|
পি শু মিন-এর সাহিত্যকর্ম সূক্ষ্ম ও শান্ত। সামাজিক ঘটনা সম্পর্কিত তাঁর পর্যালোচনা যতার্থ। সাহিত্যকর্মের এমন ধরণ ২২ বছর ধরে ডাক্তার হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। পি শু মিন বলেন,
মাঝে মাঝে আমি মনে করি, আমি সারা জীবন ডাক্তার, মনোবিজ্ঞানী বা লেখক হিসেবে যে কাজ করছি, আমার জন্য তা হলো একই কাজ। আমি মনে করি, মানুষের জীবন খুবই ক্ষনস্থায়ী, দুর্বল ও মূল্যহীন। আমি আশা করি, প্রতিটি মানুষ সারা জীবন আরো আনন্দের সঙ্গে জীবন কাটান। আমাদের দুর্ভোগ অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আরো বেশি সমর্থন পেতে পারি।
জীবনের জন্ম, বেড়ে ওঠা, রোগ ও মৃত্যুর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পি শু মিনের সাহিত্যকর্মের বৃহত্তম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তাঁর সাহিত্যকর্মে মৃত্যু ভয়াবহ নয়, বরং মানুষ এতে দয়ালু ও উষ্ণ ভাবানুভূতি অনুভব করতে পারেন।
দয়ালু, আশাবাদ ও শান্ত এ ধরণের চরিত্র পি শু মিনের ১৭ বছর বয়সেই গড়ে উঠেছে। ১৭ বছর বয়সে তিনি পেইচিং ত্যাগ করে তিব্বতের আলি অঞ্চলের নারী সৈন্যের প্রথম দল হিসেবে তিনি পৃথিবীর ছাদের সবচেয়ে উচ্চ ভূমিতে সীমান্ত প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। সে জায়গাটি হচ্ছে হিমালয় পর্বত, গ্যাংদিস ও কারাকোরাম পাহাড় সংলগ্ন জায়গা। সেখানে গড়পড়তা উচ্চতা সমুদ্রসমতল ভূমি থেকে পাঁচ হাজার মিটারেরও বেশি। পার্বত্য এলাকার পাহাড়গুলোর মহানুভবতা, জটিল পরিবেশ এবং সহযোদ্ধার প্রাণ হারানো পি শু মিনের মনে বেশ আঘাত দিয়েছে। তিনি অনেক আগেই মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পন করেছেন এবং জীবনের তাত্পর্যও অনুধাবন করেছেন। তিনি বলেন,
তিব্বতে আমি দেখেছি, এসব পাহাড় ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মানবজাতি মাত্র একশ' বছরের বেশি বাঁচবো না। এসব পাহাড়ের চেয়ে আমাদের জীবন ক্ষনস্থায়ী। আমি অব্যাহতভাবে আমার তরুণ সহযোদ্ধার মৃত্যুদেহ কবর দিয়েছি। আমি মনে করেছিলাম যে, মৃত্যুর ভাগ্য সম্ভবতঃ আমার ওপরও নেমে আসবে। তখন থেকেই আমি নিজের ইচ্ছা মত জীবনকে উপভোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখন থেকে নিজের জীবনকে আনন্দময় করে তোলা এবং অন্যকে আমার সাহায্য করার ইচ্ছার এখন পর্যন্ত কোন পরিবর্তন হয়নি।
লেখক এই পেশা প্রসঙ্গে পি শু মিন এ তিনটি শব্দে নিজকে মূল্যায়ন করেছেন। তা হলো সদাসত্য কথা বলা, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি ও জীবনের পূর্ণাঙ্গতার অনুসন্ধান করা। তিনি বলেন,
জীবনের কোন পূর্ণাঙ্গতা নেই। কিন্তু আমি পূর্ণাঙ্গতা অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা চালাতে চাই।
তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর পি শু মিন ২২ বছর ধরে ডাক্তার হিসেবে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। একজন ডাক্তার হিসেবে রোগ ও মৃত্যু আলিঙ্গন এড়ানো অসম্ভব। সেই সময় তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রধানত রোগকে পরাজিত করার সাহস প্রদর্শিত হয়।
মৃত্যু প্রসঙ্গে পি শু মিনের নিজস্ব ধারণা রয়েছে। তিনি মনে করেন, মৃত্যু হচ্ছে একটি দুর্নিবার সমস্যা। মানুষকে আরো করে এর গুরুত্ব অনুভব করা উচিত্। তিনি বলেন,
মৃত্যু প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের ভয় হয়। আসলে মৃত্যু হচ্ছে আমাদের জীবনের মুখোমুখি একটি বাস্তব ব্যাপার। আমরা কিভাবে তাকে এড়াতে পারবো? মৃত্যু হচ্ছে আমাদের জীবনের গন্তব্যস্থান। তাই গন্তব্যস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমরা কীভাবে নিজেদের জীবন যাপন করবো এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
মৃত্যু ছাড়া পি শু মিনের সাহিত্যকর্মে তাঁর সবচেয়ে বেশি লেখার বিষয় হলো সুখ ও ভালোবাসা। আসলে মানুষের জীবনের গন্তব্যস্থান, অর্থাত্ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মানুষ মৃত্যু প্রসঙ্গে ভয় ত্যাগ করে আরো ভালোভাবে জীবন উপভোগ করতে পারেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পি শু মিন মনোবিজ্ঞানের বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং একজন মনস্তত্ত্ব-সম্বন্ধীয় পরামর্শকারীতে পরিণত হয়েছেন। মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত তাঁর ধারাবাহিক সাহিত্যকর্মে তিনি দুঃশ্চিন্তা ভুলে যাওয়া ও সুখ আবিস্কারের ক্ষেত্রে মানুষকে জ্ঞান দেয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। আসলে সুখ কী এ প্রশ্নের জবাবে পি শু মিন বলেন,
সুখ মানে, আমি মনে করি, সুখ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ও তাত্পর্যসম্পন্ন আনন্দ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |