইনের প্রবর্তকের মধ্যে অন্যতম একজন বলে মনে করা হয়। তিনি বলেন,
"তখন আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে আমার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু আমার নেতা আমাকে জানান, এটি হচ্ছে একটি নতুন কাজ। সবাই নতুন।"
এভাবে তখন ৪৯ বছর বয়সী চৌ ইউ কুয়াং অর্থশাস্ত্র ত্যাগ করে ভাষাবিজ্ঞানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এখনও পর্যন্ত চীনের শব্দ জাদুঘরের উপদেষ্টা কুয়াং নিজের প্রসঙ্গে সংযতভাবে বলেন, তিনি নিজেকে একজন 'অপেশাদার উপদেষ্টা' বলে মনে করেন।
পেশা পরিবর্তনের পর চৌ ইউ কুয়াংয়ের অংশগ্রহণ করা সব পেশাদারি কাজই ভাষাবিজ্ঞান ও ভাষাবিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি বরাবরই মনে করেন, ভাষাবিজ্ঞান গবেষণায় দুটি বিষয় রয়েছে। একটি হলো সুপ্রাচীন সংস্কৃতি বজায় রাখা এবং আরেকটি হলো বিশ্বের উন্নত সংস্কৃতি থেকে শেখা। তিনি বলেন,
"বর্তমানে একটি পুনর্জাগরণ ভাবাদর্শিক গতিধারা শুরু করার মধ্যদিয়ে সংস্কৃতির শূন্যতা পূরণ করা যায়। একটি সুপ্রাচীন দেশ হিসেবে চীনের সংস্কৃতিতে কোনো শূন্যতা থাকা উচিত্ নয়। তাই একদিকে সুপ্রাচীন বিষয়ে গবেষণা আবার শুরু করা উচিত্, আর অন্যদিকে উন্নত সংস্কৃতি ও বিশ্ব সংস্কৃতি গ্রহণ করা উচিত্। সংস্কৃতিতে কোন রাষ্ট্রীয় সীমান্তরেখা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক কাজ করেছি। কিন্তু অর্জন ও আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। তাই আমাদেরকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।"
কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে চীনা ভাষা শেখা মানুষের সংখ্যা অধিক থেকে অধিকতর হচ্ছে। অনেক তথ্যমাধ্যম মনে করে, চীনা ভাষা বিশ্ব ভাষায় পরিণত হবে। এ প্রসঙ্গে চৌ ইউ কুয়াং চারটি কারণ তুলে ধরেন। প্রথমত: চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে বিদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চীনা ভাষা শিক্ষা আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সুবিধা-সুযোগ যোগাতে সক্ষম হচ্ছে। দ্বিতীয়ত: বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের সংস্কৃতি এবং চীনের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করেন। কারণ চীন হচ্ছে বিশ্বের সভ্যতার এক সুপ্রাচীন দেশ। তাই অনেক গবেষককে তাঁদের গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য চীনা ভাষা শিখতে হবে। তৃতীয়ত: পর্যটন দেশের আর্থিক আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। চীনের পর্যটন সম্পদ অনেক সমৃদ্ধ এবং অব্যাহতভাবে বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। চতুর্থত: অনেক তরুণ-তরুণীর জন্য চীনা ভাষা শেখা একটা হাল ফ্যাশনের ব্যাপার। হান ভাষার উন্নয়নের প্রবণতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে চৌ ইউ কুয়াং বলেন,
"সকল শব্দ জটিল থেকে সহজের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সরলীকৃত শব্দ মানবজাতির শব্দ উন্নয়নের প্রবণতা থেকে আসা ফল। সরলীকৃত শব্দসূচী প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা একটা মৌলিক নীতি অনুসরণ করে আসছি। আর সেটা হলো অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেগুলো গড়ে তোলা। আমরা বিশেষভাবে শব্দ সৃষ্টি করি না।" (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |