|
শাংহাই বিশ্বমেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রদর্শনী ভবন অন্যান্য বিশ্বমেলায় তার প্রদর্শনী ভবনগুলোর চেয়ে বড়। এতে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় ভবন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভবন ও সিউল ভবনসহ তিনটি প্রদর্শনী ভবন রয়েছে। রাষ্ট্রদূত ইয়ু উও ইক বলেন, আমি শাংহাই বিশ্বমেলার সাফল্য কামনা করি। এটা হল পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পর চীনে অনুষ্ঠিত আরেকটি মহাসম্মীলন। আমি আশা করি , শাংহাই বিশ্বমেলা আয়োজনের মাধ্যমে চীনের আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরো বাড়বে। দু বছর পর দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েওসু শহরে সমুদ্র সম্পর্কিত বিশ্বমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, শাংহাই বিশ্বমেলার অভিজ্ঞতা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য শিক্ষনীয় হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রদর্শনী ভবনের স্থাপত্য রীতি ও রঙ অনেক দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভবনের বাইরের দেয়ালে ৩৮ হাজার কোরীয় বর্ণ দিয়ে ১১০টি ছোট ছোট বাক্য লেখা রয়েছে। শাংহাই বিশ্বমেলা পরিদর্শন সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ইয়ু উও ইক বলেন, নিজের প্রিয় দেশের প্রদর্শনী ভবন পরিদর্শন ছাড়া সম্ভব হলে সব দেশের প্রদর্শনী পরিদর্শন করা উচিত। কারণ প্রত্যেক দেশের প্রদর্শনী ভবনেরই রয়েছে তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য , দর্শকরা সেখানে নিজেদের অজানা অনেক কিছু দেখতে ও জানতে পারবেন। এটাই বিশ্বমেলার বৈশিষ্ট্য ।
১৯৯২ সালের ২৪ আগষ্ট চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ১৮ বছর পার হয়ে গেছে। অর্থনীতি ও বাণিজ্য , সংস্কৃতি , শিক্ষা ও পর্যটন ক্ষেত্রে দুদেশের বিনিময় ও সহযোগিতার অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে দুদেশের মধ্যে একুশ শতাব্দীমূখী সহযোগিতামূলক অংশদারিত্বের সম্পর্ক , ২০০৩ সালে সার্বিক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আর ২০০৮ সালে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , দু দেশের সম্পর্ক তিনবার নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আজ চীন দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও রপ্তানী বাজার, দক্ষিণ কোরিয়া চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ইয়ু উও ইক বলেন, যদিও দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে ১৮ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , তবে ইতিহাসে দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ বেশি। বর্তমানে দু'দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনে ১৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে এবং ২০১২ সালে ২ শ' বিলিয়ন আর ২০১৫ সালে তা তিন শ' বিলিয়ন ডলারে পৌছবে।
অর্থনীতি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রের সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুদেশের মধ্যে বেসরকারী বিনিময়ও দ্রুত বাড়ছে। ২০০৮ সালে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা ২০১০ ও ২০১২ সালকে 'চীন সফর বর্ষ' ও 'দক্ষিণ কোরিয়া সফর বর্ষ' হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে প্রতি বছর কর্মী বিনিময় সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে, এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ৪০ লাখ মানুষ চীনে আসে আর চীনের ১০ লাখ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়ায় যায়। দক্ষিণ কোরিয়া আশা করে , দু বছর পর চীনা পর্যটকরা ইয়েগসু বিশ্বমেলা পরিদর্শনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যাবে । শাংহাই বিশ্বমেলা পরিদর্শনের সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিন বাক চীনের নেতৃবৃন্দের প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েওসু বিশ্বমেলা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি আশা করি, বিশ্বমেলা আয়োজনের মাধ্যমে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বিনিময় , সমঝোতা ও মতানৈক্য বাড়বে ।
দু বছর পর দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় ইয়েওসু বিশ্বমেলা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ইয়ু উও ইক বলেন, ইয়েওসু বিশ্বমেলা হবে এক সমুদ্র সম্পর্কিত বিশ্বমেলা। এটা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কিত একটি বিশ্বমেলা। ইয়েওসু শহরের নিকটবর্তী জলসীমায় কয়েক হাজার দ্বীপ রয়েছে, সমুদ্র তীরে অনুষ্ঠেয় এ বিশ্বমেলার আকার ছোট হলেও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইয়ু উও ইক গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনে আসেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবনের প্রধান সচিব ছিলেন। সাক্ষাত্কারে সি আর আই সাংবাদিক রাষ্ট্রদূতকে উপমা দিয়ে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক বর্ণনার অনুরোধ জানালে রাষ্ট্রদূত ইয়ু উও ইক বলেন, চীনে আসার সময় আমি বলেছি , চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া সুখদুঃখের সমভাগী সুপ্রতিবেশী দেশ। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া উপকৃত হয়েছে। আমি রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুদেশের সম্পর্ক আরো উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাবো। আমার ধারণা দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও মানসিক ক্ষেত্রের বিনিময় বৃদ্ধি করা উচিত । এতে দুদেশের সম্পর্কের লক্ষনীয় উন্নতি হবে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |